রাজনীতি

ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদকের আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস!

  প্রতিনিধি ২০ জুন ২০২৩ , ১১:২৩:০০

শেয়ার করুন

ওলামা লীগের সদ্য নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল্লামা আমিনুল ইসলামের আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অ্যাপসে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দল ও দলের বাইরে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ নানা বিষয় নিয়ে বিতর্কের মাঝে এই আপত্তিকর ভিডিওটি যোগ করল নতুন মাত্রা।

 

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি হোটেল কক্ষে গানের তালে তালে এক রমণী নৃত্যরত আর ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ঠিক তার সামনের সোফায় বসে সেই রমণীর নৃত্য উপভোগ করছেন। ঘটনার প্রমাণ হিসেবে ভিডিওটি কালবেলা প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ভিডিওতে তিনি আছেন তা স্বীকার করে নিয়ে সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম দৈনিক হককে বলেন, আমার পরিবারে অন্তত ২৫ জন আলেম আছেন, দুটি মাদ্রাসা পরিচালনা করি। আমি চকবাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ভিডিওটি খেয়াল করে দেখলে বুঝবেন সেখানে একজন বলছে ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এই ভিডিওটি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমাকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাব।

জানা গেছে, তাবলিগ জামায়াতের এই নেতা প্রায়ই ব্যবসার কাজে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ বারের অধিক বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এ ঘটনাটিও দেশের বাইরের কোনো হোটেলের।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আমিনুলকে বাদ দেওয়াসহ বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবিতে প্রেস ক্লাবের সামনে শনিবার (১৭ জুন) মানববন্ধন করেছে দলের পদ প্রত্যাখ্যান করা নেতাসহ অনেকে।

মানববন্ধনে তারা বলেন, রাতের আঁধারে ফেসবুকের মাধ্যমে ওলামা লীগের যে বিতর্কিত কমিটি প্রকাশিত হয়েছে তাতে ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যারা রাজপথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে কাজ করে আসছে তাদের অনেককেই বাদ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে যারা নির্যাতিত-নিপীড়িত ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছে তাদের মূল্যায়িত করা হয়নি। এমনও লোককে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে যারা কোনোদিনই ওলামা লীগ করেনি। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যার নাম এসেছে কে সে আমিনুল হক? ওলামা লীগের নেতারা কেউ তাকে চিনে না। পরবর্তীতে আমরা জানতে পারলাম আমিনুল হক পাবনা থেকে আগত এবং ওলামা লীগে একজন অনুপ্রবেশকারী মূর্খ। তাদের কাছে আওয়ামী ওলামা লীগ নিরাপদ নয়। সে জামায়াত-বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বহু টাকার বিনিময়ে সাধারণ সম্পাদকের পদ ছিনিয়ে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নীলনকশার বিতর্কিত ওলামা লীগের এই কমিটি বাতিলের জন্য জোর দাবি করছি। পাশাপাশি রাজপথের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি চাই।

নেতারা আরও বলেন, বিতর্কিত কমিটিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনুমোদন দিয়েছেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। কমিটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন কিনা তাও স্পষ্ট নয়। সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় কমিটি প্রকাশিত না হওয়ায় এই সন্দেহের জন্ম হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) গভীর রাতে ওলামা লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। যদিও ২৮ সদস্যের সদ্য ঘোষিত কমিটির ১৬ জনই যৌথ বিবৃতিতে পদ প্রাপ্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। গত ২০ মে ওলামা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কমিটি ঘোষণা না হলেও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা কে এম আবদুল মমিন সিরাজীকে সভাপতি, মাওলানা সাগর আহমেদ শাহীনকে কার্যকরী সভাপতি ও আমিনুল হককে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপরই রাজনৈতিক মহল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু সমালোচনা। ওলামা লীগের সঙ্গে জড়িতদের অভিযোগ ২৮ সদস্যবিশিষ্ট ওলামা লীগের প্রকাশিত কমিটির অনেককেই তারা চেনেন না। যারা কদিন আগেও ওলামা লীগের নাম শুনতে পারতেন না, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেওয়ার ইঙ্গিত পেয়েই অর্থের বিনিময়ে তাদের দলে জায়গা দেওয়া হয়েছে। মমিন সিরাজী ওলামা লীগের সভাপতি হবেন না এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও সভাপতি পদে আসীন হওয়ায় তাকে নিয়ে চলছে বিতর্ক। আর সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ওলামা লীগের কেউ নয় এমনকি মাদ্রাসায় লেখাপড়াও করেনি এমন অভিযোগ ওলামা লীগের নেতাদের।

জানা গেছে, ওলামা লীগের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক না থাকার কথা কয়েক বছর ধরেই জোরালোভাবে বলে আসছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে সেই পরিস্থিতি হঠাৎই পাল্টে যায়। ওলামা লীগের বিষয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সংগঠনটির সম্মেলনেও অংশ নেন। এমনকি ওলামা লীগকে সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেয় ক্ষমতাসীন দলটি। সংগঠনটি বিভিন্ন সময় নারীনীতি ও শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য, পহেলা বৈশাখ ইসলামবিরোধী আখ্যা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল। এ ধরনের বিভিন্ন ঘটনা আওয়ামী লীগকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। এমনকি ২০১৮ সালে বিবৃতি দিয়ে ওলামা লীগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকার কথা জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

 


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content