প্রতিনিধি ২৯ আগস্ট ২০২৩ , ১০:১২:৪৩
অব্যাহতভাবে একটি বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন ঢাকায় নবনিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন লেভেলের সাক্ষাৎ, বৈঠক এমনকি সর্বশেষ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকেও তিনি অভিন্ন বার্তা স্পষ্ট করেছেন। তাহলো- আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে এখনই বিরোধী দল এবং ভিন্নমতের লোকজনের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা এবং অবিশ্বাস দূর করতে হবে। এমন কোনো ম্যাকানিজম বের করতে যাতে স্টেকহোল্ডাররা এটি বিশ্বাস করে যে, নির্বাচনটি অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সবার সমান সুযোগ থাকবে। বিরোধীদের আস্থায় নেয়ার এই উদ্যোগ সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশন যে কেউ নিতে পারে। দায়িত্বশীল একাধিক কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে জানিয়েছে, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিয়ে শঙ্কিত বৃটেন। এ জন্য হাইকমিশনার এবং সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা সফর করে যাওয়া বৃটিশ সরকারের প্রতিনিধিদের প্রায় সকলেই দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন দেখার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছেন। হাইকমিশনার তথা বৃটিশ সরকার মনে করে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার আগাম গ্যারান্টি পেলে বৃটেনের বড় বড় বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসবে, অন্যথায় বিদ্যমান বিনিয়োগে টান পড়া তথা ব্যবসা-বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়বে। তবে দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র এটাও জানিয়েছে- বিরোধীদের মধ্যে আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগী হওয়ার যে বার্তা দিচ্ছে বৃটেন তাতে খুশি নন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্বরা।
এ ব্যাপারে সরাসরি কিছু না বলা হলেও কূটনৈতিক ভাষায় এটা খোলাসা করা হয়েছে যে, সরকার সংবিধানের বাইরে যেতে অনিচ্ছুক।
বৃটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিনিধি মনে করেন, নির্বাচন, সংলাপ এবং সমঝোতার আকাক্সক্ষায় বৃটেন যেসব প্রস্তাব দিচ্ছে তা থেকে তারা সরবে না। আগামী মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দুই দেশের মধ্যকার স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগেও এসব বিষয় তুলবে বৃটিশ সরকারের প্রতিনিধিরা। অবশ্য ঢাকার তরফে সম্ভাব্য আলোচ্যসূচি কী হতে পারে ব্যাখ্যামূলক জবাবের প্রস্তুতি চলছে। ওই সংলাপে নেতৃত্ব দিতে বৃটিশ পররাষ্ট্র সচিব (পারমানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি) ফিলিপ বার্টন একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকা আসছেন।
স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগের আলোচ্যসূচি চূড়ান্ত হয়নি, তবে…
সেগুনবাগিচা জানিয়েছে, হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশ আসন্ন স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগের আলোচ্যসূচি প্রস্তাব করেছে। গেস্ট বৃটেনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা, সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে সংলাপের আগেই এটি চূড়ান্ত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে, রোববার অবধি বৃটেনের তরফে প্রস্তাবিত আলোচ্যসূচির বিষয়ে কোনো রিপ্লাই বা সংযোজন-বিয়োজনের পাল্টা প্রস্তাব আসেনি। ঢাকার কর্মকর্তারা এটাও নিশ্চিত করেছেন যে, যেহেতু অবধারিতভাবে বৃটেনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসবে, এ জন্য খসড়া আলোচ্যসূচিতেই ঢাকা বিষয়টি আগাম প্রস্তাব করে রেখেছে।
প্রায় দুই বছরের বিরতির পর আগামী মাসে ঢাকায় পঞ্চম কৌশলগত সংলাপে বসছেন বাংলাদেশ ও বৃটেনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বাদশ নির্বাচনের প্রাক্কালে অনুষ্ঠেয় ওই স্ট্র্যাটেজিক বা কৌশলগত সংলাপের বাড়তি তাৎপর্য রয়েছে। সঙ্গত কারণেই এতে রাজনৈতিক এবং অর্থনীতি সংকটের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক সাইদা মুনা তাসনিম এবং ঢাকাস্থ বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকসহ উভয় পক্ষের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা স্ট্রাকচার্ড ওই সংলাপে অংশ নিচ্ছেন। এতে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুই দেশের সহযোগিতার নতুন পরিসর নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা মিলেছে। বিশেষ করে গত এপ্রিলে বাংলাদেশ যে ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক (আইপিও) ঘোষণা করেছে তা নিয়ে কথা হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংলাপটি এমন সময়ে হতে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশের ২০১৪ এবং ’১৮ সালের প্রশ্নবিদ্ধ দু’টি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি রোধ এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার মানসে এখনই উদ্যোগী হতে বৃটেনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরকারের উপর চাপ তৈরি করেছে। স্মরণ করা যায়, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে অনুষ্ঠিত চতুর্থ অংশীদারিত্ব সংলাপেও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়েছিল বৃটেন। আসন্ন সংলাপ উপলক্ষে গত রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতার বিভিন্ন দিক এবং সর্বশেষ সংলাপের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তার বরাতে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, আসন্ন সংলাপের প্রস্তাবিত খসড়ায় বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, উন্নয়ন সহায়তা, সুশাসন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা সংকট, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের মতো দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি থাকছে। গণতন্ত্র ও সুশাসনের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য নাগরিক সমাজের কাজের ক্ষেত্র নিশ্চিত করা, শ্রম অধিকার, মত প্রকাশ, গণমাধ্যম ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার তাগিদ আসতে পারে।