প্রতিনিধি ৭ মে ২০২৩ , ১:১৪:৪৪
৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকাই সিনেমার জন্য একটি দুঃখের দিন, কষ্টের দিন! অনেক কিছু হারানোর দিন! ১৯৯৬ সালের ৬ ই সেপ্টেম্বরের শুক্রবার দিনে অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ঢাকাই সিনেমার সর্বকালের সেরা চিত্রনায়ক সালমান শাহ। আত্মহত্যা করেছেন সালমান শাহ্। কিন্তু ভক্ত এবং তার পরিবার এখনো মানতে নারাজ সে কথা। তাদের দাবি, সালমান আত্মহত্যা করেনি। খুন করা হয়েছে তাকে। এ নিয়ে চলছে মামলা। ভক্তরা সালমানের মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রী সামিরাকেই দায়ী করেন। যার সুরাহা হয়নি এখনো। খুন কিংবা আত্মহত্যা-যাই হোক না কেন, সালমান শাহ নেই, এটাই ধ্রুব সত্য। তবে এতো বছর পরও সালমান আছেন তার ভক্তদের হৃদয়ে। মৃত্যুর ২৭ বছর চলছে। এখনো সমান জনপ্রিয় এ নায়ক।
সালমান শাহকে দাফন করা হয়েছে সিলেটে শাহজালাল মাজারের কবরস্থানে। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছিল সিলেট শহরের দাড়িয়া পাড়ার নানার বাসায়। তাই মৃত্যুর পরও চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন প্রিয় শহরেই। আর মৃত্যুবার্ষিকী এলেই নানার বাসার সামনেই ভক্তরা তাদের প্রিয় নায়ককে স্মরণ করতে, প্রিয় নায়কের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ছুঁয়ে দেখতে ভিড় জমান। দূর-দূরান্ত থেকে আসেন তারা। প্রিয় নায়কের কবর জিয়ারত করে, তার শৈশব কৈশোরের স্মৃতির সঙ্গে ভক্তরাও যেন মিলেমিলে একাকার হয়ে থাকতে চান। হয়তো কারও চোখে তখন দু’ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়ে।
ঢাকাই সিনেমার ইতিহাস সৃষ্টিকারী নায়ক ছিলেন সালমান শাহ। মৃত্যুর ২৬ বছর পরও তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। এখনো টিভি পর্দায় তার সিনেমা প্রচার হলে দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখেন। এখনো তার অভিনীত সিনেমার গান শ্রোতাদের কানে বাজে, কণ্ঠে ওঠে। এমন জনপ্রিয়তা আর কারও নেই। হয়তো কখনো আর হবেও না। শুধু অভিনয়েই নয়, সালমান ছিলেন ফ্যাশন সচেতন। বর্তমান সময়ের অনেক নায়কও তাকে অনুসরণ করেন। সালমানের মৃত্যুর এত বছর পরেও বাংলা সিনেমাতে অনেক নায়কের আবির্ভাব হলেও অভিনয় আর ফ্যাশন দিয়ে আর কোনো নায়ক আজ পর্যন্ত সালমান শাহর জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি। কোনো নায়কের মৃত্যুর এত বছর পরেও ভক্তদের হৃদয়ে এতটা ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর আর কোনো দেশের কোনো নায়কের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
সালমান শাহর জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায়। তার পিতার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায়। নানার বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউস’। তার নানা পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সিনেমা ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয় করেছিলেন। অভিনয়ে সালমানও তাই সেই নানার কারণেই আসা। স্কুলে পড়ার সময় সালমান শাহ বন্ধুমহলে সংগীতশিল্পী হিসাবে বেশ পরিতি ছিলেন। ছায়ানট থেকে পল্লীগীতিতে দীক্ষা নেন। সিনেমায় আসার আগেই ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী ছিলেন সামিরা হক। সিনেমায় আসার আগে তিনি নাটকে অভিনয় করেন। ধারাবাহিক ‘পাথর সময়’ নাটকে একটি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু। পরে আরও বেশকিছু নাটকে অভিনয় করেও দারুণ প্রশংসিত হয়েছিলেন সালমান। এরপর ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় অভিনয় করেই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পান তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেন।
সালমান শাহ অভিনীত সিনেমাগুলো হলো- ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (বিপরীতে মৌসুমী), তুমি আমার (শাবনূর), অন্তরে অন্তরে (মৌসুমী), কন্যাদান (লিমা), জীবন সংসার (শাবনূর), চাওয়া থেকে পাওয়া (শাবনূর), সুজন সখী (শাবনূর), বুকের ভেতর আগুন (শাবনূর), এই ঘর এই সংসার (বৃষ্টি), স্নেহ (মৌসুমী), বিচার হবে (শাবনূর), প্রেমযুদ্ধ (লিমা), মহা মিলন (শাবনূর), তোমাকে চাই (শাবনূর), বিক্ষোভ (শাবনূর), আশা ভালোবাসা (শাবনাজ), মায়ের অধিকার (শাবনাজ), আঞ্জুমান (শাবনাজ), আনন্দ অশ্রু (শাবনূর), প্রেম পিয়াসী (শাবনূর), সত্যের মৃত্যু নেই (শাহনাজ), প্রিয়জন (শিল্পী), শুধু তুমি (শ্যামা), স্বপ্নের পৃথিবী (শাবনূর), স্বপ্নের নায়ক (শাবনূর), দেন মোহর (শাবনূর) ও স্বপ্নের ঠিকানা (শাবনূর)।
‘বুকের ভেতর আগুন’ ছিল সালমান অভিনীত শেষ সিনেমা। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে সবচেয়ে বেশি ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেন শাবনূর।
সালমান শাহকে নিয়ে আলোচনা কখনোই থামেনি।
মাত্র চার বছরের সিনেমা ক্যারিয়ারে সালমান শাহ বাংলা সিনেমার অভিনয় জগতে নিজের এমন একটি স্থানটি করে নিয়েছিলেন যে তাঁর অভাব এখনো অনুভব করেন দর্শক, পরিচালক, প্রযোজক – সবাই।
এখনো প্রতি বছর সালমান শাহ’র মৃত্যু দিবসে তাঁর অনেক ভক্ত তাঁকে স্মরণ করেন ভালোবাসার সঙ্গে।
আর সালমানের অনেক ভক্তের কাছে তাঁর মৃত্যু এখনো একটি বড় রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।