প্রতিনিধি ৯ জুলাই ২০২৩ , ১০:১৮:০২
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অরূপ। ৯ দিন ধরে হাসপাতালের বিছানাতে দিন কাটছে। ঈদের দিন জ্বর ওঠে তার। টানা ৪ দিন জ্বরের সঙ্গে বমিও হয়। অরূপের মা সরস্বতী জানান, তার ফুসফুসেও পানি জমে। বাসায় জ্বরের ওষুধ খাওয়ানোর পরও সুস্থ হয় না অরূপ। পরে তাকে ডাক্তার দেখানো হলে পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। শেষে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৯ দিনের চিকিৎসা শেষে অরূপ এখন সুস্থ। সরস্বতী বলেন, এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু হয়েছে তার।
তার ৩ বছর বয়সেও একবার ডেঙ্গু হয়। কিন্তু তখন শারীরিক অবস্থা এত খারাপ ছিল না।
ডেঙ্গুর আগ্রাসন ক্রমেই বাড়ছে। রাজধানীর সব হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ। বড়দের সঙ্গে শিশু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০ শিশু ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৩৯ জন শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে। চলতি বছর ১৫৫ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে কয়েকগুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী আসছে হাসপাতালটিতে। সতেরো মাসের শিশু রুকুও ৫ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। বাবা-মা তাকে নিয়ে চিন্তিত। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে না রুকু।
মাঝেমধ্যে বমি করে। ডাক্তাররা তার চিকিৎসা চালাচ্ছে। রুকুর বাবা মোহাম্মদ বশির বলেন, এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। তবে রক্তে প্লাটিলেট কমেছে। যেদিন ভর্তি করিয়েছি সেদিন ৫০ হাজার ছিল। এখন ১৫ হাজার আছে। রাজধানীর মালিবাগের শান্তিবাগের বাসিন্দা তিনি। ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন, আমাদের এলাকায় এক মাস ধরে মশার ওষুধ তেমন ছিটাতে দেখি না। ৪র্থ তলায় থাকি তাও কীভাবে ডেঙ্গু হলো বুঝলাম না।
শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. কারুজ্জামান বলেন, শিশুদের জন্য ডেঙ্গু উদ্বিগ্নের। তাদের আক্রান্তের সম্ভাবনাও বেশি। শিশুরা দুপুর বেলায় ঘুমিয়ে থাকে। ডেঙ্গু মশাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুপুরেই কামড়ায়। আবার স্কুলেও ডেঙ্গু মশা কমড়াতে পারে। ঈদের পর এখন স্কুল খুলেছে। এক্ষেত্রে শিশুদের ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর ঝুঁকিও কিছুটা বেড়েছে। তাই স্কুলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। শিশুদের ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে ডেঙ্গুতে জ্বর, শরীর ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এসব উপসর্গ ছিল। কিন্তু এখন বমি, পাতলা পায়খানা দেখা যায়।
শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ।
গত দুই সপ্তাহের মধ্যেই অন্তত ৫-৬ গুণ রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালটিতে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা দুইটি ডেডিকেটেড ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করেছে। এসব ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টাই চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা। এ ছাড়া শিশুদেরকে শিশু ওয়ার্ডেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও প্রতিদিন গড়ে ২-৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে আসতো। অথচ গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালটিতে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ২৪ জন। বর্তমানে ৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত মোট ২১৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এসব রোগী হাসপাতালে এসেছেন গত দুই মাসের মধ্যেই।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারেক রহমান। ৬ দিন ধরে হাসপতালে ভর্তি তিনি। জ্বর, মাথাব্যথা, ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ ছিল তার। সাধারণ ভাইরাস জ্বর ভেবে শুরুতে বাসাতেই চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ভোলা থেকে ঢাকায় এসে ডাক্তার দেখান। সাদ্দাম হোসেন নামের আরেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বলেন, জ্বর-ডায়রিয়া দেখে নিজেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাই। পরে ডেঙ্গু ধরা পড়লে হাসপাতালে এসে ভর্তি হই।
সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, হাসপাতালে জটিল অবস্থাতেই বেশি রোগী আসে। জ্বরের সঙ্গে বমি, পেট ব্যথা, রক্তক্ষরণ এসব রোগী হাসপাতালে বেশি আসছে। আমরা পুরুষ ও নারীদের জন্য ডেডিকেটেড ডেঙ্গু ওয়ার্ড করেছি। শিশু ডেঙ্গু রোগীদের শিশু ওয়ার্ডেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সবাই বেডে আছে। কেউ ফ্লোরে নেই। আমরা আরও প্রস্তুতি নিচ্ছি। যে হারে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে তা চলমান থাকলে আমাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হবে।