নির্বাচন

খুলনা ও বরিশালে আজ ভোট যুদ্ধ

  প্রতিনিধি ১১ জুন ২০২৩ , ১০:০৯:০০

শেয়ার করুন

খুলনা-বরিশাল সিটি করপোরেশনে ভোটযুদ্ধ আজ। জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের আরেকটি পরীক্ষা হচ্ছে এই ভোটে। যদিও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এই নির্বাচন বর্জন করেছে। তাই তাদের কোনো প্রার্থী নেই নির্বাচনে। এ কারণে মেয়র পদে অনেকটাই নিরুত্তাপ ভোট হচ্ছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই মূলত লড়ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে। গাজীপুর সিটি ভোটের পর এই নির্বাচনে বড় পরীক্ষায় নির্বাচন কমিশন। তারা বলছে, গাজীপুরের চেয়েও ভালো ভোট হবে খুলনা এবং বরিশালে।

সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সবগুলো কেন্দ্রেই ব্যবহার করা হবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ক্যামেরার মাধ্যমে সরাসরি মনিটরিং করবেন নির্বাচন কমিশনাররা।

খুলনায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় পাল্লা ভারী নৌকার মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের দিকে। যদিও বিএনপি সমর্থক ভোটারদের ভোট কোনদিকে যাবে তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে। ওদিকে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র পদপ্রার্থী মাওলানা আব্দুল আউয়াল। আশাবাদ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির ‍খুলনা জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধুও। ২০১৩ সালে মেয়র পদে নির্বাচন করে মাত্র হাজার তিনেক ভোট পাওয়া এই প্রার্থী বলছেন, বিএনপি মাঠে না থাকায় তাদের সমর্থকদের একটা অংশ আমাকে ভোট দেবেন বলে বিশ্বাস করি।
এদিকে বরিশালের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চমক হিসেবে এসেছেন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর চাচা খোকন সেরনিয়াবাতের সঙ্গে তাদের পারিবারিক বিরোধ স্পষ্ট। সেই বিরোধের রেশ সমর্থক শিবিরেও বিভক্তি টেনেছে। ফলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের এক করে বর্তমান মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করাতে দৃশ্যপটে শক্ত অবস্থান নিতে হয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে। আবার বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী মো. কামরুল আহসান রুপনও জয়ী হবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলছেন, বরিশালের মানুষ বিশ্বাস করে একটি বিপ্লবের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন হবে। সেই বিশ্বাস রেখেই আমাকে ভোট দেবে। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমও। বুঝে-শুনে চিন্তা-ভাবনা করে ভোট দিতে তিনি ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ওদিকে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতায় কোনো কমতি রাখেনি নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে শনিবার মধ্যরাত থেকেই যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পাশাপাশি দুই মহানগরী এলাকায় বহিরাগতদের না থাকার ঘোষণাও দিয়েছে প্রশাসন। নির্বাচনে কেউ কোনো অনিয়ম করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দুই সিটির দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান।

গতকাল তিনি গণমাধ্যমকে জানান, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনে বিধি-বিধান প্রতিপালনে আমাদের অবস্থান কঠোর ছিল। খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রতিটি পদক্ষেপেই আমরা তীক্ষè নজর রাখছি। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। ভোটের দিন আমরা সরাসরি সিসি ক্যামেরায় এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবো। আহসান হাবিব আরও জানান, নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগসহ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে প্রশাসন, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা আমাদের নির্দেশনা শতভাগ পালনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। আমাদের বার্তা স্পষ্ট ছিল- আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করেছি। একইসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ধরনের ছাড় দেইনি। নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধের জন্য চেকপোস্ট করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন গাজীপুরের নির্বাচনের চেয়েও ভালো হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে অতীতের চেয়েও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা বরিশাল নগরী: নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে বরিশাল সিটিকে। চলছে মোড়ে মোড়ে তল্লাশি। মোটরসাইকেল দেখলেই করা হচ্ছে আটক। সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই করা হচ্ছে তল্লাশি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে গেছে কেন্দ্রগুলোতে। গতকাল সকাল থেকেই কেন্দ্রে কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। সব ধরনের প্রচারণাও বন্ধ রয়েছে। বরিশাল সিটিতে ১২৬টি কেন্দ্রে মোতায়েন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। প্রতিটি কেন্দ্রই প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। সাড়ে ৪ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম। প্রতিটি কেন্দ্রের সামনেই রয়েছে আনসার পুলিশ। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি কেন্দ্রে ১২ জন করে আনসার সদস্য মিলিয়ে ১ হাজার ৫১২ জন আনসার সদস্য কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া র‌্যাবের ১৬টি টিম স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেব মাঠে কাজ করছে। পাশাপাশি ১০ প্লাটুন বিজিবি, ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

নগরজুড়ে টহল দিচ্ছে স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে মেবাইল কোর্ট। হোটেলগুলোতে চেক করা হচ্ছে বহিরাগত আছে কিনা। বরিশাল সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন এবং নারী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। এই সিটিতে নির্বাচনে ৭ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া ৩০টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১০টি পদের বিপরীতে ৪২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।

খুলনা সিটির সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন: এদিকে খুলনা সিটিতে ভোটের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে শনিবার মধ্যরাত থেকেই এই সিটিতে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পাশাপাশি মহানগরী এলাকায় বহিরাগতদের না থাকার ঘোষণাও দিয়েছে প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৮ জন। নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রে তারা ভোট প্রদান করবেন। ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সহজ করতে এসব কেন্দ্রে ১ হাজার ৭৩২টি বুথ স্থাপন করা হচ্ছে। ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ২৮৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১ হাজার ৭৩২ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ৩ হাজার ৪৬৪ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।
কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থী হয়েছেন।

তারা হলেন- আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক, জাপার শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল আউয়াল, স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক ও জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন নির্বাচন করছেন। সিটি করপোরেশনে ৩১টি ওয়ার্ড রয়েছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে ১০টি। ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দু’জন বিজয়ী হয়েছেন। ২৯টি ওয়ার্ডে শুধু কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৫ জন। নির্বাচনী এলাকায় ১১ই জুন দিবাগত রাত ১২টা থেকে পরদিন ১২ই জুন দিনগত রাত ১২টা পর্যন্ত ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপভ্যান, কার এবং ইজিবাইক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। উল্লিখিত নিষেধাজ্ঞা রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনী এজেন্টের ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য।

তাছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং কতিপয় জরুরি সেবা যেমন: এম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য যান চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content