পর্যটকদের নিয়ে টাইটাইনিকের ধ্বংসাবশেষের উদ্দেশে রওনা হয়ে আটলান্টিকের গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ হওয়া সাবমেরিন টাইটানের সন্ধান পেতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড বাহিনী।
মার্কিন কোস্টগার্ড বাহিনীর একাধিক উড়োজাহাজ, জাহাজ, সাবমেরিন ও বেশ কয়েকটি ডুবুরি দল অংশ নিয়েছে এই উদ্ধার অভিযানে। এর মধ্যেই মঙ্গলবার একটি উড়োজাহাজ সমুদ্রের নিচে শক্তিশালী শব্দ শনাক্ত করে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সোনার বয়া সিস্টেমের মাধ্যমে সেই শব্দ রেকর্ডও করা হয়।
নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ৩ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরও টাইটানের অবস্থান সংক্রান্ত অন্য কোনো সূত্র এখন পর্যন্ত না মেলায় এই শব্দের উৎস নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে কোস্টগার্ড এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।
পানির গভীরে ডুবোজাহাজের ইঞ্জিন চালু থাকলে যেমন শব্দ হয়, রেকর্ডকৃত শব্দটিও অনেকটা সেরকম। শব্দটি শুনলে প্রাথমিকভাবে এই ধারণা হয় যে, সাগরের কোথাও এই ডুবোজাহাজটি আটকা পড়েছে এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে জোর গতিতে ইঞ্জিন চালাচ্ছে।
মার্কিন কোস্টগার্ড জানিয়েছে, শব্দটি সাগরের সম্ভব্য যে এলাকা থেকে এসেছে— সেখানে ও তার আশপাশে অনুসন্ধান চালিয়েছে কোস্টগার্ড বাহিনী। কিন্তু কোনো সাবমেরিনের সন্ধান সেখানে পাওয়া যায়নি।
গভীর সমুদ্র সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের একাংশ ইতোমধ্যে সাবমেরিন ওশনগেট থেকে এই শব্দ আসছে কিনা— সে সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, শব্দটি সাবমেরিন থেকেই আসছে— সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া খুবই কঠিন।
এছাড়া মার্কিন কোস্টগার্ডের এই উদ্ধার অভিযানের প্রধান নির্বাহী এবং মার্কিন নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাউগার বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই শব্দটি সাবমেরিন থেকেই আসছে বলে নিশ্চিত নন তিনি।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আটলান্টিকের যে এলাকা থেকে শব্দটি এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে— সেখানে সাগরের তলদেশে প্রচুর সংখ্যক ধাতব বস্তু রয়েছে। আমার ধারণা, সেখান থেকেই কোনোভাবে এই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।’
যাত্রীবাহী সাবমেরিন সমুদ্রের গভীরে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে কয়েকবার। তারমধ্যে ২০০০ সালে রুশ সাবমেরিন ক্রুস্কের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য। ওই ডুবোজাহাজটি নিখোঁজের পরও অনুসন্ধানের সময় এ রকম শব্দ শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সেটি অনুসরণ করে শেষ পর্যন্ত কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
আবার শব্দটি যে টাইটান থেকে আসছে না— তা ও জোর দিয়ে বলতে পারছে না কোস্টগার্ড।
কারণ রোবার নিখোঁজ হওয়া সেই সাবমেরিনটিতে যে পরিমাণ অক্সিজেনের মজুত রয়েছে, তা দিয়ে বড়জোর আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত শ্বাস নিতে পারবেন ওশনগেটের ভেতরে অবস্থান করা যাত্রীরা।
১৯১২ সালে যুক্তরাজ্যের সাউথ হ্যাম্পটন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি যাওয়ার পথে হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় টাইটানিক, সাগরের হিমশীতল পানিতে ডুবে সলিল সমাধি ঘটে হাজার হাজার যাত্রীর।
আটলান্টিক সাগরের যে এলাকায় বর্তমানে অবস্থান করছে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ, সেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২ হাজার ৫০০ ফুট গভীরে। সাগরের গভীরে এই ধ্বংসাবশেষটি দেখতেই ওশনগেট নামের একটি ডুবোজাহাজে চেপে রওনা হন চালকসহ মোট ৫ জন। যাত্রীরা হলেন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী হামিশ হার্ডিং (৫৮), ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে সুলেমান (১৯), ওশনগেটের শীর্ষ নির্বাহী স্টকটন রাশ (৬১) এবং সাবমেরিনটির চালক ও ফরাসি নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা পল হেনরি নারগিওলেট (৭৭)।
এই অভিযানে যাওয়ার জন্য প্রত্যেক অভিযাত্রীর মাথাপিছু খরচ হয়েছে আড়াই লাখ ডলার।
কিন্তু রোববার রওনা হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সাবমেরিন ও জাহাজ চলাচল বিষয়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় টাইটান। তারপর থেকে আটলান্টিকের বিশাল এলাকাজুড়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এখনও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি ডুবোজাহাজটির।
যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনী রয়্যাল নেভির সাবেক কর্মকর্তা ডেভিড রাসেল ২০০০ সালে সাগরে নিখোঁজ হওয়া সাবমেরিন ক্রুস্কের অনুসন্ধান অভিযানে ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বিবিসিকে বলেন, ‘যদি সাবমেরিনটি সাগরের বেশি গভীরে না গিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে সেটি খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। কিন্তু যদি সেটি গভীরে থাকে এবং সেখানে দিক হারিয়ে ফেলে— সেক্ষেত্রে ডুবোজাহাজটি খুঁজে বের করা খুবই, খুবই কঠিন।
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ