প্রতিনিধি ৪ জুলাই ২০২৩ , ৬:২১:৩৭
ডলারের বিপরীতে টাকার মানে আরও পতন হয়েছে। এক ডলারের দর ২ টাকা ৮৫ পয়সা বাড়িয়ে আন্তঃব্যাংকে ১০৮ টাকা ৮৫ পয়সা দরে বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে আন্তঃব্যাংক দরেই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হবে। সোমবার (৩রা জুলাই) দেশের ইতিহাসে টাকার সর্বোচ্চ অবমূল্যায়ন ঘটেছে। এদিন বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ থেকে ১০৮.৮৫ টাকা আন্তঃব্যাংক হারে মার্কিন ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে একদিনে স্থানীয় মুদ্রার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ টাকা ৮৫ পয়সা অবমূল্যায়ন হয়। একাধিক বিনিময় হার-ভিত্তিক ব্যবস্থা থেকে সরে এসে, বাজার-ভিত্তিক একটি একক বিনিময় হার চালুর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে গত জানুয়ারিতে আইএমএফের অনুমোদিত ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণেরও অন্যতম শর্ত ছিল একক বিনিময় হার চালু। আর সেটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপ।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশনা অনুসারে, বিনিময় দর ঠিক করে দিচ্ছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। ফলে আন্তঃব্যাংক ডলার বাজারের ব্যবস্থাপনা এখনও তাদের হাতেই রয়েছে।
সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফেদা আমদানিকারকদের জন্য ডলারের দর বাড়িয়ে ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে।
বাফেদার কর্মকর্তারা জানান, গত ২৬ জুনের সভায় ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা দরে আন্তঃব্যাংক বাজারে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু, অনেক ব্যাংকই আমদানিকারকদের কাছে ১০৯ টাকার বেশি দরে প্রতি ডলার বিক্রি করছিল। এখন আমদানি ব্যয় পরিশোধেও তাই একই দর কার্যকর করা হলো।
বাফেদার সাম্প্রতিকতম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রেমিট্যান্স হিসেবে আসা ডলার ব্যাংকগুলো ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে কিনতে পারবে। রপ্তানি আয়ের প্রতি ডলার কিনতে পারবে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায়।
সোমবার রিজার্ভ থেকে বৈদেশিক পেমেন্টের জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে ৭২ মিলিয়ন ডলার নতুন আন্তঃব্যাংক দরে বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিক্রি করা ডলারের দর আগের ১০৬ টাকা থেকে বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ব্যাংকগুলোর কাছে নতুন আন্তঃব্যাংক হারে ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে ৯৩.৪৫ টাকা থেকে ১৬ শতাংশ বা ১৫.৪ টাকা অবমূল্যায়ন হয়েছে স্থানীয় মুদ্রা টাকার।
চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার-ভিত্তিক একটি একক বিনিময় হার চালুর ঘোষণা দেয়। এই ব্যবস্থায় ডলার বা অন্য কোনো বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় মান নির্ধারিত হবে বাজার-চাহিদার ভিত্তিতে।
মুদ্রানীতি বিবৃতিতে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্য রয়েছে। যার আওতায়, বাংলাদেশ ব্যাংকও বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় বা বিক্রয়ের নির্দিষ্ট কোনো দর ঘোষণা করবে না।
এর আগে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্যাকেজের শর্ত হিসেবে, রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একটি একক বিনিময় হার চালুর পরামর্শ দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।