প্রতিনিধি ৮ মে ২০২৩ , ৭:৫৯:২৮
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসে তখন বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, হামলা, নির্যাতন এবং পাইকারি গ্রেপ্তার অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষমতাসীন সরকার। ভোট ডাকাতির নানা রকম কারিগরি করতে মাঠ সাজানো শুরু হয়। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো সেই একই প্রক্রিয়ায় পুরানো পথে হাঁটতে শুরু করেছে তারা।
আজ সোমবার দুপুরে নযাপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ইতোমধ্যে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রণপ্রস্তুতি শুরু করেছে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার নিজেদের ‘তখতে তাউস’ রক্ষা করতে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিতে শুরু করেছে। এখনো আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এই আওয়ামী আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গায়েবি মামলায় সারাদেশে প্রায় ৪০ লাখের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে সম্প্রতি গায়েবি মামলা দায়েরের সূত্রপাত করেছে গণবিচ্ছিন্ন স্বৈরাচারী সরকারের প্রশাসন।
ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ কেউ শুনেনি, দেখেওনি। কিন্তু আসামি করা হয় মৃত ব্যক্তি ও কারাবন্দি নেতাদের। সারাদেশে চলছে ইতিহাসের জঘন্যতম এই ভয়াবহ মামলাবাজী আর আটক বাণিজ্য।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, গায়েবি মামলা গ্রেফতার নিয়ে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী দেশ, জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালেও নিশিরাতের সরকার নিজেকে রক্ষা করতে এই অপকর্মে মরিয়া। ২০২১ সালের ২৪ জুন হাইকোর্ট এর একটি বেঞ্চ গায়েবি মামলা করে নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানি থেকে রক্ষায় পাঁচ দফা নির্দেশনা দিলেও তা পরোয়া করেনা আওয়ামী সরকারের পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ বাহিনী সরকারি দলীয় সংস্থায় পরিণত হয়েছে-এমন আলোচনা এখন সর্বত্র। নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনের দলবাজ হোমড়া চোমড়া ও প্রশাসনের অফিসাররা আবারো ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের বিয়াম ভবনসহ এখানে সেখানে ভোট ডাকাতির কলাকৌশল ও মাঠ সাজানো নিয়ে গুপ্ত বৈঠক শুরু করেছেন।
ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার প্যাকেজ খরচ হিসাবে ১২২৬ কোটি টাকার বাজেট চেয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনে ১৫৮ কোটি টাকায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনাকাটায় ব্যয় হবে। সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঠেকাতে ৫৪০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়ের প্রস্তাব রয়েছে তাদের বাজেটে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি ও কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার কিনতে মোট ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ৮ নম্বর খাতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক কর্মসূচি বৃদ্ধির ফলে পুলিশের গতিও বাড়াতে হবে। এখানেই থেমে নেই আওয়ামী নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় পরিচয় দেখে পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী রদবদল ও পদোন্নতি শুরু হয়েছে। তবে এতোসব করে এবার আর পার পাওয়া যাবে না। জনগণ রাজপথে নেমেছে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে সরকারের পতন হবে
রিজভী আহমেদ বলেন, সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয়ে বেশ কয়েক মাস কারাগারে কাটাতে হয়েছে। অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি থাকা হাজার হাজার মানুষ যেভাবে কারামুক্তির প্রহর গুনছে, একইভাবে দেশের কোটি কোটি গণতন্ত্রকামী মানুষ দেশে ক্ষমতাসীনদের মিথ্যাচার, অবিচার, অনাচার আর গণতন্ত্রহীনতার অন্ধকার থেকে মুক্তি চাইছে। মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন সংগ্রামের অনুপ্রেরণায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্রহীনতার অন্ধকার থেকে গণতন্ত্রকামী মানুষের মুক্তির চলমান এই মিছিলকে গুম খুন অপহরণ করে কিংবা অন্যায়ভাবে জেল জুলুম হুলিয়া দিয়ে স্তব্ধ করা যাবে না।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র আদায়ে জনগণের ন্যায্য দাবীর প্রতি সরকার তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞার শর নিক্ষেপ করে যাচ্ছে। স্বার্থান্ধতা, ঔদ্ধত্য, অসহিষ্ণুতা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং আকন্ঠ দুর্নীতিতে জনজীবনকে দূর্বিষহ করে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঝটপট সাদাকে কালো এবং কালোকে সাদা বানিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালালেও তাঁর সরকারের অন্যায়-অনাচার আর দুর্নীতিকে পর্দার আড়ালে রাখতে পারছেন না। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জনদাবীকে অগ্রাহ্য করে সামনের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা মিশ্রিত অনিশ্চয়তা ও সন্ধিগ্ধতার জন্ম দিচ্ছেন অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে। তবে অনঢ়তা, একগুঁয়েমি এবং ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার সকল ফন্দি জনগণ নস্যাৎ করে দিবে।