জাতীয়

বঙ্গবাজারে পণ্যের মজুদ নেই; নেই কোনো পাইকারও

  প্রতিনিধি ১৪ এপ্রিল ২০২৩ , ১০:০৩:৫৩

শেয়ার করুন

তিন দিন হয় চৌকি পেতে ব্যবসায় ফেরার চেষ্টা করছেন বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা; বৈশাখের তপ্ত রোদ থেকে নিজেদের বাঁচাতে মাথার ওপর যে ছাতা তারা টাঙিয়েছেন, দুর্ভাগ্যের কবলে পড়া এই মানুষগুলোকে তা সুরক্ষা দিতে পারছে সামান্যই।

শুক্রবার দুপুরে বঙ্গবাজার গিয়ে দেখা গেল, আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত দেশের বৃহৎ এই পাইকারি বাজারে পাইকারদের চাহিদা পূরণের জন্য পণ্যের মজুদ নেই; নেই কোনো পাইকারও।

খুচরা ক্রেতাও নেই; তবুও ছোট ছোট চৌকি খাটিয়ে দিনভর বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। মাঝে মধ্যে কয়েকজন খুচরা ক্রেতাকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেলেও কাউকে কেনাকাটা করতে দেখা গেল না।

এ পরিস্থিতিতে কিসের আশায় বসে আছেন বিক্রেতারা? আবুল কাশেম নামের এক ব্যাবসায়ী বললেন, “কাস্টমার নাই। কিন্তু রোদের মধ্যে বইয়া থাকা লাগে। এখন কী করুম?

“আমরা আগে সব সময় পাইকারি বেচতাম। এখন এক রকম বলতে গেলে দখল করে বসে আছি। এখানে যদি পাকা মার্কেট নির্মাণ করে; তাহলে হয়তো একটা স্থায়ী জায়গা পাব।”

বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে মেয়েদের পোশাক বিক্রেতা এই ব্যবসায়ী বলেন, “এমনিতেই প্রতিবছর ২০ রোজার পর এখানে বেচাবিক্রি কমে যায়। কাস্টমার সব যায় খুচরা দোকানে। তখনও এই সময়ে বিক্রি কম হত। এখন তো পাইকারও নাই, মালও নাই। তবু বসে আছি।”

গত ৪ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকান পুড়ে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তদন্ত কমিটি হিসাব দেখিয়েছে।

ঈদের আগে বিপুল পরিমাণ নতুন কাপড় তুলেছিলেন দোকানিরা; সেগুলো পুড়ে যাওয়ায় তাদের আর্তনাদ দেখে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন তাদের সহায়তায়।

অর্থ সহায়তা আসার পাশাপাশি ধ্বংসস্তূপ দ্রুত পরিষ্কার করে একটি অংশে বুধবার থেকে দোকানিদের চৌকি পেতে বসার সুযোগ করে দিয়েছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সেদিন এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

বঙ্গবাজারের পাশের সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের সামনে থেকে সোজা দক্ষিণে ফায়ার সার্ভিস হেড কোয়ার্টারের দিকে একটি রাস্তা চলে গেছে। ওই রাস্তার পূর্বপাশে চারটি টিনশেড মার্কেট মিলিয়ে বঙ্গ কমপ্লেক্স। বঙ্গবাজারের পরেই রয়েছে গুলিস্তান মার্কেট, এরপর মহানগরী কমপ্লেক্স ও সবার পূর্বপাশে বঙ্গবাজার আদর্শ মার্কেট।

এর মধ্যে রাস্তার পাশ ঘেঁষা বঙ্গবাজার অংশের ভস্মীভূত অংশের ওপরই শুধু ইট-বালি ফেলা হয়েছে। বাকি অংশে এখনও ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে।

ঢাকার তাপমাত্রা শুক্রবার এমনিতেই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। বঙ্গবাজার এলাকায় গরম যেন আরেকটু বেশিই অনুভূত হল। এর সঙ্গে রয়েছে ঝাঁঝালো পোড়া গন্ধ।

মার্কেট কমিটি কিছু ব্যবসায়ীকে তালিকা করে চৌকি বসানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বুধবার প্রায় সাতশজনকে দোকান বুঝিয়ে দেওয়া হলে চৈত্রের খরতাপের মধ্যেই ছাতা মাথায় দোকান শুরু করেন তারা।
চৌকিতে যেমন মালামাল কম তেমনি মার্কেটেও ক্রেতার সংখ্যা কম।
গত বছর এই সময় আরও ভালো বিক্রি হত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিনে কম পক্ষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার বেচাবিক্রি হতো।

পরিচিতি পাইকারি ক্রেতারা যোগাযোগ করে কিনা জানতে চাইলে তানজির বলেন, কিছু কিছু কাস্টমার যোগাযোগ করছে। কিন্তু মার্কেটের এই পরিস্থিতির কারণে তারা আসে না। অন্যান্য জায়গা থেকে মাল কিনে নিয়ে যায়।


শেয়ার করুন