শিক্ষা

প্রাথমিকে বৃত্তি না পেলে পড়াশোনাই হতো না বিসিএস ক্যাডার ইমরোজের

  প্রতিনিধি ৫ আগস্ট ২০২৩ , ৯:০৩:৩৭

শেয়ার করুন

 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ শেষে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অভাবের কারণে ছেলে বেলায়েত হোসেন ইমরোজকে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি করতে রাজি হননি চায়ের দোকানি বাবা শামছুল তালুকদার। পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার পর পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকার পরও অভাবের কারণে বাবার দোকানের পুরোদস্তুর চা বিক্রি শুরু করেন। পরে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ায় গ্রামের শিক্ষকসহ স্বজনদের অনুরোধে ছেলেকে পড়াতে রাজি হন বাবা।

অভাবের কারণে যে ইমরোজের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেই ইমরোজ এখন বিসিএস ক্যাডার। তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিকে বৃত্তি না পেলে তার পড়াশোনা আর করাই হত না।

 

সম্প্রতি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ৪১তম পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে মেধা তালিকায় ২য় স্থান অর্জন করেন ইমরোজ। তিনি শরীয়তপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম বিনোদপুর বাছার কান্দির চায়ের দোকানি শামছুল তালুকদার ও হালিমা বেগম দম্পত্তির একমাত্র ছেলে।

জানা যায়, ইমরোজ শরীয়তপুর সদর উপজেলার ৩১নং পশ্চিম বিনোদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে প্রাথমিক বৃত্তি, বিনোদপুর মৌলভীকান্দি দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল ও শরীয়তপুর সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ২০১৪ সালে জিপিএ-৫ পান। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।

অভাবের কারণে এক সময়কার চা বিক্রেতা ও ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে চুড়ান্তভাবে সুপারিশ প্রাপ্ত বেলায়েত হোসেন ইমরোজের সঙ্গে কথা হয় । তিনি বলেন, প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর বাবা আমাকে আর স্কুলে ভর্তি করেননি অভাবের কারণে। গ্রামের রাস্তার পাশে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান ছিল আমাদের। সেই দোকানে নিয়ে চা বিক্রি করতে বসিয়ে দেন বাবা। বন্ধুরা হাইস্কুলে ভর্তি হলেও টাকার অভাবে আমার আর ভর্তি হওয়া হয়নি। বছরের তিন মাস কেটে যাওয়ার পর বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে জানতে পারি আমি বৃত্তি পেয়েছি। বৃত্তি পাওয়ার খবর শুনে আমার শিক্ষক ও মামা এসে বাবাকে বুঝিয়ে আমাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। বাবা পড়াশোনার খরচ দিতে পারত না বলে বৃত্তির প্রাপ্ত টাকা দিয়েই আমি পড়াশোনার খরচ বহন করি। এভাবেই কষ্ট করে আমি দাখিল ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই।

 

ইমরোজ আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভগ্নিপতির কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম চাকরি পেয়ে শোধ করার শর্তে। ২০১৪-১৫ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা শুরু করি। মা মানসিক ভাবে ও মামা আনিছুর রহমান আর্থিকভাবে আমাকে পড়াশোনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। এই খুশির দিনে মা, বাবা ও মামাসহ আমার সকল শিক্ষাগুরুর নিকট আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তারা না হলে আমার হয়ত আজকের এ ফলাফল করা সম্ভব হতো না। আমি চাই গ্রামের কোনো কলেজে শিক্ষকতা শুরু করব। আমি আমার মতো ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের পাশে সারাজীবন থাকতে চাই

ইমরোজের বাবা চায়ের দোকানদার শামছুল তালুকদার বলেন, ছেলেটাকে আমি অভাবের কারণে চায়ের দোকানে বসাই। আমার ছেলে ইমরোজ এখন বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। আমি অনেক আনন্দিত। ওরে আমি পড়াশোনার জন্য টাকা-পয়সা ও ভালো পরিবেশ দিতে পারিনি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি, আমার ইমরোজের জন্য সবাই দোয়া করবেন।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম তপাদার বলেন, ইমরোজের বাবা একজন দরিদ্র চা বিক্রেতা। অভাবের কারণে ছেলেকে পড়াতে চাননি। বৃত্তি পাওয়ার পর ছেলেকে পড়িয়েছেন বলে এখন ইমরোজ বিসিএস ক্যাডার। দেশের গরীব মেধাবীরা ভালো জায়গায় সুযোগ পেলে দেশ এগিয়ে যায়। আমি ইমরোজকে অভিনন্দন জানাই। আশা করছি, ইমরোজ দেশ ও দশকে ভালো কিছু দিতে পারবে।

 


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content