রাজনীতি

বিএনপির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় হামলা গুলি নিহত ১

  প্রতিনিধি ১৮ জুলাই ২০২৩ , ৯:৪৭:২১

শেয়ার করুন

বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ কয়েকশ’ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। লক্ষ্মীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কৃষক দল কর্মী সজীব হোসেন নিহত হয়েছে। ঢাকায় সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে বগুড়া, জয়পুরহাট, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, কিশোরগঞ্জ ও রাজবাড়ীতে। এসব হামলায় ও সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ফাঁকা গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ফেনী, লক্ষ্মীপুর, বগুড়া, খাগড়াছড়ি ও কিশোরগঞ্জ শহর। জয়পুরহাটে সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপি’র দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।

বাঙলা কলেজের সামনে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া: রাজধানীতে পদযাত্রা চলাকালে মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে পদযাত্রার একটি অংশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

 

তখন পদযাত্রা থেকে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। এ সময় ১৫ থেকে ২০ মিনিট দু’পক্ষের মধ্যে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হন। বিএনপি’র কিছু নেতাকর্মী কলেজ গেটে ভাঙচুর করে এবং সেখানে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। সংঘর্ষ চলাকালে কলেজে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে কৃষক দল কর্মী সজীব হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ সময় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিমসহ অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন দুই শতাধিক বিএনপি’র নেতাকর্মী। বিকালে শহরের রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে। বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচিতে নেতৃত্বে দিয়েছেন বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক ও জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া। নিহত সজীব হোসেন সদর উপজেলা চরশাহী ইউনিয়ন কৃষক দলের সদস্য। বেলা ৩টার দিকে জেলা বিএনপি’র উদ্যোগে শহরের গোডাউন রোডের বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাসভবনের সামনে থেকে পদযাত্রা বের করে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। পদযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ঝুমুর স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। মিছিলটি রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী জানান, বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচিতে বিনা উস্কানিতে পুলিশ বাধা দেয় এবং এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে সজীব হোসেন গুলিব্ধি হয়ে মারা যায়। দুইশ’ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়।

হক কথার স্থানীয় প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান: কিশোরগঞ্জে পদযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি’র সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের রথখোলা এলাকার ঈশা খাঁ রোডে এ সংঘর্ষের ঘটনায় দুই সাংবাদিক, বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও বিএনপি’র শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এরমধ্যে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. শরীফুল আলম জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা বিএনপি’র সহ-দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট ফয়জুল করিম মবিন, জেলা যুবদল সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাক আহমেদ শাহীন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক তারিকুজ্জামান পার্নেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলী মোস্তফা তাজবীর, পল্লী ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার মুসা তানহা, নিকলী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাফিউল ইসলাম নওশাদ, পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাজহারুল হক উজ্জ্বল, যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর, চরফরাদী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সামাদ, বিএনপি কর্মী মহসিন, বিএনপি কর্মী গেনু মিয়া প্রমুখ। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সংঘর্ষের সময় কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি’র গাড়ি এবং একটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া এসআই ফজলুল হকসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দৈনিক মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার (কিশোরগঞ্জ) আশরাফুল ইসলাম ও চ্যানেল টুয়েন্টিফোর এর জেলা প্রতিনিধি খায়রুল আলম ফয়সাল আহত হন। এ ছাড়া সংঘর্ষের সময় সড়কে একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো গ-২৮-৮৯৬৯) ও কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি’র পিকআপ গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৭৭ রাউন্ড রাবার বুলেট ও এক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে এসআই ফজলুল হকসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। জেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. শরীফুল আলম বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশ বিনা উস্কানিতে বাধা প্রদান, হামলা, ব্যাপক লাঠিচার্জ ও নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহতসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে থাকা কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মোস্তাক সরকার বলেন, বিএনপি’র কিছু অতি উৎসাহী ও উচ্ছৃঙ্খল কয়েকজন কর্মী-সমর্থক পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করার চেষ্টা করে। আমরা তখন তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। তখন তারা আমাদের ওপর নির্বিচারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করি।

ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে বিএনপি’র পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গতকাল বিকালে দফায় দফায় সংঘর্ষে ৬ সাংবাদিক, ১০ পুলিশ সদস্য, বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের অন্তত শতাধিক আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছে অনেকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ব্যবহার করে। বিকাল চারটা থেকে শুরু হওয়ার সংঘর্ষ চলে ছয়টা পর্যন্ত। সংঘর্ষে পুলিশের স্টিকারযুক্ত গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর হয়। ফেনী জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় শহরের দাউদপুর স্মৃতি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। হাজার লোকের সমাগমে পদযাত্রাটি শহরের বড় মসজিদ, প্রেস ক্লাব খাজুর চত্বর ট্রাংক রোডে গেলে পুলিশের বাধায় পদযাত্রাটি ডিসি অফিসের অভিমুখে যেতে পারেনি।

পুলিশ এ সময় বিএনপি’র পদযাত্রাটি শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে প্রবেশ করিয়ে দেয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা পদযাত্রাটি শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক হয়ে ইসলামপুর সড়কের মোড়ে চলে যায়। তিনি আরও বলেন, মিছিলের শেষ অংশে পুলিশ অতর্কিতভাবে পেটাতে শুরু করে। এতে কে বা কারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর টিয়ারশেল, শটগানের গুলি ছুড়ে। এতে বিএনপি যুবদল, ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের অনেকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে। বিএনপি’র ওপরে হামলায় পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারা অংশ নেয়। সংঘর্ষ চলাকালীন সময় সংবাদ সংগ্রহকালে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দৈনিক মানবজমিন প্রতিনিধি নাজমুল হক শামীম, মোহনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি তোফায়েল আহমেদ নিলয়, সাপ্তাহিক ফেনীর তালাশের স্টাফ রিপোর্টার এস এম আকাশ, ডিবিসি নিউজ এর চিত্র সাংবাদিক দুলাল তালুকদার, চিত্র সাংবাদিক মিরাজ মামুন আহত হয়েছে।

বগুড়া হতে জানান: পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে উঠে বগুড়া শহর। শহরের দক্ষিণপ্রান্ত বনানী এলাকা থেকে পদযাত্রা শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে আসলে পুলিশ তাদের ভিন্ন রাস্তায় যেতে মূল রাস্তায় বাধাপ্রদান করে। এতে ক্ষুব্ধ বিএনপিকর্মীরা হাতে থাকা প্লেকার্ড ছুড়তে থাকে পুলিশের দিকে। পরে পুলিশ কিছুটা পিছু হটলে পদযাত্রাটি পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। তখন পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে নেতাকর্মীরা ইট ছুড়তে থাকে পুলিশের দিকে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ গুলি ছুড়ে। তখন নেতাকর্মীরা পিছু হটে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুলিশ শতাধিক টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে। সংঘর্ষে ৬ পুলিশ গুরুতর আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। বিএনপি’র বগুড়া জেলা সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেছেন, পুলিশের গুলি এবং টিয়ারশেলে তাদের কমপক্ষে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ওদিকে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসে ইয়াকুবিয়া স্কুলের প্রায় ৩০ জন শিশু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের স্থানীয় মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষের পর পুলিশ বিএনপিকর্মী সন্দেহে ১১ থেকে ১২ জনকে আটক করেছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। তবে পুলিশ কোনো গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি। ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে শহরব্যাপী। বেলা ১টার দিকে দ্বিতীয় দফা শহরের নবাববাড়ী রোডস্থ পুলিশ প্লাজার সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং পুলিশও টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এতে বিএনপি নেতাকর্মীরা সদর পুলিশ ফাঁড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে গেটের কাঁচ ভেঙে যায়। এ সময় পুলিশের এপিসি কার থেকে রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। দু’দফা সংঘর্ষকালে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলায় অংশ নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর হেনা বলেছেন, পুলিশ হঠাৎ করে কেন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করলো তা বোধগম্য নয়। এ ঘটনায় ৫০-৬০ জন গুলিবিদ্ধসহ মোট শতাধিক আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বেশকিছু নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।

খাগড়াছড়ি -খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ উভয়পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে ভাঙ্গাব্রিজ, মাস্টারপাড়া সড়ক, শাপলা চত্বর, পৌরসভা গেট, নারিকেল বাগান এলাকায় এ সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. নুরুল আজম, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম ইসমাইল, ইকো বাবু চাকমাসহ ৫০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আহত হন। গুরুতর আহতাবস্থায় ইকো বাবু চাকমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি পৌরসভার সামনে উন্নয়ন পদযাত্রার প্রস্তুতির প্রাক্কালে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ভাঙচুর চালায় এবং পৌরসভার সামনে থাকা মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পুনরায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। যদিও বিএনপি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে আওয়ামী লীগই তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।

জয়পুরহাট-জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ও বিএনপি’র পদযাত্রা চলাকালে শহরের রেলগেট এলাকায় সংঘর্ষে উভয় দলের অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপি’র পার্টি অফিস ভাঙচুর চালিয়েছে। পুলিশ ১১ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বিকালে জয়পুরহাট কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন পার্টি অফিসের সামনে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। সেখানে থেকে শান্তি মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণের পর পৌনে ৫টার দিকে পার্টি অফিসে ফিরছিল। একই সময় শহরের নতুনহাট থেকে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা স্টেশন রোড হয়ে পদযাত্রা নিয়ে তাদের রেলগেট এলাকার দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী সেøাগান দিতে থাকলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রেলগেট এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে পথচারী সহ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অন্তত ২২ জন আহত হন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিএনপি’র জেলা কার্যালয় ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ শর্টগানের ১১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পিরোজপুর জেলা বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সকালে পিরোজপুরের সার্কিট হাউস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের হামলায় ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ৬ জনকে আটক করেছে। জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন জানান, শান্তিপূর্ণ পথযাত্রায় পুলিশ তাদের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। পুলিশের লাঠিচার্জে বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংঠনের ১০-১২ জন আহত হয়েছে। পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবীর মোহাম্মদ হাসান জানান, শহরের সার্কিট হাউস সড়কে বিএনপি’র পদযাত্রা চলাকালীন সময়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করে এবং ইট ছুড়তে থাকে। এ ঘটনায় পুলিশের ৭ সদস্য আহত হয়। তাদের পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হামলায় জড়িত ৬ জনকে আটক করে।

রাজবাড়ীতে পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা শহরের আজাদী ময়দান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পূর্বঘোষিত পদযাত্রায় রাজবাড়ীতেও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা পার্টি অফিসে জড়ো হতে থাকেন। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কথা ছিল বিএনপি’র খৈয়ম গ্রুপ ও আসালাম-হারুন গ্রুপ এক হয়ে পদযাত্রায় অংশ নেবে। পদযাত্রা শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে উভয় গ্রুপের মধ্যে একাধিক আলোচনা হলেও কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে সকাল থেকেই বিএনপি’র পার্টি অফিসে প্রথম থেকেই আসলাম-হারুন গ্রুপের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। পরবর্তীতে খৈয়ম গ্রুপের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে পার্টি অফিসে প্রবেশ করলে আসলাম-হারুন গ্রুপের কর্মীরা তাদের ওপর আক্রমণ চালায়, এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। খৈয়ম গ্রুপের সিনিয়র নেতা জেলা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফছার আলী সরদার, যুবদল নেতা কাউন্সিলর সম্রাটসহ ৪/৫ জন আহত হন। এর আধাঘণ্টা পর আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল পার্টি অফিস ঢুকতেই আসলাম-হারুন গ্রুপের নেতাকর্মীরা পিছু হটে। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন নেতাকর্মী আহত হন।

 


শেয়ার করুন