প্রতিনিধি ১১ মে ২০২৩ , ১০:৩৫:৫০
গাজীপুরে বাসায় ঢুকে কলেজছাত্রী রাবেয়া আক্তারকে (২৩) কুপিয়ে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ঘাতক গৃহশিক্ষক সাইদুল ইসলাম। গ্রেপ্তার এড়াতে নিজের চুল ও দাড়িও কেটে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে এক বন্ধুর বাসায় ঘাতক সাইদুলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। আজ দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে রাবেয়াকে হত্যার লোমহর্ষক ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানিয়েছে, করোনাকালীন সময়ে নিহত রাবেয়া, তার মা এবং আরও তিন বোনকে আরবি পড়াতেন। সাইদুল গাজীপুরের শাল্লা এলাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি একটি মসজিদে তিনি নামাজ পড়াতেন। ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে তিনি ওই পরিবারের সকল সদস্যকে ৪-৫ মাস এবং ছোট বোনকে প্রায় ৬ মাস আরবি পড়িয়েছেন। এই সময়ে রাবেয়ার সঙ্গে তার একটি সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।
একপর্যায়ে রাবেয়ার প্রতি সাইদুল কুনজর দেন এবং মৌখিকভাবে সকলের অসম্মতিতে গোপনে রাবেয়াকে বিয়ে করেন। বিষয়টি রাবেয়ার পরিবার জানার পর সাইদুলকে বাসায় আসা বন্ধ করে দেন এবং তার পরিবারকে বিষয়টি জানিয়ে অনুরোধ করেন, যেন সাইদুল রাবেয়াকে আর উত্ত্যক্ত না করে।
র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, এরপর থেকে কলেজে যাওয়ার সময় বা কর্মস্থলে যাওয়ার সময় সাইদুল রাবেয়াকে উত্ত্যক্ত করতেন। এর প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের অক্টোবরে সাইদুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন রাবেয়া। অভিযোগের পরে কয়েকদিন তাকে উত্ত্যক্ত করা বন্ধ ছিল। পুনরায় গত ২ মাস আগে থেকে সাইদুল রাবেয়াকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত এবং সামাজিকভাবে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে।
সম্প্রতি রাবেয়া ইউরোপের একটি দেশে স্কলারশিপে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বিষয়টি জানার পরে ক্ষিপ্ত হয়ে সাইদুল তাকে বিয়ে না করলে হত্যা করবে বলে হুমকি দেন। রাবেয়ার পরিবার বিষয়টি সাইদুলের পরিবারকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আসামি সাইদুল পরিকল্পিতভাবে রাবেয়াকে হত্যা করার জন্য ৭ই মে বিকেলে শাল্লা বাজারের একটি দোকানে গরু কাটার একটি ছুরি অর্ডার দেন। ৬৫০ টাকার দিয়ে সেই ছুরিটি ৮ তারিখ সন্ধ্যায় তিনি সংগ্রহ করেন। সাড়ে ৭টার দিকে তিনি ভিকটিমের বাসায় যান। রাবেয়া যে রুমে পড়াশোনা করছিলেন সেই রুমে প্রবেশ করে ওই ছুরি দিয়ে রাবেয়াকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। রাবেয়ার চিৎকার শুনে অন্য রুমে থাকা রাবেয়ার মা এবং বোনেরা রাবেয়াকে বাঁচাতে এলে তাদেরকেও সাইদুল কুপিয়ে পালিয়ে যান। পরে রাবেয়ার বাবা এবং স্থানীয়রা প্রাথমিক ভাবে তাদেরকে গাজীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ভিকটিম মারা যান। বাকিদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় একটি হাসপাতালে আনা হয়। ভিকটিমের মা এখনও আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।
ওই ঘটনার পর সাইদুল টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে তার এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে চলে যান। যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে শনাক্ত করতে না পারে সেজন্য তিনি তার চুল এবং দাড়ি কাটেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-১ এর আভিযানিক দল তাকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করে।