আওয়ামিলীগ

১৫ই আগষ্ট আজ জাতীয় শোক দিবস

  প্রতিনিধি ১৪ আগস্ট ২০২৩ , ১০:০১:০৮

শেয়ার করুন

আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৫ আগস্ট জাতির সবচেয়ে বেদনাবিধুর দিন। এদিন ভোর রাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একইসঙ্গে হত্যা করা হয় তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের। সেদিন দেশের বাইরে থাকার কারণে বেঁচে যান দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী মহিয়সী নারী বেগম ফজিলাতুনন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভ্রাতা শেখ আবু নাসের, জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা, আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ কামাল, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় পুত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত সেনানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল, বঙ্গবন্ধুর আদরের কনিষ্ঠ পুত্র নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও ব্লু উপাধিপ্রাপ্ত দেশসেরা অ্যাথলেট সুলতানা কামাল ও শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক, জাতির জনকের ভগ্নিপতি মন্ত্রিসভার সদস্য আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্ব বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী।

১৫ আগস্ট সকালেই বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক কুচক্রীদের নিয়ে ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। সুপরিকল্পিত এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত ছিল, পাশাপাশি সেনা বাহিনীর চাকরিচ্যুত কিছু অফিসার, খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক স্খলিত নেতা জড়িত ছিলেন।

খুনিদের বাঁচাতে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল সায়েম রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলে জিয়া রাষ্ট্রপতি হন। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট থেকে ‘৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতা দেওয়া হয় এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশে। সংশোধনীটি পাস হয় ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল। সংসদে উত্থাপিত আইনটির নাম ছিল ও সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯।

জিয়াউর রহমান নিজেও নির্মমভাবে নিহত হন ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা, তার মৃত্যুর পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার, এইচ এম এরশাদ ও ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল বা রহিত করেননি। ৭৫ পরবর্তীতে খুনিদের বিচার না করে তাদের বিদেশে পাঠিয়ে চাকরি দেওয়া হয়। এমনকি সংসদ সদস্যও বানানো হয়। ফলে খুনিরা ১৫ আগস্টের হত্যার কথা প্রকাশ্যে প্রচারে কোনও দ্বিধাই করেনি বরং ঔদ্ধত্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে, দেশে বিদেশে চাকরি ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে বিলাস জীবন যাপন করেছে। এরশাদ সরকারের আমলেও খুনিরা বিদেশে যাওয়া, ব্যবসা বাণিজ্য চাকরি পদোন্নতি সুবিধা পান।

নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এভাবে দীর্ঘদিন জাতির জনকের হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় আসার পর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস সরকারিভাবে ঘোষণা করে। ১৯৯৮ সালে ৮ আগস্ট এই ঘোষণা করা হয় যে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন। সরকারি সরকারি ছুটির দিন। পালনও শুরু হয় যথার্থ মর্যাদার মধ্য দিয়ে কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে ২০০২ সালে ২ আগস্ট তা বাতিল করে দেয়।

অতপর ২৭ জুলাই-২০০৮ তে হাইকোর্টের এক যুগান্তকারী রায়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটি বহাল রাখার পক্ষে রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সাল থেকে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন ও দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে আইনি বাধা দূর করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ (রহিতকরণ) বিল সপ্তম সংসদে উত্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর আইনটি সংসদে পাস হয়। ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর এটি পরিপূর্ণভাবে আইনে পরিণত হয়। এর মাধ্যমে মোশতাকের জারি করা ও জিয়ার সময় বৈধতা পাওয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বিলুপ্ত হয়।

এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়ের করা হয় ও আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২ অক্টোবর, ১৯৯৬ সালে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন মামলার বাদি বঙ্গবন্ধুর রেসিডেন্ট পিএ আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম। মামলায় অভিযোগ গঠন হয় ’৯৮-এর ৬ এপ্রিল। শুনানির সমাপ্তি হয় ১৩ অক্টোবর, ১৯৯৮ এবং নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণা হয় ৮ নভেম্বর, ১৯৯৮। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল রায় ঘোষণা করে ১৫ জন আসামিকে মৃত্যুদ- দেন। চার আসামি হাইকোর্টে করা আপিল ২০০০ সালের ৩০ মার্চ হাইকোর্টের কার্যতালিকায় রাখা হয়। ২৮ জুন এক দ্বৈত বেঞ্চে শুনানি শুরু হয় এবং ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর সিনিয়র বিচারপতি মো. রুহল আমীন ১০ আসামির ফাঁসির দন্ড বহাল রাখেন। অন্যদিক কনিষ্ঠ বিচারপতি এ বি এম খায়রুল ১৫ আসামির ফাঁসি বহাল রাখেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ১২ আসামির মৃত্যুদ- বহাল থাকার পক্ষে রায় দেন।

২০০১ সালের অক্টোবরে নির্বাচনে বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় আসে। এই জোট এর ৫ বছরে লিভ টু আপিলের কোনও শুনানি হয়নি। বিচারক সংকটের বিএনপি জামাত জোট সরকার রাজনৈতিক কারণে মামলার নিষ্পত্তি করেনি। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত সরকারও বিচারকের সংকট কথা বলে শুনানি অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করেনি।

২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আপিল বিভাগের বিচারক সংখ্যা ৭ থেকে ১১ তে উন্নীত করা হয়। ফলে ৫ অক্টোবর, ২০০৯ এ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানি শুরু হয়। ১২ নভেম্বর, ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানি ২৯ কার্যদিবসে শেষ হয়। ১৯ নভেম্বর, ২০০৯ এ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায়ের তারিখ ঘোষণা ও তৃতীয় বেঞ্চের রায় বহাল রেখে পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করা হয় এবং ১২ আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়। ২৪ জানুয়ারি, ২০১০ রিভিউ পিটিশনের ওপর শুনানি শুরু হয় যা ২৭ জানুয়ারি, ২০১০ তারিখ পিটিশনের খারিজ করে দিয়ে রায় বহাল। ওই দিনই রাতেই অর্থাৎ ২৭ জানুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে থেকে ১২টা ২৫ মিনিটে (অর্থাৎ ২৮ জানুয়ারি ২০১০) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধুর খুনি লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), লে. কর্নেল (অব.) একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), মেজর (অব.) বজলুল হুদা, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান ও লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খানের ফাঁসি কার্যকর হয়। অন্যদিকে পলাতক আমামিদের মধ্যে ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদকে ভারত থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল তার ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়। এছাড়া লে. কর্নেল (অব.) আব্দুল আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুতে মারা যান।

এখনও পলাতক রয়েছে লে. কর্নেল (অব.) খোন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) এন এইচএমবি নূর চৌধুরী, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন।

খুনিদের ছবি আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল ছাড়াও বিশ্বের প্রতিটি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে রাখার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। আমরাও চাই এইসব প্রক্রিয়া ফলপ্রসূ হোক।

জাতীর পিতার শাহাদৎ এর শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত করতে সব অপশক্তিকে নির্মূল করতে হবে এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content