খেলাধূলা

পুরোনো নেতার হাতেই দেশের নেতৃত্ব

  প্রতিনিধি ১১ আগস্ট ২০২৩ , ৩:১২:১১

শেয়ার করুন

 

 

মাস খানেকেরও বেশি সময় ধরেই আলোচনার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। হুট করেই তামিম ইকবালের অবসর এবং নাটকীয়ভাবে আবারও তার ক্রিকেটে ফেরার ঘোষণা। যে ইস্যুটি ছিল সবার মুখে মুখে। এরপর মাস না পেরোতেই তামিম অধিনায়কের দায়িত্ব ছাড়েন। সবমিলিয়ে এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ শুরুর আগে বেসামাল অবস্থায় পড়ে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

দেশের ক্রিকেট বেসামাল অবস্থায় পড়লে নাবিক কিংবা সুপারম্যানের ভূমিকায় হাজির হন সাকিব আল হাসান। আরও একবার সেটাই দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নতুন করে টাইগারদের ওয়ানডে ফরম্যাটে নেতৃত্বের ভার নিয়েছেন। অসংখ্য ম্যাচে নিজের পারফর্ম দিয়ে ভক্তদের মুখে হাসি ফোটানো সাকিব, এবার মাঠের বাইরে থেকেই যেন সব দুঃশ্চিন্তা দূর করে দিলেন!

তামিমের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়ায় কে হবেন নতুন অধিনায়ক সেটি নিয়ে ভাবনা ছিল বিসিবির। বারবার জরুরী সভাতেও তারা মিমাংসায় যেতে পারছিলেন না। সাকিবের সঙ্গে এই দৌড়ে ছিলেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে সেসব পাশ কাটিয়ে দেশের অধিকাংশ সমর্থকেরই চাওয়া ছিল অধিনায়কের দায়িত্ব বুঝে নিক সাকিব!

 

তার আগে প্রায় চার বছর পেছনে একটু ফেরা যাক। সাকিব আল হাসান ১ বছরের নিষিদ্ধ হওয়ার দিনে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা জানিয়েছিলেন ২০২৩ বিশ্বকাপে সাকিবের নেতৃত্বে ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ। মাশরাফির সেই ‘ভবিষ্যদ্বাণীর’ অর্ধেক সত্যতা ইতোমধ্যে মিলে গিয়েছে। আসন্ন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে টাইগারদের অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন সাকিব। অনেক জল-ঘোলা হওয়ার পর এই খবরটি দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

আজ (শুক্রবার) পবিত্র জুমার দিন। জুমার নামায শেষে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সামনে বেশ হাস্যোজ্জ্বল পাপন বলছিলেন, ‘কে অধিনায়ক হবে আপনারা জানেন না, আশ্চর্য লাগছে। এটা তো যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে দিতে পারে।’ এরপরই পাপন জানান নতুন অধিনায়কের নাম।

 

বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘সামনে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ, এত কম সময়ের মধ্যে আমার কাছে মনে হয়েছে সবচেয়ে সহজ এবং অবভিয়াস চয়েজটাই হচ্ছে সাকিব আল হাসান। আরেকটা অটো চয়েজ আছে, সাকিব না খেললে সহ-অধিনায়ক যে আছে সে হবে, লিটন দাস। আরও নাম এসেছে। যেমন মেহেদী হাসান মিরাজ, লম্বা সময় যদি আমরা চিন্তা করি ভবিষ্যতে কী হবে। কারণ এখন তো ধরেন মুশফিক করছে না, তামিমও ছেড়ে দিলো, সাকিবও যদি কখনও ছেড়ে দেয় তখন কী হবে। ওরকম লম্বা সময় যখন চিন্তা করব তখন আরও নাম আসবে।’

সাকিব বাংলাদেশ দলের বাকি দুই ফরম্যাটেরও অধিনায়ক। যা তার জন্য বাড়তি কষ্টের বলেও মনে করেন পাপন, ‘আমি মনে করি, ওর (সাকিব) জন্য তিন সংস্করণে একসঙ্গে অধিনায়কত্ব করা কঠিন। এটা ওর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করতে হবে। ও কোন সংস্করণে করতে চায়, কোনটা রাখতে চায়। যদি এক-দুই সংস্করণ চায়, তাহলে একরকম। আবার ও যদি বলে তিন সংস্করণেই করতে চায়, তাহলেও সমস্যা নেই। তো ওর ব্যাপারটা জেনে তারপরে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।’

সাকিবের অধিনায়কত্বে ফেরাকে বড় ঘটনা হিসেবেই দেখছেন বোর্ড পরিচালক ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান।  সাকিব অধিনায়কত্বে ফেরা নিয়ে আকরাম বলছিলেন, ‘একজন খেলোয়াড় কিংবা অধিনায়ক যাই বলেন সবকিছুতেই সে ভালো। অনেক উঁচু মানের সে। আমাদের সবার ধারণাই ছিল সে অধিনায়ক হবে। যেহেতু এবারের বিশ্বকাপে আমরা বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছি সবাই। ওখানে মেন্টালি শক্তিশালী হওয়ার ব্যাপার আছে। সে কিন্তু পরীক্ষিত, ভারতের মাঠ সম্পর্কেও তার মুখস্ত ধারণা আছে। সবমিলিয়ে আশা করছি সে ভালো কিছু বয়ে আনবে। তাকে অধিনায়কত্ব দেওয়া খুবই ভালো সিদ্ধান্ত।’

 

তামিমের সরে যাওয়ার পর অস্থির সময়ে সাকিবের দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে আকরাম বলেন, ‘হ্যাঁ এটা অবশ্যই স্বস্তির বিষয়। তবে মিরাজ এবং লিটনের কিন্তু সামনে সময় আছে ভবিষ্যতে। ভারতে বিশ্বকাপ হওয়ায় আমরা তো একটু এগিয়ে আছি বলা যায় সেক্ষেত্রে সাকিবই বেস্ট চয়েজ।’

 

অন্যদিকে, ক্রিকেট নিয়ে সাকিবের সিরিয়াসনেস দেখে ভালো লেগেছে পাপনের, ‘ওর পটেনশিয়ালিটি নিয়ে তো কোনো সন্দেহ নেই। একটা জিনিস খুব ভালো লাগছে আমার, সাম্প্রতিক সময়ে… গত এক বছর ধরে দেখছি… সেটা হচ্ছে সাকিবকে নিয়ে আমার যে সন্দেহ ছিল, এটা আমার ব্যক্তিগত কথা, ও কতটা সিরিয়াস, কোন খেলাটা খেলবে কিংবা খেলবে না… এখন দেখছি ওর চেয়ে সিরিয়াস কেউ নেই, ক্রিকেট নিয়ে।’

‘আমাদের যে পরিমাণ খেলা, সেগুলো তো খেলছেই, কন্টিনিউয়াসলি খেলে যাচ্ছে। কানাডায় গেল, এরপর আবার শ্রীলঙ্কায়। এই যে এখন বিশ্বকাপে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব, আমার কাছে মনে হয়, সে এখন টোটালি ফোকাসড অন ক্রিকেট। এটা আমাদের জন্য খুব বড় বিষয়। ওর সামর্থ্য নিয়ে কখনও কোনো সন্দেহ থাকার প্রশ্নই ওঠে না’, যোগ করেন পাপন।

এর আগে প্রথম দফায় দলকে প্রায় দুই বছর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব। ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরের পর অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এই অলরাউন্ডারকে। এর ৬ বছর পর ২০১৭ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজা টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে গেলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট দিয়ে আবারও নেতৃত্বে ফেরেন সাকিব। একই বছরে মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো সাদা পোশাকের অধিনায়কের দায়িত্বও পান তিনি। কিন্তু ২০১৯ সালে আইসিসি কর্তৃক এক বছরের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে দ্বিতীয় দফায় সাকিব নেতৃত্ব হারান।

এরপর ২০২২ সালের জুনে টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে আবারও দলের নেতৃত্বে ফেরেন সাকিব। মাস কয়েক পরই টি-টোয়েন্টির নেতৃত্বও পান তিনি। আর এবার পেলেন ওয়ানডের অধিনায়কত্ব। তাতে প্রায় এক যুগ পর আবারও তিন ফরম্যাটে সাকিবের নেতৃত্বে খেলবে বাংলাদেশ।

 

সাদা পোশাকে তিন দফায় ১৯ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। যেখানে ৪ জয়ের বিপরীতে ১৫ টেস্টে হেরেছে টাইগাররা। ওয়ানডেতে দুই দফায় ৫০ ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে তিনি অধিনায়কত্ব করেছেন। যেখানে ২৩ জয়ের বিপরীতে ২৬ হার। বাকি একটি ম্যাচে কোনো ফলাফল আসেনি। আর টি-টোয়েন্টিতে তিন দফায় সাকিবের নেতৃত্বে ৩৯ বার মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। যেখানে ২৩ হারের বিপরীতে ১৬ বার হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছে টাইগাররা।

সাকিবের নেতৃত্বে কেমন করবে বাংলাদেশ আপাতত সে আলোচনার চেয়ে বড় স্বস্তির খবর তার অধিনায়ক হিসেবে ফেরা-টা। মাঠের বাইরের শত সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে যে ব্যক্তি কোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটান সেই সাকিবই কি পারবেন দেশকে বড় কোনো ট্রফি এনে আনন্দের সাগরে ভাসাতে? অবশ্য সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী কয়েক মাস।

 


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content