নির্বাচন

লেমিনেটিং করা পোস্টারে ছেয়ে গেছে গাজীপুর

  প্রতিনিধি ১৪ মে ২০২৩ , ১২:০৪:১০

শেয়ার করুন

উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে নির্বাচনী প্রচারণায় লেমিনেটেড পোস্টার ব্যবহার করছেন আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা।

শনিবার নগরীর ৫৫, ৪৭, ৪৮, ৩১, ২৭ নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীসহ মেয়র পদের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খানের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী গাজী আতাউর রহমানের প্লাস্টিক পলিতে মোড়ানো পোস্টারগুলো বিভিন্ন এলাকায় রশিতে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আজমত উল্লাহ খান ও গাজী আতাউর রহমানের ৮০ শতাংশ পোস্টারই প্লাস্টিকে মোড়ানো অবস্থায় দেখা গেছে।

এছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ৫৫ নং ওয়ার্ডের লাটিম প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান, ঠেলাগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী আবুল হোসেন, ৪৮ নং ওয়ার্ডের ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী মো. মোশাররফ হোসেন, ৩১ নং ওয়ার্ডের লাটিম প্রতীকের প্রার্থী মো. রফিকউজ্জামান, ২৮,২৯,৩০ নং সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী ফেরদৌসী বেগম ও আয়েশা আক্তারসহ আরও বেশ কিছু কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের পোস্টারগুলো লেমিনেটেড অবস্থায় দেখা গেছে।

শুধু এ এলাকাগুলোতেই নয়, স্থানীয়রা জানান, গোটা গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায়ই লেমিনেটেড পোস্টারে ছেয়ে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

 

৪৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুবিনা আক্তার বলেন, ‘এসব নিয়ে আমাদের আসলে খুব ভেবে লাভ নেই। আপনারা বুঝে নেন, যারা এখন থেকেই নগরীর পরিবেশের ক্ষতির কারণ হচ্ছেন, তারা নির্বাচিত হলে নগরীর কতটা ভালো করতে পারবেন।’

এদিকে বিষয়টি নজরে আনলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘লেমিনেটেড পোস্টারের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধিমালায় সুনির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ নেই। প্রার্থীরা যদিও বৃষ্টির কারণে পোস্টার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে লেমিনেটেড পোস্টার ব্যবহারের জোর দাবি জানাচ্ছেন, তবে আমরা এর অনুমতি দেইনি। বিষয়টি যেহেতু আমাদের নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় উল্লেখ নেই, পলিথিনের ব্যপারে যে আইন রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেই আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এটি পরিবেশ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিষয়।’

যোগাযোগ করলে পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো. নয়ন মিয়া বলেন, ‘আমরা গাজীপুরের বায়ু দূষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে জোরালোভাবে কাজ করছি। কিন্তু সব বিষয় তো আসলে আমাদের পক্ষে এড্রেস করা সম্ভব না। সব বিষয় এড্রেস করতে গেলে আমরা টিকতে পারবো না। আমি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অফিসিয়ালি চিঠি দিবো।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) গাজীপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বৈঠকে নির্বাচন কমিশন অনেক আশার কথা শুনিয়েছিলো। কিন্তু কই, আমরা তো তার বাস্তবায়ন দেখছি না। গোটা নগরী লেমিনেটেড পোস্টারে ছেয়ে গেছে। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, বিষয়টি এর আগে উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ালেও এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধিমালায় এ বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই। বিষয়টিকে আমরা নির্বাচন কমিশনের উদাসীনতা বলবো। কেননা তারা চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন বডি তাদের সাথেই আছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তারা নীরব।’

যোগাযোগ করলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘সবাই তো এই লেমিনেশন করা পোস্টার ব্যবহার করছে, শুধু আমি একা তো না। তাছাড়া বৃষ্টির কারণে পোস্টার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিধায় এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। পরিবেশের বিষয়টি আমার বিবেচনায় আছে, নির্বাচন শেষে আমি নিজ ব্যবস্থাপনায় এগুলো অপসারণ করে নেবো, পরিবেশের যেন ক্ষতি না হয়, সেদিকে আমার লক্ষ্য থাকবে।’

তবে এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


শেয়ার করুন