সারাদেশ

চট্টগ্রামে ওয়াসার পানি লবণাক্ত, গ্রাহকদের ক্ষোভ

  প্রতিনিধি ৭ মে ২০২৩ , ১:৩১:০৩

শেয়ার করুন

ওয়াসার পানি মুখেও নেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি ওয়াসার কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। কোনও সুরাহা হচ্ছে না। কতদিন পানি কিনে পান করতে হবে তাও বলা যাচ্ছে না।’

প্রচন্ড তাপদাহে যখন দেশ পুড়ে যাচ্ছে, পানির চাহিদা যখন বেড়ে গেল তখন চট্টগ্রাম ওয়াসায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নগরের প্রায় অর্ধেক এলাকায় চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। ওয়াসার দাবি, কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর অনেক নেমে গেছে। এ কারণে হ্রদের পানি ছাড়া হচ্ছে না। এর প্রভাবে হালদার পানিতে লবণাক্তা বেড়েছে। কর্ণফুলী নদীতে শেওলা জমা, কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়া, কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে সমুদ্রের পানি প্রবেশের কারণে এতে ওয়াসার পানির উৎপাদন কমে গেছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ সংকটের সমাধান হবে না। এ ছাড়া হালদার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় শেখ রাসেল ও মোহরা পানি শোধনাগার থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসার উৎপাদন অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এমতাব্স্থায় একদিকে পানির জন্য হাহাকার, অন্যদিকে মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে না। সুপেয় পানির জন্য মানুষকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বেসরকারী পানি উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। গৃহস্থলির কাজসহ দৈনন্দিন কাজে পানি প্রাপ্যতা না থাকায় মানুষের ভোগান্তির মাত্রা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। তাই জরুরিভাবে চট্টগ্রাম নগরীতে সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি। চট্টগ্রামে সুেপয় পানির ভয়াবহ সংকটে অতিষ্ঠ জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যহত হবার কারনে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত দাবি জানান।

এদিকে, নগরীর মুরাদপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, কতদিন পর পর ওয়াসার পানিতে হয় লবণাক্ততা না হয় দুর্গন্ধ দেখা দেয়। আবার কখনও ময়লা পানিও আসে। দফায় দফায় পানির বিল বাড়ানো হলেও পানির মান বৃদ্ধি করছে না ওয়াসা।

নগরের বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা মোরশেদ তালুকদার বলেন, ‘ওয়াসার পানি সব সময় ফুটিয়ে পান করতে হয়। সরাসরি পান করা যায় না। নানা ধরনের ময়লা-জীবাণু থাকে এ পানিতে। এ কারণে ফুটিয়ে পান করতে হয়।’

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালে মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প চালু হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো পানিতে লবণাক্ততার সমস্যা দেখা দেয়। এরপর ২০০৭, ২০০৯ ও ২০২২ সালেও হালদা নদীর পানিতে লবণাক্ততা দেখা দেয়। বিষয়টি সুরাহার জন্য ২০০৯ সালে গঠিত হয় কারিগরি কমিটি। এ কমিটি পরে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে। সেখানে শুষ্ক মৌসুমে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় নদীর পানির লবণাক্ততা রোধে কাপ্তাই হ্রদ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ কারণে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বর্ষা মৌসুম থেকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে পিডিবিকে কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

এ প্রসঙ্গে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ম্যানেজার এ টি এম আবু জাহের বলেন, ‘কাপ্তাই লেকে পানি কমে গেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে ৪৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি মাত্র ইউনিট চালু আছে। এটিতে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। পানি কমে যাওয়ায় সবকটি ইউনিট চালু করা যাচ্ছে না। বর্তমানে যা পানি আছে তা দিয়ে এভাবে চলে তাহলে এক মাসের মতো একটি ইউনিট চালু রাখা যাবে। এরপর বৃষ্টি না হলে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দিতে হবে। অতিরিক্ত পানি ছাড়ার সুযোগ নেই।’


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content