সারাদেশ

কারওয়ান বাজারের মার্কেট যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে-

  প্রতিনিধি ৮ জুন ২০২৩ , ১১:৩৯:৫৯

শেয়ার করুন

ঝুঁকিপূর্ণ কারওয়ান বাজারের মার্কেট যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। মার্কেট ধসে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনার দায়িত্ব কে নেবে। ক্রেতা-বিক্রেতার জানমালের নিরাপত্তা স্মার্ট বাংলাদেশে নিশ্চিত করতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের লক্ষ্যে কারওয়ান বাজারস্থ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তৃতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশের রাজধানীর মাঝখানে এমন পচনশীল পণ্যের পাইকারি কাঁচাবাজার নেই। স্মার্ট বাংলাদেশে ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে পাইকারি কাঁচাবাজার থাকতে পারে না। কারওয়ান বাজারে কোনো কাঁচাবাজার থাকবে না। উন্নত দেশের পাইকারি মার্কেটগুলো পরিদর্শন করেছি। পর্যাপ্ত খালি জায়গাসহ সকল সুবিধা নিশ্চিত করে মার্কেটের ডিজাইন করা হবে।

সবার সাথে আলোচনা করেই কারওয়ান বাজার মার্কেটটি স্থানান্তর করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগারো সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে দিচ্ছি। স্থানীয় তিনজন কাউন্সিলর, কারওয়ান বাজারের সুপার মার্কেট ও কাঁচাবাজার মার্কেটের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও ডিএনসিসির কর্মকর্তার সমন্বয়ে এই কমিটি গঠিত হবে। পনেরো দিনের মধ্যে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।

আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট স্থানান্তরের চিঠি পাওয়ার পরেই অত্র এলাকার কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দিয়েছি ব্যবসায়ীদের আলাপ আলোচনা করতে। আমি কৃষিমন্ত্রীর সাথেও আলোচনা করেছি গাবতলী কাঁচাবাজারে যাওয়া আসার রাস্তা নির্মাণের জন্য বিএডিসির জায়গা প্রয়োজন। কৃষিমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন রাস্তার জন্য বিএডিসির জায়গা দেবেন। মার্কেট স্থানান্তর হলে নতুন মার্কেটে সমপরিমাণ জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এর জন্য নতুন করে কোনো টাকা দিতে হবে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এমন সিদ্বান্ত আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি কথা দিচ্ছি ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য কারওয়ান বাজারের চেয়ে বহুগুণ সুবিধা সম্বলিত নিরাপদ আধুনিক মার্কেট নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

মেয়র বলেন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি ডিএনসিসির আটটি মার্কেটকে ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। আমাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারাই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে তড়িৎ গতিতে ঝুঁকি মার্কেট স্থানান্তর করার। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে কারওয়ান বাজার সরানোর জন্য যাত্রাবাড়ী, গাবতলী ও মহাখালীতে মার্কেট নির্মাণ করা হয়। এটি একনেকে পাশ হওয়া প্রকল্পের আলোকে হয়েছে। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনেই একনেকে পাশ হয়ে এটি বাস্তবায়ন করা হয়। অতএব, এটি কারো মনগড়া কথা নয়।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রায় ছয় মাস আগে পার্লামেন্টে বলেছেন পদ্মা সেতু হয়ে গেছে অতএব দক্ষিণের জেলাগুলো থেকে আসা পণ্য ঢাকা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে থাকবে। আর বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে আসা পণ্য ঢাকার উত্তর প্রান্তে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা আমাদের জন্য অনুশাসন। সেই আলোকেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই, বাস্তবায়ন করি। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব।

‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্বান্তেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেছেন ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট স্থানান্তরে ব্যবস্থা নিতে হবে’ উল্লেখ করে মেয়র আতিকুল বলেন, বিভিন্ন মার্কেটে ভবন ধসে পড়ছে। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার পুনরায় চিঠি দিয়েছে আটটি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ইমিডিয়েটলি সরিয়ে নিতে হবে। তাই আমরা মার্কেটগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ লিখে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই সাইনবোর্ডও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, কারওয়ান বাজার একটি ঐতিহ্যবাহী পাইকারি বাজার। প্রকৌশলীরা এই বাজারের কয়েকটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশন বলেছেন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো থেকে ব্যবসায়ীদের অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সাইনবোর্ডও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারওয়ান বাজারের পাশ দিয়ে মেট্রোরেল হচ্ছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। একসময় হয়তো কারওয়ান বাজারের রাস্তায় ট্রাক চলবে না। ব্যবসায়ীদের এটি আগে থেকেই বিবেচনা করতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কাউকে জোর করে, ব্যবসা বন্ধ করে, রুটি রোজগার বন্ধ করে আমরা স্থানান্তর করব না। আপনাদের জন্য বিকল্প ভালো ব্যবস্থা করেই স্থানান্তর করা হবে। আরও আধুনিক সুন্দর মার্কেট নির্মাণ করে স্থানান্তর করা হবে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই সিদ্বান্ত নেওয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিকল্প ব্যবস্থা দ্রুতই করতে হবে। আমরা কেউই চাই না আত্মহুতি দিতে। সবাই মিলেমিশে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশা করি উইন উইন পজিশন নিশ্চিত করে কারওয়ান বাজারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি মানুষ যেন আত্মমর্যাদা নিয়ে জীবন যাপন করতে পারে সে লক্ষ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশ পরিচালনা করছেন। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা কেউই পরিকল্পনার বাহিরে নয়। কারওয়ান বাজারের পাইকারি মার্কেট স্থানান্তর একটি জটিল সমস্যা। সবার সহযোগিতায় এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আরও বলেন, মার্কেট স্থানান্তরে অনেকের জীবন জীবিকার বিষয় জড়িত। কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে। পৃথিবীর সকল দেশের উন্নয়নে ডেস্ট্রাকশন কনস্ট্রাকশন হয়েছে। কাউকে রিজিড হওয়া যাবে না। কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে চিন্তা না করে একপক্ষ হিসেবে চিন্তা করতে হবে।

ডিএনসিসির অঞ্চল-০৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন— ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সফিউল্লা, ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মঞ্জুর, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হাসান, সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মিতু আক্তার প্রমুখ।

 


শেয়ার করুন