নির্বাচন

জমে উঠছে গাজীপুর মহানগর নির্বাচন,প্রচারে ব্যস্ত মেয়র কাউন্সিলরগন

  প্রতিনিধি ১০ মে ২০২৩ , ১১:০৬:০৭

শেয়ার করুন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, গাজীপুরের নির্বাচনটা আমাদের কাছে অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এর আগে এত বড় পরিসরের একটা নির্বাচন জাতীয়ভাবে অনেক গুরুত্ব বহন করবে বলে আমরা মনে করি। এজন্যই গাজীপুর নির্বাচনটা একটা মডেল হোক। এই নির্বাচনটা নিয়ে যেন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি। আমরা যেন একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। আমরা তাদের মুখ চেপে ধরতে পারছি না। আমাদের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ইউনাইটেড নেশনসহ বিভিন্ন দেশ কথা বলছে। গতকাল দুপুরে গাজীপুরের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

গাজীপুর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সাদিরুল ইসলাম, মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম।

নির্বাচনের অংশ নেয়া মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, মাঠে যখন খেলা হবে দুই পক্ষকেই খেলতে হবে। আমি যদি কালো টাকা বিতরণ করে থাকি আরেক জনকে এই কালো টাকা বিতরণ প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার এসে, পুলিশ এসে রাতারাতি সেটা করতে পারবে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হবে না। তবে কালো সংস্কৃতি থেকে আমাদের ধীরে ধীরে উঠে আসতে হবে। আমাদের নির্বাচনের ব্যবস্থা এখনো অনেক অপসংস্কৃতি ও কালো সংস্কৃতি রয়ে গেছে। আপনাদের চেষ্টায় হয়তো একটা সময় আসবে সবাই সুশৃঙ্খলভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, কালো টাকা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবেন না। কালো টাকা যতই বিতরণ করা হোক। যদি মনে করেন কন্ট্রোল করতে পারছেন না। তাহলে কালো টাকা গ্রহণকারীদের বলে দেবেন, কালো টাকা নিলেও নিয়েন ভোটটা কিন্তু স্বাধীনভাবে দিয়েন। আপনি যাকে বিশ্বাস করেন, যাকে ভালো মনে করেন ভোটটা তাকেই দিয়েন। কারণ ভোট প্রদানের সময় তো আর প্রার্থী থাকবে না। সভার শুরুতেই নির্বাচনের আচরণবিধির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন জেলা নির্বাচন অফিসার কামরুল হাসান।

সভায় প্রার্থীরা তাদের নানা ধরনের অভিযোগ ও দাবি তুলে ধরেন। নির্বাচন কর্মকর্তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দেন সবাইকে। মেয়র প্রার্থী এবং সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। সভায় ৮ জন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও ৫৭টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত ১৯টি সংরক্ষিত নির্বাচনের নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা অংশ নেয়। প্রার্থীরা এই মতবিনিময় সভায় নানা ধরনের বক্তব্য তুলে ধরেন। তারা সবাই কালো টাকা ও অবৈধ প্রভাব মুক্ত এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান।

প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, অনেক প্রার্থী ভোটারদের এনআইডি কার্ড নিয়ে নিচ্ছে। প্রার্থীরা ভোটের আগে টাকা দিয়ে ভোট ক্রয় করে। এসব বিষয় দেখার অনুরোধ ও প্রতিকার চাই। এ ছাড়াও ভয়ভীতি মুক্ত ভোটকেন্দ্র, ১টির অধিক ভোটকেন্দ্র করার দাবি করেন। বৃষ্টির কারণে পোস্টার ছিঁড়ে যায়, এজন্য তারা পোস্টারগুলো লেমেনেটিং করে প্রচার করার সুযোগ চান। পরে জায়েদা বেগমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছেলে জাহাঙ্গীর আলম সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে, নির্বাচনের দিনে প্রত্যেকটি কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরাগুলো ইন্টারনেটের আওতায় রাখার দাবি জানান। এ ছাড়াও বুথের ভেতর যেন ভোটারদের সঙ্গে প্রভাব বিস্তারকারী কেউ না থাকে সেটাও নিশ্চিত করার দাবি জানান।

এদিকে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা তোড়জোড়ে নির্বাচনে প্রচারণা শুরু করেছেন। নির্বাচনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লা খান সকালে মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয় এলাকায় গণসংযোগ করেন। নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। এ সময় তিনি আগামী দিনে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত গাজীপুর সিটি গড়ে তোলার আশ্বাস দেন। অন্যদিকে, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা বেগম নগরের ছয়দানা এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি তার প্রতীক দেয়াল ঘড়ি মার্কায় বিজয়ী করার আহ্বান জানান ভোটারদের প্রতি। বিকালে তিনি ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে নগরের কোনাবাড়ি, কাশিমপুর শিল্প এলাকায় গণসংযোগ করেন। তাদের মতো অন্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গণসংযোগ ও নির্বাচনে প্রচারে।

প্রচার ব্যস্ত ছিলেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি। রনি তার নির্বাচনী মার্কা (হাতি) মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহবান করেন সাধারণ মানুষদের।রনি সরকার বলেন ভোট শুধু আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে সীমাবদ্ধ নয় তৃণমূল সাধারণ জনতাও সম্পৃক্ত আমি তাদের কাছেই যাচ্ছি।

৫৬ নং ওয়ার্ডে দেখা হয়,মহিলা কাউন্সিলর মোসা.রাশিদা বেগম তিনি সংরক্ষিত ১৯নং মহিলা আসনে নির্বাচন করছেন।তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকা ৫৫,৫৬,৫৭ নং ওয়ার্ড তার নির্বাচনী প্রতিক আনারস।
প্রচারনায় ব্যস্ত ৫৬ নং ওয়ার্ড এর সাবেক কাউন্সিলর আবুল হোসেন তার নির্বাচনী প্রতিক ঘুড়ি।

৫৭ নং ওয়ার্ডে দেখা হয় সাবেক কাউন্সিলর আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন সরকারের সাথে।তার নির্বাচনী প্রতিক টিফিন ক্যারিয়ার।

এদিকে ৪৩ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আলহাজ্ব খালেদুর রহমান রাসেল কে ঘুড়ি মার্কায় ভোট চাইতে দেখা গেছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ভোটার সংখ্যা ১৮ জন। এই নির্বাচনের জন্য মোট ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭ টি। এরমধ্যে ৪৯১টি অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content