মহান মুক্তিযুদ্ধে সোচ্চার সমর্থন জানানোর জন্য জাপানিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নতুন প্রজন্ম আগামী বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যেকার দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং ঈর্ষণীয় অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
টোকিওর আকাসাকা প্যালেস গেস্টহাউসে আজ বৃহস্পতিবার চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে জাপানের জনগণ অতীতের মতোই আমাদের প্রয়োজনে সরকারের পাশাপাশি সব সময় আমাদের পাশে থাকবে। ৫০ বছর ধরে বিদ্যমান আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং ঈর্ষণীয় অংশীদারত্বকে আগামী বছরগুলোতে আমাদের নতুন প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুব স্বস্তি বোধ করছি। কারণ আমি এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জাপানি বন্ধুদের সম্মান জানাতে পেরেছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা বাংলাদেশের প্রয়োজনে সাহায্য করেছিল। এটি একটা বড় ব্যাপার যে আমরা আমাদের দুঃসময়ের বন্ধুদে যাই না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি এই মহৎ অনুষ্ঠানে আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। যেখানে আমরা শুধু আমাদের বন্ধুদের সম্মান করছি না বরং জাপানের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনও উদযাপন করছি।’
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতার স্বার্থে সোচ্চার হয়েছিলেন এবং প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন সেই সব মহান ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আয়োজিত মহৎ অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে যেসব জাপানি নাগরিক ছিলেন তারাও আজ আমাদের সাথে আছেন। এটি বাংলাদেশ এবং এর জনগণের জন্য একটি শুভ উপলক্ষ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানের জনগণ তখন বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের তালিকায় আটজন সম্মানিত ব্যক্তির রয়েছেন, যাদের ২০১২ সালের ২৭ মার্চ এবং ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ‘ফ্রেন্ড অফ লিবারেশন ওয়ার অনার’ দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আজ সন্ধ্যায় আমরা টোকিওতে বাংলাদেশের আরো চারজন মহান বন্ধুকে সম্মান জানাতে এসেছি, যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, নৈতিক ও বস্তুগত সহায়তার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং সহায়তা নিশ্চিত করেছিলেন। তারা নৃশংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এবং আমাদের অসহায় মানুষদের জন্য মানবিক ত্রাণ, চিকিৎসা সুবিধা পাঠিয়েছিলেন। এটি ছিল একটি কষ্টের সময়, যা কথায় প্রকাশ করা যায় না। তখন বাংলাদেশ দখলদার বাহিনীর হাতে ছারখার হয়েছিল। সেই সংকটময় মুহূর্তে, আমাদের জাপানি বন্ধুরা আমাদের দুর্দশা বুঝতে পেরেছিল এবং মানবতার জন্য এগিয়ে এসেছিল।’
তিনি স্মরণ করেন, ‘তারা (জাপানিরা) দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল; কিন্তু পিছিয়ে পড়েনি। হুমকির মুখে তাদের নিঃস্বার্থ আচরণ আমাদের চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ছিল জাপানি স্কুলের শিশুদের দান, যারা আমাদের লোকেদের সাহায্য করার জন্য তাদের টিফিনের অর্থ সঞ্চয় করে দান করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে জাপানের জনগণের সমর্থনকে স্মরণ করে, যা পুনর্নিশ্চিত করেছে যে আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সঠিক ছিল, যা পদদলিত করা যায় না। আপনারা ন্যায়বিচার, সম্মান, মর্যাদা এবং মানবাধিকারের জন্য আমাদের দাবির বিষয়ে সাড়া দিয়েছিলেন।’
তিনি আরো বলেন, “আমরা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছি, যিনি আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলকথা ঘোষণা করেছিলেন, ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’, যা জাপানেও চর্চা করা হয়। আমরা আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রয়াসে জাপানের টেকসই অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং সমর্থনকে স্বীকৃতি দিই। আমরা এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার মর্যাদা অর্জন করেছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক জাপান সফর একটি সুদৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন চার জাপানির সম্মানে প্রশংসাপত্র পাঠ করেন। তারা হলেন জাপান রেড ক্রস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস তাদাতেরু কোনো, অধ্যাপক গ্যালপ পেমা, রাজনৈতিক নেতা হিদেও তাকানো (মরণোত্তর) এবং ফটো সাংবাদিক তাইজো ইচিনোসে (মরণোত্তর)। অনুষ্ঠানে সম্মাননা গ্রহীতাদের পক্ষে অধ্যাপক গ্যালপ তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। সূত্র : বাসস