কখনো ভেবে দেখেছেন কি !
কত টাকা মাসে বা বছরে আয় করেছেন ?
আয়ের কত % নিজের থাকা-খাওয়ার জন্য খরচ হয় ?
আয়ের কত % পরিবারের সদস্যদের জন্য খরচ হয় ?
আয়ের কত % আত্নীয় স্বজনের জন্য খরচ হয় ?
আয়ের কত % নিজের কাজে লাগিয়েছেন, হতে পারে নিজের জন্য বাড়ি করা বা বিল্ডিং করা বা নিজের নামে জমি কেনা বা ফ্লাট কেনা বা নিজের নামে ব্যাংকে জমা করা ইত্যাদি ।
নিজের নামে বললাম কেন জানেন ?
কারন জমি / ফ্লাট / প্লট / ব্যাংক যদি অন্যদের নামে হয় তাহলে আপনি দেশে গেলে ঐ গুলি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মাত্র ৫% (বিঃদ্রঃ সবার পরিবার এক রকম নয়) বাকি ৯৫% লোকের ক্ষেত্রে দেখা যায় দেশে গিয়ে দেখতে পায় সবার সব কিছু হয়েছে প্রবাসীর টাকায় কিন্তু প্রবাসীর জন্য কিছুই করা হয় নাই ।
আপনি যদি নতুন প্রবাসী হয়ে থাকেন বা সেভিং সর্ম্পকে ধারণা না থাকে তাহলে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করতে পারেন ।
- প্রবাসে যাওয়ার জন্য ঋন করে থাকলে পরিশোধ করেন ।
- পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হলে পরিবারের সকল সদস্যের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার জন্য যত টুকু দরকার তা আপনাকে দিতে হবে ।
- পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের পরে যা কিছু থাকবে তার সব টুকু নিজের কাছে সিংগাপুর জমা করেন । এই টাকা দিয়ে আপনার যোগ্যতা / দক্ষতা / মেধা অনুযায়ী কিছু কোর্স করেন নিজেকে একটু ভাল পজিশনে নেয়ার জন্য। যেমন: ডিপ্লোমা, NITEC, সুপারভাইজর লেভেলের কোর্স, টেকনিক্যাল বিষয়ে কোর্স, ড্রাইভিং ইত্যাদি । কোর্স করার আগে ভাল ভাবে বুঝে শুনে করবেন। কোন কাজ নিজে করতে পারবেন এই দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ।
- দেশে নিজের নামে অবশ্যই একটা ব্যাংক একাউন্ট খুলে আসবেন বা সিংগাপুর থেকেও ইচ্ছা করলে একাউন্ট চালু করা যায় ।
- পরিবারে বোন থাকলে তাদের বিয়ের জন্য কিছু টাকা নিজের ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা করবেন । যখন তার বিয়ের সময় হবে বাবা-মাকে বলবেন এই পরিমান টাকা রেখেছি তার জন্য । বোনের বিয়ের টাকা বাবা-মা বা অন্য সদস্যদের কাছে জমা দেয়ার কোনো যুক্তি নেই কারন আপনি মরলেও টাকা তারা পাবে আর বেঁচে থাকলেও বোনের বিয়ের জন্য দিবেনই । তাহলে তাদের কেন আগে অন্যর হাতে জমা দিতে হবে ? যাকে দিবেন সেই লোক যে বেঁচে থাকবে তার নিশ্চয়তা কে দিবে ? আমি এমন দেখেছি বাবার কাছে প্রবাসী ছেলে জীবনের সব আয় পাঠিয়েছে। বাবাও ভাল লোক ছিলেন, ছেলের টাকা নিজের একাউন্টে জমা রাখেন ছেলে দেশে আসলে বুঝিয়ে দিবেন এই আশায় । হায়াৎ না থাকার কারনে বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের সবাই মিলে সেই টাকা ভাগ করে নেয় । দিন শেষে প্রবাসীর ভাগে থাকে না কিছুই ।
আমি বলছি না যে আপনার সাথে এমন হবেই । কিন্তু হবে না এটাও বলা যায় না ।
- যত আয় করেন এর ৫০% যদি সেভিং করতে না পারলে ১০-২০ বছর প্রবাসে থাকার পরেও দেশে গিয়ে কি করবেন বা কি খাবেন বা কিভাবে পরিবারের ভরণ পোষণ করেন এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে চুপ হয়ে যাবেন ।
- টাকা এমন একটি জিনিষ যার পকেটে যায় তার হয়ে যায় ।
- কথায় বলে "গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন নাহি বিদ্যা নাহি ধন হলে প্রয়োজন" সুতরাং অন্যের নামে ব্যাংকে বা হাতে টাকা রেখে নিজের মনে করলে বিপদে পরার সম্ভাবনা রয়েছে ।
- অতীতে আমি সেভিং করা সম্পর্কে অনেক কিছু লিখেছি, কেউ ভাল বলেছেন আবার কেউ বকা দিয়েছেন । আরে ভাই দিন শেষে আপনার জমানো টাকা আমাকে দিবেন না । সেভিং করা বা না করা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত বিষয় । আমি শুধু বাস্তবতা কেমন হতে পারে এটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ।
- একটা কথা মাসে একবার হলেও বাবা এবং মায়ের মোবাইলে ১০০ বা ২০০ টাকা রিচার্জ করতে ভুলবেন না, দেখবেন তারা কতটা খুশি হয় । বাবা-মায়ের সাথে কখনোই খারাপ আচরণে করবেন না । করলে দুনিয়া এবং আখেরাত দুই জলে যাবে । সব কিছু বুঝিয়ে বলবেন যে কোনো বিষয় বা সমস্যা হোক । বাবা-মার দোয়া থাকলে আর বেশি কিছু লাগে না । আত্মীয় স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন ।
(*মুসলমান হলে নামাজ কায়েম করুন)
আপনার মতামত জানাতে পারেন কমেন্টে ✍️
✍️Nasir Uddin সিঙ্গাপুর প্রবাসী (১৯ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে)
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ