প্রতিনিধি ২৮ জুলাই ২০২৩ , ৭:০১:১০
বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রবেশমুখ আমিনবাজারে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে পুলিশ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আমিনবাজার ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে ব্যারিকেড বসিয়ে ঢাকামুখী বাস, মিনিবাস, প্রাইভেট কার, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সরজমিন দেখা গেছে, কোনো যাত্রী অথবা পথচারীকে সন্দেহ হলেই তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ সময় যাত্রীদের মুঠোফোন ঘেঁটে দেখার পর বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকালে সন্দেহভাজন প্রায় ২০ থেকে ৫০ জনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে প্রিজনভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সকাল ১০ টার পরে কিছু সময় তল্লাশি বন্ধ থাকলেও সাড়ে ১১টার পর থেকে ব্যাপক তল্লাশি করা হচ্ছে। এতে যানযটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে শান্তি সমাবেশের ব্যানার ধারণ করা গাড়িগুলো তল্লাশি ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। অনেকের মুঠোফোন, ব্যাগ, ম্যানিব্যাগ চেক করা হচ্ছে।এছাড়া গাজীপুরের কিছু নেতাকর্মী কে আব্দুল্লাহপুর থেকে।
এই পথের যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, মোবাইল ফোন, ব্যাগ, মানিব্যাগ ও গাড়ির সিটের নিচে পর্যন্ত তল্লাশি করা হচ্ছে।
এতে তল্লাশি চৌকি পার হতে অনেক সময় লাগছে। এদিকে মহাসমাবেশে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের মুঠোফোন তল্লাশি করা হচ্ছে। কললিস্ট যাচাই করা হচ্ছে। ডায়াল নাম্বার ধরে ধরে ফোন দিয়ে পরিচয় শনাক্ত করা হচ্ছে।
রাজবাড়ী থেকে আসা গার্মেন্ট ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক নাদিম বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ আমার মোবাইল দেখতে চান। তারা মোবাইল নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকে। চেকের সময় আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে আমি বিএনপির সমাবেশে যাচ্ছি কি না। বিএনপির কোনো নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে কি না। মোবাইলে বিএনপির কোনো নেতার সাথে ছবি আছে কি না। তাদের এতো প্রশ্ন কেন? এটা কেমন দেশ? যেখানে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা যায় না। আমার মোবাইল পুলিশ চেক করবে কেন? এই এখতিয়ার তাদের কে দিয়েছে? আসলে বলার ভাষা নেই।
গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আসা তমিজউদ্দিন বেপারী বলেন, পুলিশ গাড়িতে উঠে আমার ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে কাপড়-চোপড় উল্টিয়ে দেখে। আমার কাছে জানতে চান কোথায় যাচ্ছি। পল্টন যাচ্ছি কি না। আমি বলেছি, আমি মুরগি দোকানি মিরপুর যাচ্ছি। পরে তারা চলে যায়। এমনভাবে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যাকে সন্দেহ হচ্ছে তাকে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির মিটিং না হলে আমাগো এতো সমস্যা হতো না।
মানিকগঞ্জ থেকে আসা বিএনপির নেতা লোকমান হোসেন বলেন, দেশের মানুষের কোন অধিকার রক্ষা করছে না সরকার। সমাবেশে যোগদান আমার রাজনৈতিক অধিকার। সাংবিধানিক অধিকার। সেখানে পুলিশ আমার সেই রাজনৈতিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। আমি হেঁটেই সমাবেশের যোগ দিতে নয়াপল্টনে যাচ্ছি। কোন বাধা মানবো না। অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, মানুষের মোবাইল ফোন চেক করা হচ্ছে। মোবাইলে কি আছে ঘেঁটে দেখা হচ্ছে। অনেককেই গাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সাভার থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, সাভার থেকে মহাসমাবেশে যোগ দেয়ার উদ্দেশে আসা নেতাকর্মীদের পরিচয় পেলেই সাভারের বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করছে পুলিশ। আমিনবাজারে বাসে তল্লাশি করেও নেতা-কর্মীদের আটক করা হচ্ছে।
পুলিশ বলছে, এটা নিয়মিত তল্লাশির অংশ। সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে যাতে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে না পারে সেজন্য তল্লাশিতে জোর দেয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তল্লাশিতে কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানান তারা।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তল্লাশি জোরালো করা হয়েছে। বিভিন্ন যাত্রী পরিবহনে তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সন্তোষজনক উত্তর পেলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেকের তথ্য যাচাই করে দেখতে কিছুক্ষণ তাঁদের অপেক্ষা করানো হচ্ছে। এখনো কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে কারো বিরুদ্ধে মামলা থাকলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে।
তবে বাসের যাত্রী ও চালকেরা বলছেন, গত এক মাসেও আমিনবাজার এলাকায় এ ধরনের কোনো তল্লাশি দেখেননি তাঁরা। ধামরাই থেকে গুলিস্তানগামী একটি বাসের চালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গত এক থেকে দুই মাসে এ ধরনের তল্লাশি হয়নি। কিন্তু আজ যাত্রীদের ব্যাগ ও মোবাইল ফোন চেক করা হচ্ছে। তিন ঘণ্টা ধরে বসে আছি। গ্যাস খরচ হচ্ছে, যাত্রীদের কষ্ট হচ্ছে। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেছেন। কয়েকজনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নেয়া হয়েছে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আজ রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করছে বিএনপি।
বিএনপির এক দফায় সমর্থন জানিয়ে রাজধানীর ৯টি জায়গায় যুগপৎভাবে একই সমাবেশ করছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম, এবি পার্টিসহ ৩৭টি রাজনৈতিক দল ও জোট। অপরদিকে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ।
এর আগে গত ১২ই জুলাই বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গাবতলী ও আমিনবাজার এলাকায় একই ধরনের তল্লাশি চালানো হয়েছিল।