প্রতিনিধি ২৫ এপ্রিল ২০২৩ , ৪:০০:৪৪
গাজীপুর মহানগর নির্বাচনে নৌকার মাঝি হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী কার্যকরি কমিটির সদস্য ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লা খান ।
কে এই এড.আজমত উল্লাহ খান- তিনি ১৯৫৫ সালের ১জানুয়ারি গাজীপুর জেলা সদরের টঙ্গী ভরানে একটি সম্ভ্রান্ত খান পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত ইউসুফ খান ও মাতা ফাতেমা খানম। ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান হয়েও নিজের প্রজ্ঞা, মেধা-মনন ও যোগ্যতা দিয়ে শিক্ষা এবং রাজনৈতিক পরিমন্ডলে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আসীন হয়েছেন।
আইন পেশায় নিয়োজিত এডভোকেট আজমত উল্লা খান সমাজের গরীব-দু:খী ও তার দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিনা পারিশ্রমিকে আইনী সহায়তা দিয়ে আসছেন।
১৯৬৯ সালে টঙ্গী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে তার রাজনৈতিক হাতেখড়ি। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর এর বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়রের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে স্থানীয় সরকারে বিশেষ অবদান রাখায় তিনি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে একাধিক বিশেষ পুরষ্কারে ভূষিত হন।
এছাড়াও দেশ মাতৃকার সংকটময় কালে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিশেষ অবদান রাখেন।
শিক্ষাজীবন
আজিমপুর সরকারি প্রাইমারী স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে। পরে সেখান থেকেই কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। কলেজ জীবনের এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি মহাবিদ্যালয় থেকে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার বাবা ইউসুফ খান পরলোক গমণ করেন। পরে তার পিতার অবর্তমানে বড় ভাই আব্দুর রহমান সযত্মে আগলে রেখে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ এলএলএম ডিগ্রী অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শেষ করান। লেখাপড়া শেষ করে আইনজীবি হিসেবে কর্মজীবনে পা রাখেন। তখন থেকেই পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাজনীতি ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন।
রাজনৈতিক জীবন
রাজনীতিতে আসার পর বিভিন্ন প্রতিকুলতার মধ্যদিয়ে রাজনীতি করতে হয়েছে তাকে। রাজনীতিতে তার দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল অনেক শক্ত। অন্য দলের প্রতিপক্ষ তো আছেই। আজমত উল্লা খান ১৯৬৯ সালে তৎকালিন টঙ্গী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন থেকে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু। ’৭২ সালে ভাওয়াল গড় জেলা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। ’৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক, ’৭৮ সালে শ্রমিকলীগ টঙ্গী আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক ও সাধারন সম্পাদক ভাওয়াল গড় ছাত্রলীগ। ’৭৯ সাল থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত এক টানা টঙ্গী থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ’৯১ সালে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক, ’৯৬ ও ২০০৩ সালে পর পর দুইবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবি পরিষদ কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ন সাধারন সম্পাদক, ’১৫ সালে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ’১৮ সালে কেন্দ্রিয় নির্বাহী সদস্য পদ লাভ করেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন এড. আজমত উল্লা খান।
তার রাজনৈতিক উত্থান শুরু ১৯৯৫ সালে টঙ্গী পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর । তিন মেয়াদে তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর দক্ষতা ও সফলতার সাথে টঙ্গী পৌর সভার চেয়ারম্যান ও মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর টঙ্গীতে আওয়ামী লীগের কান্ডারি হিসেবে তিনি গুরু দায়িত্ব পালন করেন। যে কারনে তিনি বার বার বিভিন্ন মামলা-হামলাসহ অসংখ্যবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তৎকালীন সময়ে টঙ্গীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি হলে তিনি মাত্র ২৩ বৎসর বয়সে টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে দলকে সুসংগঠিত করেন। টঙ্গী আওয়ামী লীগের দুর্দিনে দলকে ভাঙ্গনের চেষ্টা করে। এমনকি অনেকেই তখন আওয়ামী লীগ ছেড়ে অন্য দলে চলে যায়। আজমত উল্লা খান সেসময় শক্তভাবে হাল ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম চালাতে থাকেন। আজমত উল্লা খানের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
কর্মময় জীবন:
বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পৌর চেয়ারম্যান ও সাবেক টঙ্গী পৌরসভার মেয়র ১৯৮০ সালে আইন পেশা দিয়ে তিনি কর্মময় জীবন শুরু করেন। আইন পেশায় থাকাকালীন সময়ে ’৮৪ সালেই ঢাকা আইনজীবি সমিতির কার্যকরি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এর ’৮৬ সালে গাজীপুর জেলা আইনজীবি সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ’৮৮ ও ’৮৯ সালে পরপর দুইবার গাজীপুর জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে বাংলাদেশ আইন সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
উন্নয়নকাজ :
টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়রের দায়িত্বে থাকাকালে তিনি টঙ্গী পৌর এলাকায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা; মন্দিরসহ শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ ও উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। ১৯৯৫ সালে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম বছর নগরের উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তার কর্মযজ্ঞে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল কিছুদিন পরই ব্যাপক ষড়যন্ত্র শুরু করে। এতে তার উন্নয়ন থেমে থাকেনি। একপর্যায়ে ষড়যন্ত্র করে তার বিরুদ্ধে ১৪ টি মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করার চেষ্টা করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারপরও তাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। প্রতিপক্ষরা যতই ষড়যন্ত্র করছিল টঙ্গী পৌরসভার জনগনের আস্থা খানের প্রতি ততই বাড়ছিল। এব্যাপারে এড. আজমত উল্লা খান বলেন, পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে দায়িত্ব পালনের সুবাধে শ্রমিক অধ্যুষিত টঙ্গীর আপামর জনসাধারনের মাঝে আমার বিরাট একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আসন্ন গাজীপুর মহানগর নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন এ জন্য আমি ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ কৃতজ্ঞ।
উল্লেখ্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান। ওই সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামেন জাহাঙ্গীর আলম। নানা নাটকীয়তায় ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে আসেন। তাতেও লাভ হয়নি আজমত উল্লা খানের। হেরে যান তিনি। ওই নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপির প্রয়াত নেতা এম এ মান্নান।
তবে এবার কিছুটা ভিন্ন গাজীপুরবাসীর প্রাণের চাওয়া এড.আজমত উল্লাহ খানের মতো অভিজ্ঞ মানুষ গাজীপুর মহানগর এ বড়ই প্রয়োজন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৩ জন। তফসিল অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্ধ ৯ মে, আর ভোটগ্রহণ হবে ২৫ মে।