প্রতিনিধি ২৩ জুন ২০২৩ , ১০:০৯:৫৭
তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে এবং শেখ হাসিনার ভিশন-২০৪১ সফল করতে সবার আন্তরিকতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। তাই স্মার্ট নড়াইল তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আগামী নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করার বিকল্প নেই।
শুক্রবার (২৩ জুন) বিকেলে সদরের আউড়িয়া ইউনিয়নের আবু বক্কর সিদ্দিকী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
এর আগে সদরের আউড়িয়ায় ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৭তলা বিশিষ্ট আধুনিক নড়াইল ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজ আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই দিনটির বিশেষ একটা গুরুত্ব আছে। ১৯৫৭ সালের ২৩ জুন স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। সেই স্বাধীনতার হারানো সূর্য পুনরায় উদিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমরা ফিরে পেয়েছিলাম ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলেই আমরা আজ মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারছি, স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারছি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছিল বলেই ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গার পানি চুক্তি সহ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছিলাম। মাত্র ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দরিদ্র স্বল্পোন্নত দেশ থেকে প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল মধ্যম আয়ের দেশের পরিণত হয়েছি।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থেকেছে বলেই এই দক্ষিণাঞ্চলের দৃশ্যমান উন্নয়ন তথা সারাদেশের উন্নয়ন হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, আমার গত পনেরো বছরের রাজনৈতিক জীবনে অনেক সংসদ সদস্যকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের এলাকার বিভিন্ন দাবি আবদার করতে দেখেছি। কিন্তু এমন নজির দেখিনি যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী একজন প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন, আমার মাশরাফি একটি প্রকল্প চেয়েছে তাড়াতাড়ি করে দাও। আপনাদের এলাকার মাশরাফি এমনি একজন সংসদ সদস্য যে কিছু চাইলে প্রধানমন্ত্রী না করেন না।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবং মাশরাফির প্রচেষ্টায় ২য় পর্যায়ে দেশের ১৪টি জেলার মধ্যে নড়াইলে প্রথম নড়াইলে ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ -এর কাজ শুরু হয়েছে।
আগামী ২ বছরের মধ্যে এই আইটি পার্কের সুফল পাবেন নড়াইলের ২ লাখ ছাত্র-ছাত্রীসহ জেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষ।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্রেন চাইল্ড প্রকল্পের আওতায় নড়াইলের শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষার্থীরা চাকরি প্রত্যাশী না হয়ে চাকরি দেবে। আজ ১৫ জন নারী উদ্যোক্তাকে এই মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে অফেরতযোগ্য ৫০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।
পলক বলেন, আপনাদের নড়াইল জেলাকে বিশ্ব চিনতো চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের মাধ্যমে, এখন চিনে প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য ও বিখ্যাত ক্রিকেটার মাশরাফির জন্য। আমি আপনাদের মাশরাফির একজন শক্ত ভক্ত। আপনারা সৌভাগ্যবান মাশরাফির মতো এমন নেতা পেয়েছেন যে নড়াইলের ভাগ্য পাল্টে দেবে। নড়াইলের আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ, নাটোরের সন্তান হলেও আমি আপনাদের নড়াইলের সন্তান হয়ে জেলার ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই। আমাদের দেশের সাড়ে তিনশত সংসদ সদস্য মাশরাফির মতো এরকম একজন সৎ, আদর্শবান, পরিশ্রমী ও কর্তব্যপরায়ণ নেতা হওয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।
নড়াইলবাসীর জন্য ৫টি সুখবর রয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী পলক তার বক্তব্যে বলেন, ১. নড়াইলের তিনটি উপজেলায় আগামী অর্থ বছরে ৬১ টি শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব দেওয়া হবে. ২. আগামী ৬ মাসে জেলার ৫৫৫ জন নারী ফ্রিল্যান্সার, স্মার্ট কল সেন্টার এজেন্ট, স্মার্ট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার এবং ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ শেষে একটি করে ল্যাপটপ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হবে। ৩. তিনটি উপজেলায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জয় সেট সেন্টার’ স্থাপন করা হবে। ৪. ৭৪৪টি সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজে হাই স্পিড ইন্টারনেট কানেকশনের ব্যবস্থা করে দেবো, ৫. আগামী দুই বছরের মধ্যে নড়াইল শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের কাজ শেষ করে দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করব।
সমাপনী বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক এবং নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় নড়াইলবাসীর আবদার মিটিয়েছেন। পলক ভাই এই আইসিটি পার্কের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। নড়াইলবাসীর পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক ভাইসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নড়াইলবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আমরা ভৌগোলিকভাবে পিছিয়ে ছিলাম, যার কারণে আমাদের জেলায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আল্লাহর রহমত ও প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকার কারণে ২টা জিনিসের জন্য (পদ্মা সেতু, মধুমতি সেতু) আমাদের জেলার ভৌগোলিক অবস্থান এখন সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে। দক্ষিণ বঙ্গের অনেক জেলাকে আমাদের জেলার ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
মাশরাফি আরও বলেন, আমরা সবাই রেডি জিনিস চাই, বাসায় গেলে খাবার খেয়ে ভালো-মন্দ মন্তব্য করি। কিন্তু খাবার তৈরিতে কতটা সময় আর পদ্ধতি কি তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। স্বাধীনতার পর থেকে এত বছর আমরা চুপ থেকেছি। আপনাদের সবার কাছে বিনীত অনুরোধ আর তিন থেকে চারটা বছর অপেক্ষা করেন, আপনাদের নড়াইলের চিত্র পাল্টে যাবে। আমি থাকি বা না থাকি প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আবার আসলে ইনশাআল্লাহ আপনাদের জেলার উন্নয়ন হবেই। ভাগ্য সঙ্গে না থাকলে কিছু হয় না, ভাগ্য সহায় হওয়ার জন্য নিজেদের পরিশ্রম করতে হয়, সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। নড়াইলবাসীর প্রতি অনুরোধ আপনারা ভাগ্য দূরে ঠেলে দেবেন না, আগামী নির্বাচনে সবাই প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখুন ও ভোট দিয়ে পুনরায় নির্বাচিত করুন।
আলোচনা সভায় শরিফুল আলম লিটুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন খান নিলু প্রমুখ।