প্রতিনিধি ২২ মে ২০২৩ , ১২:৩৪:১৩
স্বাভাবিক জীবনযাপন ও পুনর্বাসনে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস * ১৯৯৮ সালে সিরাজগঞ্জে আত্মসমর্পণ করেছিলেন শতাধিক চরমপন্থী।
কয়েকটি চরমপন্থী দলের ৩১৫ জন সদস্যের ২১৯টি অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ। গতকাল সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় র্যাব-১২-এর সদর দপ্তরে।
আলোর পথে ফিরে আসতে আত্মসমর্পণ করা চরমপন্থীদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ও পুনর্বাসনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল রবিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় র্যাব-১২-এর সদর দপ্তরে কয়েকটি চরমপন্থী দলের ৩১৫ জন সদস্যের ২১৯টি অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে এই আশ্বাস দেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আশির দশক থেকে এই এলাকার কয়েকটি জেলায় যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ থাকায় সর্বহারা ও চরমপন্থীরা ঘাঁটি তৈরি করে। পরে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ‘সন্ত্রাসের জীবন ছাড়ি, আলোকিত জীবন গড়ি’ স্লোগানে চরমপন্থীরা আলোর পথে ফিরে আসেন।
প্রধানমন্ত্রী তখন যেমন সবাইকে পুনর্বাসন করেছিলেন, তেমনি আজও আমাকে আসার আগে বলেছেন, যাঁরা আত্মসমর্পণ করে আলোর পথে ফিরে আসবেন তাঁদের আর্থিক থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী জানায়, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইলসহ বেশ কিছু জেলায় একসময় চরমপন্থীদের দাপট ছিল। ষাট-সত্তরের দশকে বামপন্থী রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে এঁদের অনেকের আবির্ভাব হলেও পরে একসময় অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এর মধ্যে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-লাল পতাকা), পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি (এমবিআরএম) ও পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি (জনযুদ্ধ) অন্যতম।
একসময় নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হতে থাকে তারা। চলতে থাকে একে অন্যকে হত্যা। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। এ অবস্থায় ১৯৯৮ সালে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন চরমপন্থী দলের শীর্ষ নেতাসহ শতাধিক সদস্য।
২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল পাবনায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ৫৯৬ চরমপন্থী। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন এলাকার চরমপন্থী নেতা ও সদস্যদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফেরাতে র্যাবের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “র্যাব ভালো কাজের পাশাপাশি মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। এ জন্য ‘চরমপন্থীরা’ আত্মসমর্পণের জন্য র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। র্যাব আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে।
অপরাধীদের হুঁশিয়ার করে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন, আমরা দুর্গম এলাকায় বসে থাকব, অপরাধ করব আর আপনারা ধরতে পারবেন না, তাহলে তাঁরা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বিপথগামীদের ফেরাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আর্থিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে সরকার।’
র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, র্যাব-১২ অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মারুফ হোসেন, আত্মসমর্পণকারী রাজবাড়ীর ফারুক সেখ, টাঙ্গাইলের সাইদুল ইসলাম, শাহজাহানের স্ত্রী নাজমা আক্তার প্রমুখ।