প্রতিনিধি ১৪ মে ২০২৩ , ৯:২০:১১
সারা দেশে চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। সঙ্গে গ্যাসের সংকটও চরমে। কোনো কোনো এলাকায় ঘরে চুলা জ্বলছে নিবু নিবু করে। কোথাও আবার একেবারে জ্বলছে না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। গ্রামে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে আছে। ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনে নেমেছে ধস। রাজধানী ঢাকাতেও বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি দুর্ভোগে ফেলেছে মানুষকে। ঘূর্ণিঝড় মোখা’র কারণে সৃষ্ট বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দু’দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। গ্যাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও বেশি সময় লাগবে।
গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আশা প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে লোডশেডিং পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় যাবে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিদ্যুতে প্রভাব পড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রভাবটা থাকবে। কিছু কিছু জায়গায় লোডশেডিং থাকবে, খুব বেশি না। আমার কাছে মনে হয় খুব অস্বাভাবিক পরিস্থিতি যেটা এখন হয়েছিল, কিছুটা হয়তো আমাদের সমস্যা দেখা গিয়েছিল শনিবার রাত থেকে, এ সমস্যাটা আমরা কাভার করতে পারবো। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় আগামী দুই দিনের মধ্যে আমরা একটা ভালো অবস্থায় যেতে পারবো। বিদ্যুতের ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারটা এখনো আমার কাছে আসেনি। আসলে হয়তো জানতে পারবো। আমরা মনিটর করছি। সকাল থেকে আমাদের মনিটরিং চলছে।
সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত থেকেই আমদানি করা তরল গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন অব্যাহত আছে। এমনিতে বহু আগে থেকেই গ্যাসের ঘাটতি ব্যাপক। শুক্রবার থেকে আরও ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। ফলে গ্যাসচালিত অধিকাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। দেশে মোট বিদ্যুতের অর্ধেক উৎপাদন করা হয় গ্যাস দিয়ে। গতকাল তাপমাত্রা একটু কমে আসায় বিদ্যুতের চাহিদাও কমেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গতকাল বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো। সেখানে উৎপাদন নেমে এসেছে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াটে। লোডশেডিং করতে হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াটের উপরে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে সাড়ে ২৬ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি।
রাজধানী ঢাকাতেই শনিবার থেকে বিভিন্ন এলাকায় কয়েক ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। তা গতকালও অব্যাহত ছিল। গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। শিল্প-কারখানা, বাসাবাড়ি এবং সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সংকট আরও নাজুক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে গ্যাস না থাকায় কেরোসিন ও ইনডাকশন কুকারের দোকানে ভিড় করছেন নগরবাসী। তবে হঠাৎ চাহিদা সামাল দিতে না পারায় অধিকাংশ মানুষকে দোকান থেকে হতাশা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে বলে জানিছেন নগরবাসী। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় মোখা’র কারণে গত ২ দিন ধরে আমদানি করা এনএলজি খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গত ২ দিন ধরে পাইপলাইনে থাকা গ্যাস দিয়েই চলছিল নগরবাসী। গত ২ দিন গ্যাসের চাপ কম থাকলেও গতকাল থেকে পুরোপুরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
আমদানি করা এলএনজি প্রক্রিয়াজাত করা হয় কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে। এখানে সাগর উপকূলে এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। মোখা বাংলাদেশের কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিনসহ আশপাশ এলাকা দিয়ে অতিক্রম করে। শুক্রবার থেকে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৬০ কোটি ঘনফুট। গত বৃহস্পতিবার পেট্রোবাংলা সরবরাহ করেছে ২৮০ কোটি ঘনফুট। শনিবার তা নেমে আসে ২২০ কোটি ঘনফুটে। শুধু দেশী ক্ষেত্রগুলোর গ্যাস দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।
রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। ডেসকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী কাউসার আমীর আলী মানবজমিনকে বলেন, তার এলাকায় গতকাল ৬০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে। চাহিদা ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার মেগাওয়াট। তিনি আরও বলেন, তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসায় বিদ্যুতের চাহিদাও আগের দিনের চেয়ে কমেছে। গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে, তাদের এলাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে।
পুরান ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার বাসিন্দা লিনা আক্তার মানবজমিনকে জানান, দু’তিন বার বিদ্যুৎ চলে গেছে। প্রত্যেকবার কমপক্ষে এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ ছিল না। এ ছাড়া গ্যাসও আসছিল অনেক কম। গ্যাসের চুলাও জ¦লছে নিবু নিবু করে। রান্নাবান্না করতে দেরি হয়েছে। আজিমপুরের বাসিন্দা শাহনাজ সুলতানা জানান, সারা দিন গ্যাসের চাপ ছিল না। এ জন্য ভাত রান্না করতেই দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। এ ছাড়া সারাদিন বিদ্যুৎ অনেকবার যাওয়া-আসা করেছে।
গ্যাসের চাপ কম থাকায় অনেক কারখানা চালু করাই সম্ভব হয়নি। ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতেও একই অবস্থা। সিএনজি স্টেশনে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। ঢাকা বিভাগে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা তিতাস জানিয়েছে, এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করবে। এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত গ্যাসের স্বল্প চাপ থাকবে। এই দুর্ভোগ কতোদিন চলবে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি তিতাস। গ্যাস সংকটে চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কয়েকটির উৎপাদন কমানো হয়েছে।