ইসলাম

শবে কদর শ্রেষ্ঠতম একটি রাত

  প্রতিনিধি ১৭ এপ্রিল ২০২৩ , ২:১৫:০২

শেয়ার করুন

ইসলামের দৃষ্টিতে শবে কদর শ্রেষ্ঠতম একটি রাত। লাইলাতুল কদর বা শবে কদর অর্থ মর্যাদাপূর্ণ রাত। কোনো কোনো আরবি অভিধানে কদর অর্থ ‘ভাগ্য’ ধরে এ রাতকে ভাগ্য নির্ধারণ রাতও বলা হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা এ রাতে সমগ্র কুরআনুল কারিম লাওহে মাহফুজ হতে দুনিয়ার প্রথম আসমানে একসঙ্গে নাজিল করেছেন বিধায় এ রাতের মর্যাদা অন্য যেকোনো হাজার মাসের চেয়েও বেশি দান করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তোমাকে কিসে জানাবে লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হচ্ছে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাঈল (আ.) রবের অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন। এ সম্পর্কে সুরা কদরে বলা হয়েছে শান্তিময় এ রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত। হজরত আয়েশা (রা.) এ রাতে কোন দোয়া পড়বেন-রাসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ এই দোয়া পড়বে।

শবে কদরের ফজিলত

রাসুল (সা.) বলেন, রমজান মাস তোমাদের মাঝে উপস্থিত। এ মাসে এমন এক রাত রয়েছে, যা হাজার মাস হতে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে সবকিছু হতেই বঞ্চিত হলো। শুধু হতভাগারাই এ সম্মানিত রাত হতে বঞ্চিত হয়। এ রাতের ফজিলত বর্ণনায় বুখারি শরিফের এক হাদিসে রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ঈমানের সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে লাইলাতুল কদরের রাতে ইবাদত করবে, আল্লাহ তার জীবনের পেছনের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’

শবে কদরের কারণ

তাফসিরে মাজহারি ও মারেফুল কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, রাসুল (সা.) একদিন সাহাবিদের সামনে বনি ইসরাইলের এক আবেদ ও জাহিদ ব্যক্তির আমল-আখলাকের বর্ণনায় বলছিলেন, ‘ওই ব্যক্তি দীর্ঘ এক হাজার মাস রাতে ইবাদত এবং দিনে সিয়াম পালন ও জিহাদের মাধ্যমে সওয়াব লাভ করতেন। এটা শুনে সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের অল্প আয়ুর কথা স্মরণ করে খুব আফসোস করছিলেন। এ সময় আল্লাহ পাক সুরা কদর নাজিল করে ঘোষণা দিলেন, লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান। তাই শবে কদরের রাতে ইবাদত করলে অন্য সময়ের এক হাজার মাস তথা ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদতে কাটানোর সমান সওয়াব হয়।’

কেন এত মর্যাদাপূর্ণ 

আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য ১০৪টি আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন। এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ হলো কুরআনুল কারিম, যা সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর নাজিল করেছেন। আর এ মহাগ্রন্থ লাইলাতুল কদরেই নাজিল করা হয়। তাই কুরআনুল কারিমের সম্মানেই এ রজনির এত বড় মরতবা। কুরআনের বিভিন্ন সুরায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি কুরআনকে মোবারকময় রজনি ও রমজান মাসে অবতীর্ণ করেছি।’

শবে কদর কবে

নির্দিষ্ট করে শবে কদর চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। কারণ রাসুল (সা.) নিজেই বলেছেন, আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে। অতঃপর তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে তা তালাশ করো। মূলত কদরের রাত নির্দিষ্ট থাকলে সবাই এ রাতের অপেক্ষায় থাকত, যা শরিয়তসম্মত নয়। তবে অধিকাংশ মুজতাহিদের মতে ২৬ রমজানের দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ রমজানের রাতই লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর তদানুযায়ী আমরা রাত যাপন করে থাকি।

শবে কদর লাভের উপায়

নিশ্চিতভাবে লাইলাতুল কদরের রাত লাভ করা সৌভাগ্যের বিষয়। কারণ একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন কবে আসবে সেই কাক্সিক্ষত রাত। রাসুল (সা.) রমজানের প্রথম ১০ দিন ও মাঝের ১০ দিন ইতিকাফ করে বললেন, জিবরাঈল (আ.) এসে বলে গেলেন, ‘লাইলাতুল কদর শেষের ১০ দিনে। যে আমার সঙ্গে ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন শেষের ১০ দিনে ইতিকাফ করে। এ হাদিস দ্বারা আমরা নিশ্চিত বুঝতে পারি-লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ ১০ দিনে।’

শবে কদর চেনার আলামত

কদরের রাত চেনার কিছু আলামতের কথা বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে ও শেষের সাত দিনে তালাশ করো। রাসুল (সা.) আমাদের ২৭ রমজান কদরের রাত হিসেবে কিয়ামুল লাইল করতে বলেছেন। সে রাতে মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হবে। গভীর অন্ধকার থাকবে না। সে রাত হবে নাতিশীতোষ্ণ। সে রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মানুষ তৃপ্তি পাবে। এ রাতে কোনো মুখলেস বান্দাকে আল্লাহ পাক রাত সম্পর্কে জানাতে পারেন। এ রাতে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি হতে পারে। এ রাতে হালকা আলোকরশ্মিসহ পূর্ণিমার চাঁদের মতো সূর্যোদয় হবে।’

শবে কদরের আমল 

মহিমান্বিত এ রজনির সব নেয়ামত হাসিলের জন্য প্রথমেই শিরকমুক্ত ঈমান পরিশুদ্ধ নিয়ত ও বেদাতমুক্ত আমলের মাধ্যমে রাত যাপন করতে হবে। কদর লাভের আশায় শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করা। বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। কুরআন তেলাওয়াত করা। দোয়া-দরুদ, দান-সদকা ও তওবা-ইসতেগফার করা।

শবে কদরে বর্জনীয় 

মর্যাদাপূর্ণ এ রাতকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে মনগড়া কিছু আমলের প্রচলন দেখা যায়, যা শরিয়তসম্মত নয়। অবশ্যই তা বর্জন করতে হবে। যেমন-লাইলাতুল কদরের নামে নির্দিষ্ট কোনো নামাজ পড়া, দলবদ্ধভাবে মসজিদে মসজিদে ঘুরে ইবাদত করা, কবর জিয়ারত করা, আতশবাজি করা ইত্যাদি। এ রাত যাপন উপলক্ষে অহেতুক কোনো অনুষ্ঠান বা মসজিদে কোনো ভোজের আয়োজন করা ইসলামসম্মত নয়। বরং বেশি বেশি নফল ইবাদত, কুরআন তেলাওয়াত ও তওবা-ইসতেগফারের মধ্যে রাত কাটানোই শ্রেয়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিন্তু ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটাতে পারল না তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। সুতরাং লাইলাতুল কদর তালাশ করে সঠিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে রাত যাপনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।

আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে শবে কদরের কল্যাণ লাভ করার তাও​ফিক দিন, পবিত্র কোরআন শরিফ পড়ার,পবিত্র কোরআন শরিফ বোঝার, পবিত্র কোরআন মতো জীবন গড়ার তাও​ফিক দান করুন, ও শবে কদরের উছিলায় বিশ্বের মানব জাতিকে সকল সমস্যা থেকে মুক্তি দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।


শেয়ার করুন