প্রতিনিধি ১৮ এপ্রিল ২০২৩ , ২:০৮:৪৯
এম.এ.মান্নান ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ।তিনি আলহাজ্ব অধ্যাপক এম.এ. মান্নান নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি এছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ছিলেন।
এম.এ.মান্নান গাজীপুরের সালনা গ্রামে ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সালনা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি, জয়দেবপুর রাণী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি এবং ময়মনসিংহ মুসলিম হাই স্কুল থেকে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি পাস করেন। পরে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তি হন ও সেখান থেকে এসএসসি পাস করেন। তিনি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত রসায়নে এম, এস, সি ডিগ্রি অর্জন করেন।
এম.এ.মান্নান টঙ্গী কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।
এম. এ. মান্নান ১৯৭৮ সালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলে (জাগদল) যোগদান করেন, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এম.এ.মান্নান বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপরসনের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এম. এ. মান্নান ১৯৮৪ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ও কাউলতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে তিনি আরও দুইবার ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনিত প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তাকে তৎকালীন মন্ত্রীসভায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি নবগঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
গাজীপুর বিম বাজার এক ব্যবসায়ি বলেন মান্নাম স্যার এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।তার কথা অত্র এলাকার মানুষ সারাজীবন মনে রাখবে।আমরা একজন যোগ্য সমাজ সেবক কে হারিয়েছি।
প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে তিনি গাজীপুর মহিলা কলেজ, কোনাবাড়ি কলেজ, পুবাইল আদর্শ কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ জেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দিরসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ ও উন্নয়নে অবদান রেখেছেন।
২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হলে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি মেয়র পদ প্রার্থী হিসেবে টেলিভিশন প্রতীকে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।
প্রথম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম বছর নগরের উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মহাপরিকল্পনায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল কিছুদিন পরই ব্যাপক ষড়যন্ত্র শুরু করে। এতে তার উন্নয়ন পরিকল্পনায় চরমভাবে বিঘ্ন ঘটে। একপর্যায়ে ষড়যন্ত্র করে ৩০টি মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে তাকে প্রায় তিন বছর কারাবাস ও জনবিচ্ছিন্ন করে রাখে। তার বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা করা হলেও সব মামলায় তিনি জামিন লাভ করেন।
গত মেয়র নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে অধ্যাপক এম এ মান্নানের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে দেখে তার প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে ‘এনবিআর-এ করখেলাপের অভিযোগ আনে। একপর্যায়ে তার অ্যাকাউন্ট জব্দ করে। সেটি পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারপরও তাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। প্রতিপক্ষ যতই ষড়যন্ত্র করছিল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জনগণের আস্থা মান্নানের প্রতি ততই বাড়ছিল।
একাধিকবার বরখাস্ত:
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে তিন বার বরখাস্ত করা হয়। ২০১৫ সালের ১৯শে আগস্ট প্রথম দফায় বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে ১৮ই এপ্রিল তাকে দ্বিতীয় দফায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে ২৮ মাস পর মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১১ কার্য দিবসের মাথায় তৃতীয় দফায় আবারো বরখাস্ত হন।
উল্লেখ্য: ২০১৩ সালের ৬ই জুলাই নবগঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন এম এ মান্নান। সেই নির্বাচনে বেশির ভাগ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। নবগঠিত এই প্রথম পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর। এই পরিষদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৫ই সেপ্টম্বর। সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ১৮০ দিন বা ৬ মাসের মধ্যে পরবর্তী সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এই হিসেবে আগামী মার্চ বা এপ্রিল মাসে তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। একের পর এক মামলা, জেল ও দফায় দফায় বরখাস্তের কারণে পূর্ণ মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম. এ মান্নান বলেন, নবগঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে এলাকার জনগণ আমাকে অনেক আশা করে মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন। নানামুখী ষড়যন্ত্র করে আমাকে সিটিবাসীর সেবা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে।
দীর্ঘ জেল জুলুমের কারনে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল এম. এ. মান্নান।তিনি কিডনি জটিলতাসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে গাজীপুরের এই কৃতি সন্তান ইন্তেকাল করেন।