রাজনীতি

রাজপথ নিয়ন্ত্রণের কৌশল নির্ধাণে আওয়ামী লীগ

  প্রতিনিধি ৬ মে ২০২৩ , ১০:৪২:০৮

শেয়ার করুন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার রাজপথ নিয়ন্ত্রণের কৌশল নির্ধারণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির মতে, নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে। বিরোধী দলগুলো আন্দোলন নিয়ে সোচ্চার হবে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাতে তাদের আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। এজন্য আগেভাগেই রাজধানীর রাজপথ যেন নিজেদের দখলে থাকে সেই কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের এ নিয়ে দায়িত্ব বণ্টন করা হবে। এর আগে রাজধানীর রাজপথ দখলে রাখার জন্য ঢাকা মহানগর উত্তর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এবার তাদের সঙ্গে যোগ করা হবে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। দলটির প্রেসিডিয়াম ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা বিষয়টি তদারকি করবেন। গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভায় নেতাকর্মীদের সতর্ক ও পাহারায় থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বৈঠক শেষে মানবজমিনকে বলেন, এমনিতেই তো আমরা সব সময় সতর্ক ও সজাগ রয়েছি। কারণ বিরোধী দলের আন্দোলন মানেই হলো জ্বালাও-পোড়াও। এসব নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরাও সচেতন আছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন রিয়াজ বৈঠক শেষে মানবজমিনকে বলেন, বিরোধীরা মনে করছেন রাজধানীতে আন্দোলন সফল করতে পারলে সারা দেশে তা ছড়িয়ে পড়বে। সরকারের পতন হবে। বিষয়টি নিয়ে দলের নেতারা আমাদের সতর্ক থাকতে বলেছেন। এজন্য রাজধানী ঘিরে আমাদের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। কর্মসূচি রয়েছে। সামনে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসবে পরিস্থিতি বুঝে কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের নির্দেশনা দেবেন বলে জানিয়েছেন। রিয়াজউদ্দিন রিয়াজ বলেন, রাজধানীর রাজনীতির মাঠে পাহারাদার হিসেবে ভূমিকা পালন করবে আওয়ামী লীগ।
সন্ত্রাস করে, জ্বালাও পোড়াও করে কেউ যেন পালিয়ে যেতে না পারে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। গতকালের বৈঠকে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার যৌথসভায় বসলো আওয়ামী লীগ। মূলত আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করাই ছিল এসব বৈঠকের মূল বিষয়। এদিকে বৈঠক শেষে সার্বিক বিষয় নিয়ে ব্রিফিং করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের চলমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি নতুন করে চক্রান্তের রূপরেখা তৈরি করছে। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) মিটিং-সিটিং করছে, গোপন বৈঠক করছে। এখন নাকি রূপরেখা তৈরি করবে। এই রূপরেখা আন্দোলনের নয়, এই রূপরেখা ষড়যন্ত্রের। চক্রান্তের রূপরেখা তারা এখন তৈরি করছে। এটা রাজনীতি নয়, এটা বাংলাদেশের বিকাশমান উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিকে আক্রমণ করার জন্য তারা ষড়যন্ত্র করছে। জনসম্পৃক্ততার অভাবে বিএনপি’র আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তারা বুঝে গেছে যে, আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটে তাদের জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনে হেরে যাবে বলে তারা ভয় পায়। তাই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করছে। সেই রূপরেখাই তারা তৈরি করছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কথায় কথায় মির্জা ফখরুল কি করে বলেন, অবৈধ সরকার। মির্জা ফখরুল আর বিএনপি’র নেতাদের লজ্জা করে না এই কথা বলতে? অবৈধ দল কোন্টি? বাংলাদেশের অবৈধ দল বিএনপি। অবৈধ ব্যক্তি যে দল গঠন করে ক্ষমতায় থেকে সেই দল কি বৈধ? সেটা অবৈধ দল। তারা অবৈধ দল। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন মানে তো টাকা পয়সার খেলা। এখন বলছে নির্বাচন করবে না।

আবার একটি পত্রিকায় দেখলাম রাষ্ট্রপতি ডাকলে আসবে। হামিদ সাহেব ডেকেছেন আসেননি। এখন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সাহেব ডাকলে আসবেন, দেখা যাক। দেখছে তো আর কোনো পথ নেই। সব পথই খোলা রাখবে, কেন? আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত আছে না? আছে। নির্বাচন করবে না কিন্তু ঘোমটা পরে করবে। কীভাবে? স্বতন্ত্র মার্কা নির্বাচন। ২৪ জন দাঁড়িয়ে গেছে কাউন্সিলর পদে। মেয়র পদেও দাঁড়িয়েছে। তারা নির্বাচন করবে। ধানের শীষ নিয়ে করবে না। দলীয় পরিচয় গোপন রেখে নির্বাচন করবে। কিন্তু সবাই জানে, কারা কারা বিএনপি’র। আমরা জানি, দেশের মানুষও জানে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটাররাও জানে। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এবারের বিদেশ সফর বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এটি একটি ঐতিহাসিক সফর উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকের অন্তর জ্বালা আছে আমরা জানি। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে যারা হিংসা করে, তারাসহ বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে বিষোদগার করতে শুরু করেছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্ব সংকটের প্রভাব আমাদের জনজীবনে অনিবার্যভাবে এসে পড়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে যদি কেউ বিবেচনা করে তাহলে এটি হবে একটি ঐতিহাসিক সফর। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে অপবাদ দিয়ে যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছিল, সেই বিশ্বব্যাংকের সভাপতি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সংবর্ধনা দিয়েছেন।

ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে যৌথসভায় সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিম-লীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও এডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম ও সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বন ও পরিবেশ বিষয়ক দেলোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ-দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজী ও আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content