রাজনীতি

নির্বাচন হবে জাতীয় সরকারের অধীনে-ইসলামী আন্দোলন

  প্রতিনিধি ২১ জুন ২০২৩ , ৯:০৯:০৪

শেয়ার করুন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুস্থ নন। দেশের মানুষ তাকে সুস্থ মনে করেন না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতি ফয়জুল করিমকে উদ্দেশ্য করে সিইসি বলেছেন, তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন নাকি। এটি বলার মাধ্যমে প্রমাণিত সিইসি অসুস্থ। তাই অসুস্থ কেউ নির্বাচন কমিশনের প্রধান হতে পারেন না।

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, এ সিইসিকে পদত্যাগ করতেই হবে। যদি না করেন, তবে পদত্যাগে যা যা করা দরকার, তা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করা হবে। আওয়ামী লীগকে নতুন করে সরকার গঠন ও দেশ পরিচালনা আর করতে দেওয়া হবে না। এটা আর কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না।

বুধবার (২১ জুন) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ ও নির্বাচন কমিশনকে ব্যর্থ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবিতে বায়তুল মোকাররম থেকে গণমিছিল শুরুর আগে বিক্ষোভ সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

 

দুঃখ প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, সিটি নির্বাচনে সরকার, আওয়ামী লীগ ও পুলিশ মিলে ভোট কারচুপি করল। এতে কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। বর্তমান সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর সরকার হতে পারে না। এ সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে আমাদেরই সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৭০-এর নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান যখন নির্বাচিত হলেন, তখন আইয়ুব খান নির্বাচনী ফলাফল মানেননি। শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি। শেখ মুজিবকে ক্ষমতায় বসাতে জনগণ কিন্তু আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলেন, জীবন দিয়েছিলেন। সেই আওয়ামী লীগ সেই নীতি-আদর্শে আর নেই। আওয়ামী লীগকে নতুন করে সরকার গঠন ও দেশ পরিচালনা আর করতে দেওয়া হবে না। এটা হতে দেওয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, সরকার পরিবর্তনে আমরা নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার দাবি করেছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও নির্দলীয় সরকারের দাবি করছে। দলীয় সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, সেটা এখন সবাই বলছেন যা প্রমাণিতও।

আজ দেশের অবস্থা ভয়াবহ দাবি করে মুফতী বলেন, দেশের মানুষ কিন্তু অশান্তির আগুনে সর্বত্র দাউদাউ করে জ্বলছেন। জনগণ তো কারেন্টের বিল বকেয়া রাখেননি। তাহলে সেই টাকা কোথায় গেল? আমরা দেখি সরকার ও তার সন্ত্রাসীরা জনগণের ঘাম ঝরানো টাকা বিদেশে পাচার করছেন।

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে মুফতী আরও বলেন, আপনারা জনগণের জন্য, সরকারের নন। দলীয় সরকার বা দলীয়করণের জন্য দায়িত্ব নেননি। বাংলাদেশের মানুষের শান্তির জন্য আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন। আসেন দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের কল্যাণের স্বার্থে কাজ করি, আপনাদের প্রতি সেই ভূমিকা পালনের আমাদের আহ্বান।

দেশে যে রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে আমরা সবাই একত্রিত হই। সিইসির বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ি। সিইসি পদত্যাগ না করলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।

আরও পড়ুন > >> ইসলামী আন্দোলনের গণমিছিল আটকে দিলো পুলিশ

বিক্ষোভ সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি বলেন, সিটি নির্বাচনের নামে নাটক মঞ্চস্থ চলছে। এ নাটক আর চলতে পারে না। সিইসি তো অসুস্থ সেটা তো বাদই। বাস্তবতা বিবর্জিত কথাবার্তা বলছেন হাসিনা ও তার মন্ত্রীরাও। বাস্তবতা বিবর্জিত এ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।

মেশিনে দেশ চালাতে চায় সরকার। সেটি হবে না। হাসিনা তোমার অধীনে জনগণ নির্বাচন চায় না। জাতীয় সরকার নির্বাচনের দাবি এখন সবার। জাতীয় ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, মিথ্যে বলা, মিথ্যে ওয়াদা ও তা ভঙ্গ করা অপরাধ, যেটি সরকার করছে। এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে ইসির যোগ্যতা যাচাই করা হলো। আগে ভোট ডাকাতি রাতে করেছে আওয়ামী লীগ, এখন দিনেই করছে। মানুষ চুরি করে অভাবে। সরকার ভোট চুরি করছে অভাবে, কারণ তাদের ভোটের অভাব।

 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল হুদা ফয়েজি বলেন, আর কোনো সময় নেই। পদত্যাগ করুন, যত দেরি করবেন, তত দেরি হবে। এ ইসির অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। রাজপথে আমরা প্রস্তুত আছি।

প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ইসি, সন্ত্রাসীদের উস্কানিদাতা সিইসি, তিনি মিথ্যে কথা বলেন, তিনি এসি রুমে বসে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণের জন্য কলঙ্ক এ নির্বাচন কমিশন।

তিনি বলেন, চুরি করে, ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় যাওয়া অপরাধ। মানুষের সঙ্গে আর প্রতারণা করবেন না। আওয়ামী লীগ এখন আজাবে পরিণত হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউর রহমান বলেন, গণবিচ্ছিন্ন সরকার আমাদের ওপর চেপে বসেছে। ১২ জুনের নির্বাচন পুরো বিশ্ব দেখেছে। কিভাবে ভোট কারচুপি, হামলা, আলেমের শরীর থেকে রক্ত ঝরানো হয়েছে। সিইসি সাংবাদিকদের সামনে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন।

সিইসিকে অসুস্থ দাবি করে তিনি বলেন, তারমধ্যে সুস্থ বিবেক-বিবেচনা নেই। তিনি সুস্থ নন, সুস্থ হলে এমন কথা বলা সম্ভব না, যে তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন নাকি! আমরা বুঝতে পারলাম এ নির্বাচন কমিশন ও সিইসি অভিশাপের নাম। যারা নির্বাচন চায় না তারাই এ অভিশাপ কায়েম করেছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ নির্বাচন চায় না। কারণ যে লুটপাট, দুর্নীতি তারা করেছে, জনগণ আর তাদের সঙ্গে আর নেই। নির্বাচন হলে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। সেজন্য তারা নির্বাচনই চায় না।

তিনি বলেন, দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ প্রত্যকেটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। দেশকে রক্ষা করতে হলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। ব্যর্থ কমিশনে অথর্বদের নিয়োগ করা হয়েছে। ১২ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেন্টার দখল করা হয়েছে, নায়েবে আমীর মুফতি ফয়জুল করীমের ওপর হামলা করা হয়েছে। এরপর সিইসি যা বলেছেন তা বিশ্বজুড়ে নিন্দিত বক্তব্যে পরিণত হয়েছে। আজ হোক বা কাল হোক হামলাকারীদের বিচার হবেই। সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে বাঁকা করা হবে। তবুও এ ব্যর্থ কমিশনকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াজ বলেন, ১৯৭১ সালে মানুষ সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে রক্ত দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। অথচ আমরা আজ কি দেখছি, দেশ-জনগণের স্বার্থকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে কোমর ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনে সরকার সিইসি হিসেবে এমন একজন ব্যক্তিকে বসানো হয়েছে যিনি সরকারের তল্পিবাহকে পরিণত হয়েছে। কোনো মেরুদণ্ডহীন ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনে দেখতে চাই না।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগ আজ সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। যেখানেই সন্ত্রাস, ধর্ষণ সেখানেই ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসগুলোতে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে রক্তের বদলা না নেওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ার সুযোগ নেই।

ইসলামী যুব আন্দোলনের সেক্রেটারি মাওলানা মনসুর আহমেদ আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধ সরকার দাবি করে বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে ইসি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এ ব্যর্থ কমিশনকে আমরা আর দেখতে চাই না।

ইসলামি আইনজীবী পরিষদের জয়েন সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খালিদ মিয়া বলেন, পাকিস্তান সরকারও উন্নয়নের কথা বলেছিল। কিন্তু নির্বাচিত দলকে ক্ষমতা দেয়নি। বর্তমান সরকারও ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে উন্নয়নের বুলি আওড়াচ্ছে। বিএনপি সরকারও তাই করেছে। এরশাদ, বিএনপির পতনেও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি পূরণ হয়নি। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content