প্রতিনিধি ১৩ জুলাই ২০২৩ , ৪:০৪:৪৪
ডেঙ্গু আক্রান্তে প্রায় প্রতিদিন আগের দিনের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। গত ২৪ ঘণ্টায় এবছরে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৪৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ প্রায় মিনিটে মিনিটে ডেঙ্গু রোগী আসছে হাসপাতালে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জুলাই মাসের ১২ দিনে ৪১ জনের প্রাণহানি এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৮ হাজার ১৬৫ জনে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৮ জনে।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামী একমাস সব সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো যাবে। ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার ওপর নজর দিতে হবে।
জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে সতর্কবার্তায়।
গতকাল সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১ হাজার ২৪৬ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭০৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫৩৭ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ১ হাজার ২৪৬ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৯১ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৫৩০ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ২৬১ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ১৪৩ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২ হাজার ২৬৪ জন। অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাই মাসে শনাক্ত ৮ হাজার ১৬৫ জন এবং মারা গেছেন ৪১ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।
৫০ টাকায় হবে ডেঙ্গু পরীক্ষা: আগামী এক মাস সব সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক বিশেষ সতর্কবার্তায় এই তথ্য জানিয়েছে বলে বুধবার সরকারি এক তথ্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার ওপর নজর দিতে হবে। জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে সতর্কবার্তায়।
ডেঙ্গুর লক্ষণ: তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরের পেশি ও জয়েন্টে ব্যথা, বমি বমি ভাব, নাসিকা গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, শরীরে এ্যাশ ওঠা, শরীরে লালচে দানা ও পাতলা পায়খানা। তথ্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, জ্বর হলে বেশি বেশি তরল খাবার খাবেন। যেমন-স্যালাইন, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের রস, স্যুপ ইত্যাদি।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা করতে হবে: ঘরের বা অফিসের বা কর্মস্থলের জানালা সব সময় বন্ধ রাখতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে যতটা সম্ভব শরীর ঢেকে রাখতে পারে এমন পোশাক পরিধান করতে হবে। দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। পরিবার, প্রতিবেশী ও কমিউনিটির মধ্যে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সবাইকে সরাসরি যুক্ত হওয়ার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।
মশার প্রজনন রোধে যে কাজ করতে হবে: ঘরে ও আশপাশের যেকোনো পাত্রে বা জায়গায়, মাঠ অথবা রাস্তায় পানি জমতে দেয়া যাবে না। ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা বা নারিকেলের মালা, কন্টেইনার, মটকা, ব্যাটারি সেল, ফ্রিজে জমে থাকা পানি ৩ দিনের মধ্যে ফেলে দিতে হবে। ডেঙ্গু হলে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে।
ডেঙ্গু বিষয়ক এই বিশেষ বার্তায় জানানো হয়, ডেঙ্গু নিয়ে যেন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক না ছড়ায়। সাধারণ চিকিৎসাতেই এই জ্বর সেরে যায়। তবে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এবং হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক হতে পারে।