অন-লাইন

একটি সূত্র বিহীন রিপোর্ট তোলপাড় রাজনৈতিক অঙ্গন

  প্রতিনিধি ২০ আগস্ট ২০২৩ , ১০:৪৮:৩৩

শেয়ার করুন

একটি সূত্রবিহীন রিপোর্ট। ঢাকায় নানা আলোচনা। ভারতের শীর্ষ বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারে প্রকাশিত ওই রিপোর্টটির অনেকটা কপি প্রকাশিত হয়েছে ডয়চে ভেলে’র বাংলা ভার্সনে। দিল্লির সূত্রে প্রকাশিত দুটি রিপোর্টের ভাষাও প্রায় অভিন্ন। বলা হচ্ছে, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকার দুর্বল হলে তা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র কারও জন্যই সুখকর হবে না’- ভারত এমন বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। কূটনৈতিক নোটে বিষয়টি ওয়াশিংটনকে নয়াদিল্লি জানিয়েছে বলে রিপোর্টের ভাষ্য। আনন্দবাজারের সূত্রবিহীন রিপোর্টটি ঢাকার গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে অবিকল। চলছে নানা আলোচনা। ওই রিপোর্ট নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন প্রধান দুই দলের মহাসচিব। ওই রিপোর্টের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই ভূখণ্ডে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে।

 

ভারত কিছু বলে থাকলে নিজেদের স্বার্থেই বলেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খবরটি সত্য হয়ে থাকলে এটা হবে দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার প্রতি ভারত মর্যাদা দেবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নয়াদিল্লির বরাতে যে খবরটি প্রকাশ হয়েছে তার নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র প্রকাশ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কারও কোনো বক্তব্যও নেই। এ ছাড়া রিপোর্টে জামায়াতে ইসলামীকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে দলটিকে ছাড় দিলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ মৌলবাদের দখলে চলে যাবে। রিপোর্টে এমন ভাষ্য থাকলেও বাংলাদেশের বাস্তব পরিস্থিতি তার ধারেকাছেও নেই বলে মনে করেন অনেকে। এই মুহূর্তে দেশে জামায়াতের জনসমর্থন ৫ থেকে সাত ভাগের বেশি নয় বলে দলটির নেতাকর্মীরাই মনে করেন। তবে পর্যবেক্ষকদের ধারণা দলটির সমর্থন আরও কমও হতে পারে। এর বাইরে আরও ডজন ডজন ইসলামী দল সক্রিয় রয়েছে রাজনীতির মাঠে। এসব দলের সম্মিলিত সমর্থন জামায়াতের চেয়ে অনেক বেশি বলেই মনে করা হয়। এ ছাড়া এই মুহূর্তে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন চলছে। সেখানে যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট। সর্বশেষ ঢাকায় দলটির একটি সমাবেশ আয়োজনের পর বরং আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটির গোপন আঁতাত নিয়ে সন্দেহ করেছিলেন কেউ কেউ। সরকারি দলের একজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে দলটির এক নেতার বৈঠক নিয়েও আলোচনা হয়েছিল তখন।

দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবিতে মূল আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে বিএনপি। তাদের সঙ্গে আছে ডান, বাম, মধ্যমপন্থি প্রায় ৪০টি রাজনৈতিক দল। এর বাইরে আরও বেশ কয়েকটি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে। এই দলগুলোও নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে সক্রিয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বৃহৎ এই বিরোধী জোটের বাইরে জামায়াতকে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বলে প্রচার করা সঠিক কোনো কূটনৈতিক পর্যবেক্ষণ হতে পারে না। নয়াদিল্লি এমন ধারণা পোষণ করে থাকলে সেটি কোনোভাবেই যথার্থ হবে না। এ ছাড়া চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াত খুব একটা সক্রিয় নয়। নানা কারণে তারা কোণঠাসা অবস্থায় আছে। এই অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে দলটি আগের অবস্থানে ফিরতে পারবে- এমনটি কেউ মনে করেন না। এমন অবস্থায় বাংলাদেশে জামায়াতকে সরকারি দলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখানোকে একটি হাস্যকর প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বরং এই চেষ্টার পেছনে অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে জামায়াতের অন্যতম নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর হাসপাতালে মৃত্যুর পর দলটির নেতাকর্মীদের জোরালো প্রতিক্রিয়া হবে বলে কেউ কেউ ভেবেছিলেন। কিন্তু আদতে দলটির অবস্থান ছিল সংযত ও কৌশলী। এমন অবস্থায় জামায়াতকে মাঠে নামিয়ে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা সফল হয়নি বলে অনেকে মনে করছেন।
অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজারে প্রকাশিত রিপোর্টে-নয়াদিল্লির বার্তা প্রেরণের বিষয়টিও বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের প্রতিনিয়ত সফর বিনিময় হচ্ছে। অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক কারণে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকটি দল অতি সম্প্রতি ভারত সফর করে গেছেন।

সর্বশেষ গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের আগে বাংলাদেশ নিয়ে নানা আলোচনা ছিল। বলা হচ্ছিল, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের বিষয়টি নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলোচনায় উপস্থাপন করবেন। বৈঠকের পর দুই পক্ষের যে বিবৃতি প্রকাশিত হয় সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে- এমন কিছু বলা হয়নি। তবে একাধিক সূত্রের দাবি, নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ ইস্যুতে আলোচনার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু এ আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ইতিবাচক কোনো সাড়া মেলেনি। এ কারণে বাংলাদেশ ইস্যুতে নয়াদিল্লির তরফে প্রকাশ্যে কিছু বলা হয়নি।

নরেন্দ্র মোদির ওই সফরের পর গত জুলাইয়ের শুরুতে ভারত সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট উজরা জেয়া ও সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রভাবশালী এই দুই কর্মকর্তা আড়াই দিন দিল্লিতে কাটিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় উজরা জেয়া একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরেছিলেন। তার ওই সফরের সময়েও বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের কোনো পর্যবেক্ষণের বিষয় সামনে আসেনি।

সর্বশেষ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনিও বলেছিলেন, বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে দেশটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলবে।

 


শেয়ার করুন