বিনোদন

“অন্য দুনিয়া”

  প্রতিনিধি ৪ জুন ২০২৩ , ২:০৭:৪৬

শেয়ার করুন

পলাশ আমার রুমে লুকিয়ে আছে ১০ দিন যাবত। আমার বাবা-মা কেও জানেনা যে আমি একটা ছেলেকে আমার রুমে লুকিয়ে রেখেছি।
আমার নাম অদ্রি। আর পলাশ হলো আমার ভালোবাসার মানুষ। আমরা একে অপরকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি।
পলাশের পরিবারে একটা সমস্যা হবার কারনে সে আমার রুমে লুকিয়ে থাকে।
আমার আলাদা রুম, আর রুমের মধ্যে টয়লেট থাকার কারনে পলাশের কোনো সমস্যা হচ্ছেনা। আমার রুমেও বাবা-মা কেও বেশি আসেনা।
যখন তারা আসে তখন পলাশ আসবাবের পিছনে লুকিয়ে পড়ে।
এখন রাত ১২টা বাজে। মা আমাকে ভাত দিয়ে গিয়েছে।
একই থালায় আমি আর দুজনে ভাত খাচ্ছি।
পলাশ কেমন জানি দুর্বল হয়ে গিয়েছে আগে থেকে। আগের মত কথা বলেনা, মজা করেনা।
ভাত খাওয়ার পরে আমার রুমের বারান্দায় গিয়ে পলাশ একটা সিগারেট টানতে শুরু করলো।
সে আগে সিগারেট খেতো না। ইদানিং খাওয়া ধরেছে।
আমি পলাশকে বললাম,
– ” এইভাবে আর কতদিন লুকিয়ে থাকবে?”,
– ” আর অল্প কিছুদিন।”
সিগারেট খেয়ে খাটে এসে শুয়ে পড়লো।
ইদানিং পলাশের শরীর অনেক ঠান্ডা। মনে হয় মৃত একজন মানুষ যার শরীরে রক্ত চলাচল হয়না। আর তার চেহারাটাও কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
আমি খাটে এসে পলাশের পাশে বসলাম।
পলাশ আমার একটা স্তনে হাত রাখলো। তারপর খুব গাড়ভাবে আমার ঠোটে চুমো দিলো।
সে আমার পুরো শরীরে উন্মাদ এর মত হাত দিতে লাগলো।
হঠাৎ বাবা এসে দরজায় ডাক দিলো।
পলাশ খাটের নিচে লুকিয়ে পড়লো।
বাবা এসে বললো,
– ” ঔষধ খেয়েছিস মা?”
আমি বললাম,
– ” তোমরা কেনো এমন করছো বাবা? আমিতো সম্পূর্ন সুস্থ, তাহলে তোমরা আমাকে রোজ রোজ ঔষধ খাওয়াচ্ছ কেনো?”
বাবা বললো,
– ” তুই সুস্থ নাইরে, মা। তাড়াতাড়ি ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। আর দরজাটা খোলা রাখ।”
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
দরজা খোলা রাখলে তো তারা পলাশকে দেখে ফেলবে। তখন অনেক বড় সমস্যা তৈরি হবে। তাই আমি বললাম,
– “বাবা আমাকে একা থাকতে দাও। দরজা খোলা রেখে আমি ঘুমাতে পারিনা। প্রাইভেসি বলতে একটা জিনিস আছে। ”
-” আচ্ছা মা”
ঔষধ খাওয়ার পর বাবা চলে গেলো। আমি দরজা আটকে দিলাম।
পলাশ খাটের নিচ থেকে বের হয়ে আসলো।
পলাশ এখন খালি গায়ে। কিন্তু আমার মনে আছে ও খাটের নিচে ঢোকার সময় শার্ট গায়ে ঢুকেছিলো।
এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমরা একটা খেলায় মত্ত হলাম।
যেটা সেই সৃষ্টিলগ্ন খেকে নর-নারীর মাঝে চলে আসছে।
.
—– পরের দিন —–
.
সকাল সকাল দরজায় মা এসে ডাকাডাকি শুরু করছে।
আমি বিরক্তের সুরে বললাম,
” ২ মিনিট।”
পলাশকে ঘুম থেকে জাগিয়ে লুকিয়ে পড়তে বললাম।
সে লুকিয়ে পড়লো।
দরজা খুলে দেখি লাবিব দাড়িয়ে আছে।
লাবিব আমার বন্ধু, সে আমাকে অনেক পছন্দ করে, জানিনা সে আমাকে ভালোবাসে কিনা।
লাবিব বললো,
-” আসতে পারি?”
আমি বললাম,
-” আসো।”
আমি জলদি করে মুখে পানি মেরে ওর সামনে এসে বসলাম।
বসার আগে রুমের দরজাটা আটকে দিলাম।
লাবিব বললো,
– ” তো কি খবর তোমার? কোনো খোজ-খবর পাচ্ছিনা তোমার বিষয়ে!”
– ” এইতো আছি কোনোরকম, তুমি?”
– ” ভালোই। ঔষধ ঠিক মতো খাচ্ছো?”
– ” জ্বি। খাচ্ছি।”
হঠাৎ লাবিবের দৃষ্টি যায় গতকাল পলাশের খাওয়া সিগারেটের ফেলে দেওয়া ফিল্টারের দিকে যা বারান্দায় পড়ে আছে।
লাবিব বললো,
– ” তোমাদের ঘরে সিগারেট কে খায়?”
আমি বানিয়ে মিথ্যা কথা বললাম,
– ” আমার বাবা মাঝে-মধ্যে খায় আরকি।”
– ” ও ভালো। ”
আমি লাবিবকে বললাম,
– ” আচ্ছা লাবিব তুমি এখন যাও। পড়ে কথা হবে। আমার অনেক কাজ আছে।”
ও আমার রুম থেকে চলে গেলো।
আমি দরজা আটকে দিলাম।
সে আমার রুম থেকে চলে গেলেও আমি তার এবং আমার মায়ের নিচুগলায় কথা বলার আওয়াজ শুনতে পেলাম ২০ মিনিট ধরে।
তারপর লাবিব চলে গেলো।
তারা নিশ্চয়ই আমার অসুখের বিষয়ে কথা বলেছে।
আমি পলাশকে বললাম,
– ” জানু, তুমি ঘরে থাকো আমি তোমার জন্য সিগারেট এবং কিছু খাবার নিয়ে আসছি।”
– ” আচ্ছা। তাড়াতাড়ি এসো। আমার একা থাকতে ভয় করে।”
আমি রুম থেকে বের হয়ে রুমে তালা মেরে দিলাম।
মাকে বললাম,
” মা আমি চাইনা তুমি আমার রুমে ঢুকে অযথা আমার রুম অগোছালো করে ফেলো তাই তালা মেরে দিলাম। আর আমার কিছু জিনিস লাগবে তার জন্য আমি দোকানো যাচ্ছি।”
মা আমাকে অনেকবার নিষেধ করার পরও আমি প্রায় জেদ ধরে দোকানে চলে আসলাম একা একা।
যা যা লাগবে তা সকল কিনে ফেললাম।
কেনো জানি আজকাল পলাশ আসার পর থেকে আমার কাছে সবকিছু অন্যরকম লাগে।
মনে হয় আমি অন্য জগতের বাসিন্দা।
.
—– রাত ১১ টা—–
.
পলাশ আর আমি বারান্দায় বসে বসে গল্প করছি।
পলাশের কথাগুলো সব অদ্ভূত অদ্ভূত।
সে নাকি আমাদের দৃষ্টিগোচরের বাইরেও অনেক কিছু দেখতে পায়।
যেমন এখন সে আমাকে একটা গল্প বলছে যেখানে মানুষ অমর থাকে কিন্তু তারা জন্ম নিতে পারেনা তাই তারা মৃত।
তার এইসকল কথাগুলোর কোনো মানে খুজে পাইনা আমি।
পলাশ বললো,
-” আচ্ছা, তুমি আমাকে ভালোবেসে কত কাল থাকতে পারবে?”
-” সারাজীবন।”
-” আচ্ছা আমাদের যদি একলা একটা দ্বিপে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে ১০০ বছর কাটানোর পরও কি আমাদের ভালোবাসা একই থাকবে?”
আমি কিছু বললাম না।
পলাশ আবারো বললো,
-” পৃথিবীতে ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই। সবই সাময়িক মোহ। একসাথে থাকতে থাকতে যখন বিপরীত শরীরের প্রতি আর যৌন আকর্ষন আগের মত কাজ করবে না তখন ভালোবাসা বাতাসের মত হাল্কা হয়ে যাবে। তখন থেকে যাবে শুধু সম্পর্কের বন্ধন। যেটা থেকে মৃত্যুই মুক্তি দেয়।”
এইরকম অনেক কথা বলার পর আমি আর পলাশ শুয়ে পড়লাম।
.
—– মাঝরাত —–
.
একটা তরল জাতীয় কিছু আমার মুখে পড়ার কারনে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
চোখ খুলে দেখলাম পলাশ ফ্যানের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আছে।
তার জিবটা বের হয়ে আছে, চোখগুলো অনেক বড় আকার ধারন করেছে।
তার পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন। মাথা থেতলে আছে। সেখান থেকে রক্ত পড়ছিলো আমার মুখে।
আমি একটা বিকট চিৎকার দিলাম।
———————-
অদ্রির চিৎকারের আওয়াজ শুনে তার বাবা-মা তার রুমের দরজা ভেঙ্গে যখন ভিতরে ঢুকলো তখন তারা দেখলো তাদের মেয়ে খাটে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে।
পুরো রুমটাই স্বাভাবিক ছিলো।
সেখানে ফাসিতে ঝোলানো রক্তাক্ত লাশতো দূরের কথা কোনো ছেলের চিহ্নমাত্র ছিলোনা।
.
তাহলে কি ছিলো সেখানে??
.
.
চলবে

পরের পর্বটা শেষ পর্ব।

.
“অন্য দুনিয়া”
পর্বঃ-১
.
লেখাঃ-Neel_Mahmud
.

(বিদ্রঃ ভালো সাড়া পেলে শেষ পর্ব রাতে পোস্ট করে দিব ,অার যদি দেখি অাপনাদের তেমন রেসপন্স নেই তাহলে পোস্ট ডিলেট করে দিব)


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content