নির্বাচন

সিলেট, রাজশাহীতে ভোট আজ

  প্রতিনিধি ২০ জুন ২০২৩ , ১০:৩৩:৩০

শেয়ার করুন

সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন আজ। জাতীয় নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যদিও প্রধান বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এমনকি নির্বাচনে অংশ নেয়া একটি দল এই দুই সিটিতে তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলেও নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, বরিশালে ভোটের মাঠে মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা অনেকটা ভাবিয়ে তুলছে ইসিকে। পাশাপাশি সেখানে ভোটের পরও পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। যে কারণে সিলেট ও রাজশাহীতেও কোনোভাবে যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটতে পারে, সেজন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোটের আগে ও পরে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, সেজন্য মাঠে ২৪ জন ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারা মোট ৫ দিন মাঠে থাকবেন।

নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেছেন, ভোটের আগে, ভোটের দিন এবং পরে অনিয়ম, গোলযোগ ও সহিংসতা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আচরণবিধি প্রতিপালনে স্থানীয়ভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

 

আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান, সব দলও সমান। ভোটারদের নির্বিঘœ পরিবেশ তৈরিতে আমরা বদ্ধপরিকর।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনের কাঠামোয় যা যা দরকার তার সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রয়োজন ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহিংসতা ও অনিয়ম প্রতিরোধে নিয়োজিত থাকবেন। তিনি বলেন, প্রিজাইডিং অফিসাররা যে কোনো পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ ও কঠোর অবস্থানে থাকবেন। অর্পিত দায়িত্ব পালনে কেউ অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে অন্য নির্বাচনের মতো এই দুই সিটির ভোটও সরাসরি সিসি ক্যামেরায় ঢাকা থেকে পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংস্থাটি বলেছে, নির্বাচন-পূর্ব, ভোটের দিন ও নির্বাচনোত্তর অনিয়ম, গোলযোগ ও সহিংসতা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই সিটি করপোরেশনের ১৫৫টির মধ্যে ১৪৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে ৭টি কেন্দ্রকে অতি গুরুত্বপূর্ণ (অতি ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে সিলেটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুত করা তালিকা অনুযায়ী এখানকার ১৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ)। এরমধ্যে ১৮টি ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৫৮টি কেন্দ্র সাধারণ (ঝুঁকিমুক্ত) বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ভোট তথ্য: ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সিলেট মহানগরীতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৬ জন। অন্যদিকে রাজশাহীতে এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন। আর নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর ভোটার ৬ জন। সবমিলিয়ে এই সিটিতে এবার নতুন ভোটার রয়েছেন ৩০ হাজার ১৫৭ জন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি: দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটের দিনে সব জায়গায় নিছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এসএমপি কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরিফ বলেছেন, নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে একজন পুলিশ পরিদর্শক, উপ-পুলিশ পরিদর্শক একজন ও পাঁচজন পুলিশ সদস্য এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডে একজন পুলিশ পরিদর্শক, একজন উপ-পুলিশ পরিদর্শক ও চারজন পুলিশ সদস্য এবং সাতজন নারী ও সাতজন পুরুষসহ মোট ১৪ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি জানান, নির্বাচন উপলক্ষে প্রতি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে পুলিশের ৪২টি মোবাইল টিম, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে ১৪টি স্ট্র্রাইকিং টিম এবং প্রতি থানায় একটি করে ছয়টি ও ছয়টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং টিম থাকবে। পাশাপাশি থাকবে দু’টি ওয়ার্ডে একটি করে র‌্যাবের মোট ২২টি ও পাঁচটি ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে মোট ১০ প্লাটুন বিজিবি’র টহল। এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ে আরএমপি’র কমিশনার জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নগরীর প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সেই সঙ্গে থাকবে গোয়েন্দা নজরদারিও।

 

রিপোর্টার, সিলেট থেকে জানান, মইয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্র। এক সপ্তাহ ধরে এই কেন্দ্রে পানি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি কমছে না। নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও নেই। নগরের নতুন অন্তর্ভুক্ত ৩৯ ওয়ার্ডের এই কেন্দ্রে এবার প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন ভোটাররা। কেন্দ্রে পানি থাকায় ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। প্রার্থীরা এ নিয়ে চিন্তায়। গতকাল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা প্রার্থীরা জানিয়েছেন, পানি থাকার কারণে ভোটারদের দাঁড়ানোর ব্যবস্থা নেই। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক মকসুদ আহমদ জানিয়েছেন, এ কেন্দ্রে গত এক সপ্তাহ ধরে জলাবদ্ধ। তবে- ভোটে তেমন প্রভাব পড়বে না। পাশের রাস্তায় ভোটাররা দাঁড়াতে পারবেন বলে জানান তিনি। সিলেটের ২৫ নং ওয়ার্ডের নসিবা খাতুন স্কুলের ভোটকেন্দ্রে পানি ছিল। সেটি গতকাল সকালে নেমে গেছে। রাতে বৃষ্টি হলে এ কেন্দ্রের ভেতরেও পানি উঠতে পারে। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন আজ। গত ৬ দিন সিলেটে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল।

৬ দিনে গড়ে প্রতিদিন ১২০-১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভোটের দিনও বৃষ্টি থাকবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এতে জলাবদ্ধ হতে পারে নগরী। ভোটকেন্দ্রও জলাবদ্ধতার বাইরে থাকবে না। সিলেটের পুরাতন ২৭টি ওয়ার্ডে এবার জলাবদ্ধতার পানি স্থায়ী হচ্ছে না। ভারী বর্ষণ হলে এসব কেন্দ্রে জলাবদ্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রার্থীরা। ২৪ নং ওয়ার্ডের তেররতনের কেন্দ্র, ১০ নং ওয়ার্ড, ১২ নং ওয়ার্ড, ১৫ নং ওয়ার্ডসহ নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া ৩৭, ৩৮ নং ওয়ার্ডে সুরমা নদীর পানি উপচে পড়ে কয়েকটি কেন্দ্র ডোবার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিপজ্জনক পরিমাপের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটে সুরমার পানি এখনো বিপদসীমার নিচে রয়েছে। রাতে ভারী বর্ষণ এবং উজানের ঢল নামলে পানি বাড়তে পারে। এখন বিপদসীমার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে উজানের ঢল। সিলেটের উজানে ভারতের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি বাড়ছে সিলেটে। এ কারণে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা এবং ঢল নামলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এতে সুরমা নদীর তীরবর্তী ১৫-১৬ ওয়ার্ডের অনেক কেন্দ্রেই ঢুকতে পারে বন্যার পানি।

যদি ভোটকেন্দ্রে বন্যার পানি কিংবা জলাবদ্ধতার পানি ঢুকে তাহলে তাৎক্ষণিক বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারে নির্বাচন কমিশন। এমনটি গতকাল দুপুরে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের। তিনি জানান, গতকাল দুপুর পর্যন্ত পানি ওঠার কোনো খবর তাদের কাছে আসেনি। এলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে- সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন গণমাধ্যমকে জানান, সিলেটে আরও কয়েকদিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জুন মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ৩০ বছরের বৃষ্টিপাত পর্যালোচনা করে একটি অঞ্চলের স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ধরা হয়। সে হিসাবে সিলেট অঞ্চলে জুন মাসে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ৮১৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার। তবে গত বছরের জুন মাসে ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তবে জুন মাসে ১৯ দিনে সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১ হাজার ৮৫ দশমিক ৯ মিলিমিটার। বাকি ১১ দিনে সিলেটে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। গত বছরের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে চলতি মাসে।

 


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content