ঢাকায় বিএনপি’র মহাসমাবেশের দিনে সতর্ক অবস্থানে থাকতে ঢাকার পাশের ৫ জেলার নেতাদের বিশেষ বার্তা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া ঢাকার নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থেকে শান্তি সমাবেশে অংশ নিতে বলা হয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, মহাসমাবেশে বিএনপি ব্যাপকসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো করার চেষ্টা করবে এমন ধারণা থেকে ঢাকার পাশের জেলার নেতাকর্মীদের বিশেষ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। নেতাদের ঢাকায় ডেকে ওই দিনের করণীয় নিয়ে ব্রিফ দেয়া হয়েছে।
বিএনপি’র সমাবেশের দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ করবে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। এই সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে এই তিন সংগঠন। এ ছাড়া এদিন ঢাকার সব এলাকার নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঢাকার পাশপাশি মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলা নেতাদেরও এমন নির্দেশনা দেয়া হয়।
গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসব জেলার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ডেকে ওই নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে লোক আনার পাশাপাশি নিজ নিজ জেলায়ও কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে। হাতে মাত্র একদিন সময় থাকায় দলীয় নেতাদের দ্রুত সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নিতে বলেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ৫ জেলার মধ্যে দুটি জেলার আওয়ামী লীগ নেতারা মানবজমিনকে বলেন, বৃহস্পতিবার ঘিরে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অতীতে দলীয় বার্তা আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হতো।
এবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডেকে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।
আমরা দলীয় নির্দেশনা পালনে এরইমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। কী ধরনের প্রস্তুতি জানতে চাইলে তারা বলেন, বৃহস্পতিবার বিএনপি ও তাদের মিত্ররা কর্মসূচির নামে যেন কোনো ধরনের অরাজকতা কিংবা জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সেদিকটা আমরা দেখবো। কেউ জ্বালাও-পোড়াও করতে চাইলে বাধা দেবো। সতর্ক হয়ে অলিগলি থেকে শুরু করে সড়ক ও মহাসড়কে অবস্থান করবো। দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সতর্ক থাকবে। কেউ সংঘাত করতে আসলে প্রতিহত করা হবে। বিএনপি খালি মাঠ পেলে সংঘাত করতে চাইবে। আমরা সেই সুযোগ দেবো না। বিএনপি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী নয়, অস্ত্রের শক্তিতে বিশ্বাসী। এরশাদ কিংবা জিয়া কেউই জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি।
কারণ তাদের জনগণের ওপর আস্থা নেই। বিএনপি জানে নির্বাচন হলে তাদের অবস্থা কী হবে। নির্বাচনে বিএনপিকে জয়ের নিশ্চয়তা না দিলে তারা নির্বাচনের প্রতি আস্থাশীল হবে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের আর হেলায়-ফেলায় সময় কাটানোর সুযোগ নেই। এখন থেকে আর নিস্ক্রিয় থাকার সুযোগ নেই। সতর্ক থাকতে হবে আপ টু ইলেকশন। রাজপথে কোনো আপস নয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীরবিক্রম), মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ ঢাকা মহানগর, ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা। বৃহস্পতিবার বিরোধী দলের কর্মসূচি ঘিরে দেয়া বিশেষ বার্তা প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমাদের ওইদিন সতর্ক অবস্থান নিয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আগে কেন্দ্রীয় বার্তা নানা উপায়ে আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হতো। কিন্তু এবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আমাদের ডেকে গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি বোঝানো হয়েছে। আমরা যে নির্দেশনা পেয়েছি তা বাস্তবায়নে নেমে পড়েছি। আশাকরি ওইদিন জনগণের জানমালের কোনো ক্ষতি করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনার পর এরইমধ্যে থানা নেতাদের প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলা হয়েছে। রাজধানীতে ওইদিন আমরা ৫ থেকে ৬ হাজার লোক নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেবো। পাশাপাশি নিজের জেলাতেও সতর্ক থাকবো। বিশেষ বার্তা প্রসঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন মানবজমিনকে বলেন, বিরোধী দলের কর্মসূচি ঘিরে জনগণের জানমালের যেন ক্ষতিসাধন না হয় সেদিকটা দেখতে বলা হয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক হয়ে থাকবো। পাশাপাশি রাজধানীতে তরুণরা যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সেখানেও তাদের পাশে থাকবো। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ জানান, নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার পাশের ৫ জেলার নেতাদেরও ঢাকায় ডেকে দলীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, কেউ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কেউ যদি অশুভ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তখন আওয়ামী লীগ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না। বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রথমত বিএনপি যে দিন সমাবেশ ডাকবে সেদিন এত বড় ঢাকা শহরে আর কেউ সমাবেশ করতে পারবে না, এ নিয়ম তো নাই। দ্বিতীয়ত বিএনপি যখন সমাবেশ ডাকে তখন তো মানুষ আতঙ্কে থাকে, সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বা এর সহযোগী সংগঠনের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের পাশে থাকা, বিশৃঙ্খলার বিষয়ে সতর্ক থাকা। তিনি বলেন, আমরা কখনোই সংঘাত চাই না, কারণ আমরা সরকারে আছি; বরং বিএনপি সংঘাত তৈরির অজুহাত খুঁজছে। তারা যেহেতু অতীতে মানুষের সহায়-সম্পত্তি, পুলিশ, পথচারীর ওপর হামলা পরিচালনা করেছে, গাড়িঘোড়া ভাঙচুর করেছে, আগুন দিয়েছে, সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব মানুষের পাশে থাকা। সে দায়িত্ববোধ থেকেই ২৭শে জুলাই যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সম্মিলিতভাবে সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ