আন্তর্জাতিক

মার্কিন ভিসা নীতি বিশ্বে নজিরবিহীন

  প্রতিনিধি ২৯ মে ২০২৩ , ১১:০০:৫১

শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসার ব্যাপারে অতি সম্প্রতি ‘নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এর আগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের উপর যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও দেশটির তরফে অভিনব এই পদক্ষেপে সবাই বেশ অবাক হয়েছেন। কারণ, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র তথা অন্য কোনো দেশের পক্ষ থেকে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ ইতিহাসে অনেকটাই নজিরবিহীন। শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি দেশের জন্য এমন ভিসা নীতি গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই তালিকায় বাংলাদেশের আগে ৫টি দেশ ঢুকে পড়েছে বলে শোনা যাচ্ছে: নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা, নিকারাগুয়া ও বেলারুশ। লক্ষণীয় যে, উপরোক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি দেশই আফ্রিকা মহাদেশের। এশিয়া মহাদেশের কেউ এই তালিকায় নেই। তার মানে, এশিয়ায় বাংলাদেশই একমাত্র দেশে যার জন্য স্বতন্ত্র ভিসা নীতিমালা গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

নাইজেরিয়ায় চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বোলা তিনুবু। ওই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে গত ১৫ মে কয়েকজন নাইজেরিয়ান নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ওইদিন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে লিখেন, “নাইজেরিয়ায় ২০২৩ সালের নির্বাচনের সময় যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এরকম নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের উপর আমরা ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।

গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে শক্তিশালী করতে নাইজেরিয়ার আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” নির্বাচনের আগেও গত জানুয়ারিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া খর্বে জড়িত সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

সেই ১৯৮৬ সাল থেকে উগান্ডার ক্ষমতায় রয়েছেন ইওয়েরি মুসেভেনি। ২০১৯ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে ষষ্ঠবারের মতো তিনি ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই উগান্ডাজুড়ে মুসেভেনি এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিরোধী নেতা ববি ওয়াইনের সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছিলো৷ নির্বাচনের পর ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল কারচুপির দায়ে দেশটির কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এন্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে বলেন, ১৪ জানুয়ারির নির্বাচন এবং এর প্রস্তুতির সময় যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে বিশ্বাস করা হয় তাদের উপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পরে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিণতি রয়েছে।

মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারুগুয়ায় ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ড্যানিয়েল ওরতেগা। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ ছিল। ওই বছরের ১২ জুলাই স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়ঃ নিকারাগুয়ার সরকার এবং বিচার বিভাগের ১০০ ব্যক্তির উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রসিকিউটর এবং বিচারক ছাড়াও তাদের পরিবারের কিছু সদস্য রয়েছেন। এসকল ব্যক্তিদের কাছে থাকা মার্কিন ভিসা অচল করা হয়েছে।

ওদিকে, ইউরোপের দেশ বেলারুশে ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো জয়ী হন। ওই নির্বাচনে কারচুপি ও নির্বাচন পরবর্তী বিক্ষোভে দমন-নিপীড়নের অভিযোগে অনেক বেলারুশিয়ানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা দেয়। স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়, এসব ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন: বিচার বিভাগের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা; আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের আটক ও দুর্ব্যবহার করেছেন যারা; শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারী এবং সাংবাদিকদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার সাথে জড়িত বিচারক ও প্রসিকিউটররা এবং একাডেমিক এডমিনিস্ট্রেটর, যারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েছিলেন। তাছাড়া, স্বাধীন গণমাধ্যমের কাজকে বাধাগ্রস্ত করেছেন যারা, তাদের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

আফ্রিকার আরেক দেশ সোমালিয়ায় নির্বাচন পিছিয়ে নেয়ার কারণে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ দেশটির সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তাদের বিরুদ্ধে সোমালিয়ায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে খর্ব করার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানায় স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এর আগে ওই মাসের ০৮ তারিখেও দেশটির অনেকের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যাই হোক, ১৫ মাস বিলম্বের (দীর্ঘ সময় ধরে চলা) নির্বাচনের পর ওই বছরের মে মাসে সোমালিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন হাসান শেখ মোহামুদ।

৪টি দেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের পর তাদের জন্য ভিসা নীতি গ্রহণ করে। নাইজেরিয়ার ক্ষেত্রে কয়েকজনের ব্যাপারে ভোটের আগেই বিধিনিষেধ আরোপ করে। নির্বাচনের প্রায় ৭/৮ মাস আগেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যে সত্যিই চাইছে, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সম্পূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক- এটি তারই নমুনা বলে সচেতন মহল মনে করছেন।

 


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content