প্রতিনিধি ১৭ জুন ২০২৩ , ১১:৫০:৫০
ইসলাম ধর্মে মানবতার কল্যাণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। ইসলামের মৌলিক বাণীই হল শান্তি, সম্প্রীতি ও অপরের কল্যাণ কামনা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে (সুরা আল ইমরান ৩: ১১০)।
মানবতার নবী ও বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার উম্মতকে সদা এই নির্দেশই দিয়েছেন তারা যেন ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার সঙ্গে উত্তম আচরণ করে।
ইসলাম সত্যের ধর্ম, আবার সহিষ্ণুতারও ধর্ম। ইসলাম চায় মানুষ তাকে গ্রহণ করুক, তাকে অনুসরণ করুক; কিন্তু এর জন্য কাউকে জোরাজোরি নয় বরং যুক্তি-বুদ্ধি ও মহানুভবতার আশ্রয় নেয় ইসলাম।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আমরা বুঝতে পারি। মূর্তিপূজা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কোনও দেবদেবীর উপাসনা-আরাধনা তো দূরের কথা, সেসবের অস্তিত্বও ইসলাম স্বীকার করে না; অথচ সে ইসলামই আবার অন্য ধর্মের উপাস্য বা দেবদেবীকে গালাগাল বা নিন্দা করতে নিষেধ করেছে।
আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যেসব উপাস্যকে ডাকে, তোমরা তাদের গালি দিও না (সূরা আনআম ৬: ১০৮)। এ থেকেই স্পষ্ট যে, কোনও মানুষ তো দূরের কথা, বিধর্মীদের মূর্তি বা উপাস্যদের ব্যাপারে কোনও বাজে মন্তব্য না করা একজন মুসলমানের ধর্মীয় কর্তব্য।
সাধারণত রাগান্বিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দেখার সঙ্গে সঙ্গেই সবচেয়ে নম্র-ভদ্র লোকটির মুখ থেকেও বেরিয়ে আসতে পারে গালি। কিন্তু নবীজি (সা.) এ ক্ষেত্রে কত সহনশীল ছিলেন তা একটি ঘটনা থেকেই আমরা বুঝতে পারি।
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার এক বেদুঈন মসজিদে পেশাব করলো। লোকেরা উঠে (তাকে মারার জন্য) তার দিকে গেল। মহানবী (সা.) বললেন, তার পেশাব বন্ধ করো না। তারপর তিনি (সা.) এক বালাতি পানি আনলেন এবং পানি পেশাবের ওপর ঢেলে দেয়া হলো।’ (সহিহ বোখারি, কিতাবুল আদব)।
আমরা সাধারণত নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু দেখলেই মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বসি। অশালীন ভাষা ব্যবহার করি। এ ধরনের কাজ একজন মুমিনের জন্য কখনও শোভা পায় না।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে। (সুরা আহযাব, আয়াত: ৫৮)
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, মুমিন কখনও দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালাগালকারী হয় না। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৪৩)।
আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি [আল্লাহর অবাধ্যাচরণ] এবং তার সঙ্গে লড়াই ঝগড়া করা কুফরি।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৬০৪৫, ৭০৭৬)।
আজকাল গালিগালাজ অনেকের কাছে একটি ফ্যাশনও হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধীনস্ত বা নিম্ন আয়ের লোকজনের সঙ্গে স্বাভাবিক কথা বলার সময়ও সঙ্গে কিছু অশালীন গালি জুড়ে দেয়। অথচ এটি যে ইসলামের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ সেটি আমরা মনে রাখি না।
এছাড়া সোশাল মিডিয়াতেও প্রতিপক্ষ বা অপছন্দের মানুষদের গালি দেওয়া এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, কবিরা গুনাহগুলোর একটি হলো নিজের মা-বাবাকে অভিশাপ করা। জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর রাসুল! মানুষ নিজের মা-বাবাকে কীভাবে অভিশাপ করে? তিনি বললেন, ‘যখন সে অন্যের বাবাকে গালাগাল করে, তখন সে নিজের বাবাকেও গালাগাল করে থাকে। আর যে অন্যের মাকে গালি দেয়, বিনিময়ে সে তার মাকেও গালি দেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৭৩)।
ইসলাম বিশ্বময় চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মানবভ্রাতৃত্ব তথা বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ইসলাম মানবীয় ভ্রাতৃত্বের এমন এক অনুপম ধারণা পেশ করেছে যা অতুলনীয়। ইসলামি আদর্শে গালমন্দ, অশ্লীল কথা ও কটূবাক্যের স্থান নেই। তাই একজন প্রকৃত মুসলমান হিসেবে আমাদের সব ধরনের গালাগালি, কটুক্তি ও অপরজন কষ্ট পায় এমন আচরণ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে। তবেই আমরা নিজেদের আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হিসেবে দাবি করতে পারবো।