প্রতিনিধি ৩০ জুন ২০২৩ , ১১:৪৮:০০
জেলা প্রতিনিধি-ঝুঁকিপূর্ণ একটি ভবনেই চলছে বংশাল পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম। ইতোমধ্যে আজ দুপুরে ওই ভবনের বারান্দা ধসে পড়েছে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন ভবনে থাকা পুলিশ সদস্যরা। পরে তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সেখান থেকে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভবনের পাশের রাস্তাটিতে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে স্থানীয়দের।
শুক্রবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় সরেজমিনে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার মাহুতটুলী এলাকায় বংশাল পুলিশ ফাঁড়ির দোতলা ভবনটি অনেক পুরনো ও জরাজীর্ণ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঝুঁকি নিয়েই ওই ভবনে পুলিশ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। একাধিকবার এলাকার লোকজন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানালেও কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শাখারীবাজার ট্রাজেডির মতো আজ বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
বারান্দা ধসে পড়ার সময় ফাঁড়িতে প্রায় ৩০ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। এ সময় বৃষ্টি হচ্ছিল, হঠাৎ বিকট শব্দে বারান্দাটি ধসে পড়ে। এ ঘটনার পর কিছু পুলিশ সদস্যকে পাশের ফাঁড়িতে পাঠানো হয়েছে। আর কিছু পুলিশ দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
পুলিশ ফাঁড়ির পাশের গলির বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব সালমা বেগম হক কথাকে বলেন, আমাদের জন্ম এখানে। ওই ভবনটি অনেক পুরনো। ওই ভবনের পাশ দিয়েই নিয়মিত যাতায়াত করি। আজ দুপুরে হঠাৎ করে বিকট শব্দ শুনতে পাই। এতে আমার মনে আতঙ্ক দেখা দেয়।
এই বৃদ্ধা বলেন, বর্তমানে যাতায়াতের রাস্তাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিকল্প একটি রাস্তা থাকলেও সেটা অনেক সরু। সেই রাস্তা নিয়ে চলাচল করা অনেক কষ্টকর।
এ সময় তাসফিয়া নামের এক স্কুলছাত্রী হক কথাকে বলেন, হঠাৎ করে শব্দ পাই। এ সময় আমরা সবাই অনেক ভয় পেয়েছি। তিনি বলেন, ওই ভবনের পাশ দিয়েই নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করি। কিন্তু ভবনটি থাকলে সেখান দিয়ে চলাচল করতে ভয় লাগবে।
রাজিব নামের এক যুবক হক কথাকে বলেন, আমি এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা। এই রাস্তা ছাড়া আমাদের চলাচলের বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। ছোট একটি রাস্তা যেটা বিকল্প হিসেবে বলা হচ্ছে, সেটি দিয়ে চলাচল করা অনেক কষ্টের।
আমাদের একটি কমিটি আছে। ওই কমিটি ভবনটি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে ধসে পড়া অংশটুকু তাড়াতাড়ি সরানো হবে।
মিজানুর রহমান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিএসসিসি
সাদ্দাম নামের এক যুবক বলেন, ঘটনার সময় আমার ছোট ভাই আনাস সেখানে দাঁড়িয়েছিল। অল্পের জন্য আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন।
পরে কথা হয় আনাসের সাথে। তিনি বলেন, দুপুরে খাওয়া-ধাওয়া করে ওই ভবনের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ শব্দ শুনতে পাই। পরে ভয়ে দৌড়ে বাসায় চলে আছি। অল্পের জন্য আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ওই ভবনে দুইজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ফাঁড়ির গেইটে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। আর ভেতরে একজন রয়েছেন। ভবনের ভেতরের পরিস্থিতি দেখতে ফাঁড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করলেও গেইটে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালককারী সাঈদ নামের ওই পুলিশ সদস্য ভেতরে প্রবেশে নিষেধ করেন।
ভেতরে আর কেউ আছেন কি না এবং ভবন কার্যক্রম চলছে কীভাবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি হক কথাকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কথা বলতে পারব না। বিষয়টি সম্পর্কে স্যার (ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা) কথা বলবেন।
পরে কথা হয় বংশাল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুজ্জামান হাসান কামালের সাথে। তিনি হক কথাকে বলেন, সেখানে (বংশাল পুলিশ ফাঁড়ি) কিছু হয়নি। পরিত্যক্ত বারান্দা ছিল, ওইটা পড়ে গেছে।
ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবনটি পুরাতন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কি না তা আগে কেউ কখনো কিছু বলেনি। পরিত্যক্ত ওই বারান্দা কেউ ব্যবহার করত না। ওইটা পড়ে গেছে।
ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালন করছেন কি না জানতে চাইলে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, দায়িত্ব পালনের কী আছে। সেখানে তো কিছুই হয়নি। সেখানে একটা ফাঁড়ি, সেই ফাঁড়ির নিয়মিত কার্যক্রম চলছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজ বারান্দা ধসে পড়ার সময় ফাঁড়িতে প্রায় ৩০ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। এ সময় বৃষ্টি হচ্ছিল, হঠাৎ বিকট শব্দে বারান্দাটি ধসে পড়ে। এ ঘটনার পর কিছু পুলিশ সদস্যকে পাশের ফাঁড়িতে পাঠানো হয়েছে। আর কিছু পুলিশ দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
তবে বংশাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক আবদুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, বারান্দা ধসে পড়ার সময় দুজন পুলিশ সদস্য কর্তব্যরত ছিলেন। বাকিরা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। বিকট শব্দে বারান্দাটি ধসে পড়ার সময় সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ওই ভবনের পাশের একটি টিনশেড ঘরে পুলিশ সদস্যরা আশ্রয় নেন। এতে কেউ আহত হননি।
এদিকে, আজ বিকেলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর এবং করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আগামীকাল সিদ্ধান্ত হবে ওই ভবনে কার্যক্রম চলবে কি না। কার্যক্রম না চললে ভবনটি ভাঙা হবে কি না সেই ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হবে।
নাসরিন রশিদ পুতুল, কাউন্সিলর
দক্ষিণ সিটির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দুই ভবনের মাঝখানে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া এবং জনগণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে ইতোমধ্যে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. মিজানুর রহমান হক কথাকে বলেন, আমাদের একটি কমিটি আছে। ওই কমিটি ভবনটি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে ধসে পড়া অংশটুকু তাড়াতাড়ি সরানো হবে।
রাস্তাটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে, এলাকাবাসী কবে সেই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে- এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তা বন্ধ রাখছি কে বলছে, আমরা কোনো রাস্তা বন্ধ রাখিনি। হয়ত সেখান থেকে বিল্ডিং ভেঙে পড়ে আছে, তাই রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে। তারপরও বিকল্প একটা রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। সেই রাস্তা একটা পকেট গেইটের মতো আছে। সেইটা পরিপূর্ণ করা যায় কি না সেটা আমাদের লোকজন দেখছে।
পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর (ওয়ার্ড নং- ৩১,৩২,৩৩) সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নাসরিন রশিদ পুতুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি হক কথাকে বলেন, ঘটনার ঘটনার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে আমরা ভবনের পাশের রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছি। আগামীকাল আমাদের টিম আবার ঘটনাস্থলে যাবে।
কাউন্সিলর বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আগামীকাল সিদ্ধান্ত হবে ওই ভবনে কার্যক্রম চলবে কি না। কার্যক্রম না চললে ভবনটি ভাঙা হবে কি না সেই ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হবে।