জাতীয়

গুম দিবসে আবার স্বজনদের ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি

  প্রতিনিধি ৩১ আগস্ট ২০২৩ , ১২:১৩:৪৭

শেয়ার করুন

গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে ‘মুখে কালো কাপড় বেঁধে’ ঢাকায় মানববন্ধন করেছে বিএনপি। ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। মানববন্ধনে নিখোঁজ
ব্যক্তিদের স্বজনরা অংশ নিয়ে তাদের পরিজনকে ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি জানান।
গতকাল বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

কর্মসূচিতে ড. আবদুল মঈন খান বলেন, একটি প্রশ্ন করবো। কাকে প্রশ্ন করবো? আজকে একদলীয় এই বাকশালী আওয়ামী লীগ সরকারকে? প্রশ্নটি করার আগে আপনাদের স্মরণ করে দিতে চাই, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতা, সেখানে তিনি লিখেছিলেন যে অমর কবিতার, তার প্রথম লাইনটি ছিল, কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও। আজকে এই অত্যাচারী, জুলুমবাজ সরকারকে প্রশ্ন করতে চাই, কালের ক্রন্দনের ধ্বনি শুনিতে কি পাও।
তিনি বলেন, কোমলমতি শিশুরা মাইকের সামনে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে তাদের বাবার স্মৃতি নিয়ে। একজন বলেছে, আমি গুম দিবস চাই না, আমি বাবা দিবস ফিরে পেতে চাই। কল্পনা করেছেন, একটি শিশু কি মর্ম-যাতনার এই কথাটি বলতে পারে। তাই আজকে সরকারকে জবাব দিতে হবে। অন্যথায় এই কালের ক্রন্দন ধ্বনি যদি এই সরকার শুনতে না পায়, এই ক্রন্দনের বন্যায় আজকের স্বৈরাচারী সরকার ভেসে যাবে।

এখানে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, এখানে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, এখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, এখানে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, এদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
মঈন খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দিকনির্দেশনায় এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রদত্ত কর্মসূচি অনুসরণ করে আমরা এই সরকারকে বিদায় দেবো। শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যদিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে আমরা মানুষের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবো।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকে যারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন, আমরা তাদের সম্মান জানাই। এখানে সম্মাননার কথা নয়। এখানে কথা হচ্ছে, একটি বিষাদময় মুহূর্ত।
গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের ভাইকে ফিরে পাবো ততক্ষণ পর্যন্ত আপনারা (বিএনপি নেতাকর্মীরা) একসঙ্গে থাকবেন। আর আমরা (গুম হওয়া পরিবার) যে আন্দোলন শুরু করেছি, এই আন্দোলনে আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন।

গুম হওয়া মাজহারুল ইসলাম রাসেলের ভাই মশিউর রহমান লোটাস বলেন, ২০১৫ সালে ডিসেম্বরে আমার ভাইকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর দিনের পর দিন আমরা প্রশাসনের কাছে গিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে টালবাহানা করেছেন। গত ১০ বছর হলো কান্না করছি। আর কান্না করবো না। এবার এই সরকারকে টেনে নামাবো। আর যতদিন না আমাদের ভাইদের ফিরে পাবো না ততদিন আন্দোলন চলবে।
ছাত্রদল নেতা পারভেজ হোসেনের মেয়ে আদিবা হোসেন হৃদি বলে, ১০ বছর হলো আমার বাবা নিখোঁজ। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। আমি গুম দিবস পালন করতে চাই না, আমি বাবা দিবস পালন করতে চাই।
লাকসাম পৌর বিএনপি’র নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজের ছেলে শাহরিয়ার কবির রাতুল বলেন, র‌্যাব কর্তৃক আমার বাবাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে, র‌্যাব কর্তৃক গুম ও খুন হয়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, যারা গুম হয়েছে দয়া করে তাদের খুঁজে বের করুন। প্রয়োজনে তাদের আইনের আওতায় আনুন।

কর্মসূচিতে অংশ নিতে দুপুর ২টা থেকে বিএনপি’র ও এর অঙ্গ-সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানারসহ মুখে কালো কাপড় বেঁধে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন।
মানববন্ধনে গুম হওয়া পরিবারের স্বজনরা ও নেতাকর্মীরা বিচারহীনতার হবে শেষ মুক্তি পাবে বাংলাদেশ, আমার ভাইকে ফেরত চাই, প্রতিশোধ নয়, সুবিচার চাই, গুম-খুন বন্ধ করতে হবে, গুম-হত্যা, ক্রসফায়ার বন্ধ করাসহ বিভিন্ন সেøাগানের প্লাকার্ড নিয়ে অংশ নেন।

কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীর নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content