সারাদেশ

ব‌রিশা‌লে মেয়র খোকন ও সা‌দিক সমর্থক‌দের ম‌ধ্যে সংঘর্ষ, আহত ১৫

  প্রতিনিধি ২১ জুলাই ২০২৩ , ১০:৫৮:১০

শেয়ার করুন

বরিশালে শ্রমিক লীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত ও বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।

শুক্রবার (২১ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দফায় দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

 

জানা যায়, বুধবার (১৯ জুলাই) বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের ২৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ। কমিটিতে পরিমল চন্দ্র দাসকে সভাপতি ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্নাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। তারা দুইজনই সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী।

এদিকে, ঘোষিত কমিটি বাতিল চেয়ে আন্দোলনের ডাক দেন বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহর অনুসারী মহানগর শ্রমিক লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি আফতাব হোসেন। তিনি পূর্ব ঘোষণা দিয়ে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। অপরদিকে সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন লিটন মোল্লা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন চেয়ে আফতাব হোসেনের বিরুদ্ধে একই সময়ে বাস টার্মিনালে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শেষ করে বেলা ১১টার দিকে টার্মিনালের ভেতরে লিটন মোল্লার সংবাদ সম্মেলনে বাধা দেন আফতাব হোসেন। এ সময় লিটন মোল্লাসহ কয়েকজনের ওপর হামলা চালায় আফতাব হোসেনের লোকজন। খবর পেয়ে লিটন মোল্লার পক্ষের শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন এবং আফতাব হোসেনের বিচার দাবি করেন। তবে মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সড়ক অবরোধ তুলে নেন। অবরোধ তুলে নিয়ে লিটন মোল্লার নেতৃত্বে টার্মিনালে ঢুকে আফতাবের পক্ষের বেশ কয়েকজনকে মারধর করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।p

কিছুক্ষণ পর টার্মিনালে আসেন রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সভাপতি সুলতান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির, ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসীম উদ্দিন, বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মঈন তুষারসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ। তারা শ্রমিকদের জড়ো করে শান্ত থাকার জন্য আহ্বান জানান এবং মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির বিষয়ে সঠিক সমাধানের সিদ্ধান্ত দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

 

নথুল্লাবাদ বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের বিতর্কিত নেতা রইজ আহম্মেদ মান্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি পকেট কমিটি দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে আর যারা সদস্য তারাও অধিকাংশ শ্রমিক না। আমরা এই পকেট কমিটি প্রত্যাহার চেয়ে অত্যন্ত যৌক্তিক একটি কর্মসূচি পালন করে ফিরছিলাম। টার্মিনালে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ টার্মিনালে অরাজকতা করার জন্য আমাদের ওপর হামলা চালাতে আসে।

তিনি অভিযোগ করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া দোতলায় একটি কক্ষে থাকা শ্রমিক লীগের নেতাদের পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে মারধর করেছে লিটন মোল্লার লোকজন। শ্রমিক লীগের হানিফসহ ৭-৮ জনকে তারা বেদম মেরেছে।

শ্রমিক নেতা ও কাশিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান লিটন মোল্লা বলেন, শ্রমিকরা ইউনিয়নের নির্বাচন চেয়ে এক সপ্তাহ আগেই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এদিকে আফতাব হোসেন গতকাল রাতে আমাদের ঘোষিত একই সময়ে একটি কর্মসূচি ঘোষণা দেন। তার কর্মসূচির জন্য আমরা সংবাদ সম্মেলনের কর্মসূচি পিছিয়ে দিই। তিনি সড়ক অবরোধ শেষ করে টার্মিনালে এসে দোতলায় তার কক্ষে যান। এরপর আমরা যখন সংবাদ সম্মেলন শুরু করি তখন তিনি নিচে নেমে এসে লোকজন নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।

এদিকে শ্রমিকদের আধিপত্য নিয়ে কোন্দলের কারণে সড়ক অবরোধে এক ঘণ্টার মতো যানজট বিড়ম্বনায় পড়েন ঢাকা-বরিশাল ও অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীরা।

এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার এবিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, বাস টার্মিনালে দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। কিছুক্ষণ আগে সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল। তবে পুলিশের হস্তক্ষেপে তা তুলে নিয়েছে শ্রমিকরা। বর্তমানে সড়কে যান চলাচল করছে এবং টার্মিনালের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাস টার্মিনালে অতিরিক্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content