সারাদেশ

আন্তর্জাতিক অপহরণ চক্রের ৩ সদস্য আটক, জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার ১

  প্রতিনিধি ২০ জুলাই ২০২৩ , ৩:২৬:৩৭

শেয়ার করুন

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে কৌশলে মানুষ অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়কারী আন্তর্জাতিক চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে এপিবিএন। একই সঙ্গে অপহরণের পর মিয়ানমারে পাচার করে জিম্মি রাখা এক রোহিঙ্গাকে কৌশলে ফেরত এনে উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিকেলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (অফস্ অ্যান্ড মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

 

এপিবিএন বলছে, উখিয়া-টেকনাফের একটি সংঘবদ্ধ চক্র কৌশলে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করে আসছে। অনেক ক্ষেত্রে মুক্তিপণ আদায়ের পর কাউকে কাউকে ছেড়ে দিলেও হত্যা করা হয় অনেককে। এই চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি চক্র জড়িত। যারা অপহৃতদের মিয়ানমারে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে আদায় করে মুক্তিপণ। যেখানে রোহিঙ্গা ছাড়াও স্থানীয় লোকজন জড়িত রয়েছেন।

গ্রেফতার তিনজন হলেন—টেকনাফের ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ-১ ব্লকের ফয়েজ উল্লাহর ছেলে এনাম উল্লাহ (২১), টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নতুন পল্লান পাড়ার মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে কলিম উল্লাহ (৩৫), একই ইউনিয়নের দক্ষিণ লম্বরি এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে তারিকুল ইসলাম (১৯)। এর মধ্যে কলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র সহ চারটি মামলা রয়েছে।

সহকারী পুলিশ সুপার (অফস্ অ্যান্ড মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ জানান, গত ৮ জুলাই ১৯ নম্বর ক্যাম্প থেকে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কেফাত উল্লাহ (২৪) এবং হামিদ হোসেন (২৫) নামের দুই রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের প্রথমে টেকনাফের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে দুইজনকে নৌকাযোগে মিয়ানমার পাঠানো কালে হামিদ হোসেন কৌশলে পালিয়ে চলে আসে। কিন্তু কেফাত উল্লাহকে মিয়ানমারে নিয়ে জিম্মি করে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। এমন অভিযোগ এপিবিএনকে জানানো পর অপরাধীদের শনাক্ত করতে কাজ শুরু করে। যার এক পর্যায়ে উখিয়া ও টেকনাফে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক চক্রের এই তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর মিয়ানমারের জিম্মি কেফাত উল্লাহকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নাফ নদীর তীরে আনা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে কেফাতকে উদ্ধার করা সক্ষম হয়। গ্রেফতার তিন সদস্য, উদ্ধার ও পালিয়ে আসা ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্যে আন্তর্জাতিক এই চক্রটির সাত ধাপে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাটি সংঘটিত করার কৌশল জানা গেছে।

এই সাত ধাপের প্রথম ধাপে অপরাধ চক্রটির প্রথম গ্রুপ ব্যক্তি টার্গেট করে তুলনামূলক অধিক মজুরিতে বিভিন্ন কাজ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। দ্বিতীয় ধাপে, চক্রের দ্বিতীয় গ্রুপ ভিকটিমদের টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন নির্জন স্থানে বিশেষ করে দক্ষিণ লম্বরি নামক স্থানে লুকিয়ে রাখে। তৃতীয় ধাপে, এ চক্রের সদস্যরা সুবিধা জনক সময়ে লুকিয়ে নাফ নদীর পাশে নিয়ে যায় ও রাতের অন্ধকারে নৌকা যোগে মিয়ানমারের শামিলা বা আকিয়াব শহরে নিয়ে যায়। চতুর্থ ধাপে, চক্রের মিয়ানমারের সদস্যরা তাদের আটক রেখে নির্যাতন করে ভিকটিমদের আত্মীয়- স্বজনদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সরাসরি দেখান এবং টাকা দাবি করেন। দাবি করা টাকা চক্রের বাংলাদেশে অবস্থানরত স্থানীয়দের দিয়ে বিকাশে/ নগদে গ্রহণ করে। চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নাম্বারে টাকা গ্রহণ করে। পঞ্চম ধাপে বিকাশে টাকা ক্যাশ আউট করে বা নগদে সংগ্রহ করে একত্র করে মোটা অংকের টাকা জমা করে। ৬ষ্ঠ ধাপে, টেকনাফ বন্দরে টাকা মিয়ানমারের মুদ্রায় রূপান্তর করে অবৈধভাবে টাকা অপরাধ চক্রের মিয়ানমারের নাগরিকদের পাঠায়। সপ্তম ধাপে অপহৃতদের মিয়ানমার থেকে নৌকাযোগে নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় বা খুন করে মরদেহ গুম করে দেন।

এপিবিএন কর্মকর্তা জানান, পুরো প্রক্রিয়ায় সংঘবদ্ধ চক্রের অনেক সদস্য রয়েছে। এদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় মামলা করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

 


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content