নতুন অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ে ১৫.২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে একই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১০.২৭ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা
গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সদ্য বিদায়ী মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারের (১.৯৭ বিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় (১ ডলার সমান ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) এর পরিমাণ ২১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকার বেশি। এটি আগের মাস জুনের তুলনায় ২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার কম। অর্থাৎ জুলাই মাসে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসা কমেছে ১০.২৭ শতাংশ। জুনে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ঈদুল আজহার পরের মাস হওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
কোরবানির ঈদ ঘিরে জুনে তিন বছরের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স দেশে আসার পর জুলাই মাসেই প্রবাসী আয় আগের বছরের চেয়ে কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার রেমিট্যান্সের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, জুলাই মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে এসেছে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার, যা গত বছরের জুলাইয়ে আসা রেমিট্যান্সের চেয়ে ৫.৮৭ শতাংশ কম।
গত বছরের জুলাই মাসে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বৈধপথে দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর এ বছর জুন মাসে দেশে এসেছিল ২২০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স, যা এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ডলার সংকটের মধ্যে রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হুন্ডি রোধে প্রবাসী আয় সংগ্রহে বিনিময় হারে সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস এসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা দাম দিচ্ছে, যা কার্যকর হয়েছে আগস্টের প্রথম দিন থেকে। এরসঙ্গে আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার; কাগজপত্রের শর্তও শিথিল করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যেও প্রবাসী আয় ওঠানামা করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, জুলাই মাসে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৬৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সরোয়ার হোসেন বলেন, ডলারের সংকট কমে আসছে। ব্যাংকগুলোতে ডলারের মজুতও বাড়ছে। প্রবাসী আয়ও ভালো পরিমাণে আসছে। বিদায় নেয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে প্রবাসী আয় বাড়ে প্রায় ৩ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে ছিল নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি, ঋণাত্মক ১৫.১২ শতাংশ।
এদিকে ইপিবি হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে জুলাইয়ের রপ্তানি আয়। ইতিবাচক ধারা বজায় রেখে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানিতে উল্লম্ফন হয়েছে; আগের অর্থবছরের একই সময়ের থেকে আয় বেশি এসেছে ১৫.২৬ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আড়াই শতাংশ এগিয়ে থেকে জুলাইয়ে রপ্তানি থেকে মোট আয় এসেছে ৪৫৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই মাসে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
ইপিবি’র তথ্যমতে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির পেছনে ছিল বরাবরের মতো তৈরি পোশাক খাতের উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রভাব। এ খাতে ১৭.৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে।
চলতি অর্থবছরে ৬২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার; তাতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১১.৫৯ শতাংশ। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাপক ওঠানামা করার পর পণ্য রপ্তানি থেকে আয় এসেছিল ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬.৬৭ শতাংশ। তবে তা ৫৮ বিলিয়ন ডলারের মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ছিল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আড়াই বিলিয়ন ডলার পিছিয়ে ছিল রপ্তানি আয়।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের খাতভিত্তিক রপ্তানি তথ্যে দেখা যায়, আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস তৈরি পোশাকে ১৭.৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। মোট রপ্তানি হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য। এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২২৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের (প্রবৃদ্ধি ২২.২৪ শতাংশ) এবং ওভেন পোশাক বিদেশে গেছে ১৬৮ কোটি ৭২ লাখ ডলারের (প্রবৃদ্ধি ১১.৫৪ শতাংশ)।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতের মধ্যে ৭ কোটি ২৫ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে, যেখানে প্রবৃদ্ধি ১৪.৫৩ শতাংশ। ৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হলেও আগের অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে তা সামান্য কম (০.৬৮ শতাংশ)। আর ৬ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছে যেখানে প্রবৃদ্ধি ২.৭৫ শতাংশ। ৪ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি হয়েছে; প্রবৃদ্ধি ১৪.৪১ শতাংশ।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রপ্তানি আয় বাড়ার মূল কারণ ইউনিট প্রতি পোশাকের মূল্য বেড়েছে। ক্রয় আদেশ কম হওয়ায় রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ কমে গেছে। কিন্তু উচ্চ মূল্যের কারণে রপ্তানি আয় বেড়েছে। তিনি বলেন, আমরা এখন উচ্চ মূল্যের পোশাক তৈরি করছি। পণ্যের মধ্যে অনেক বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। এছাড়া কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব-আমিরাতসহ নতুন নতুন বাজারে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে, যা সামগ্রিকভাবে রপ্তানি আয় সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখছে।
বৈশ্বিক পর্যায়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পোশাক রপ্তানির পরিসংখ্যাণ প্রকাশিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডব্লিউটিও’র হিসেবে ২০২২ সালে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের মার্কেট শেয়ার অনেক বেড়েছে। যা সত্যিকার অর্থে আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির খবর। তিনি বলেন, ২০২১ সালের তুলনায় গতবছর ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। ২০২১ সালে বৈশ্বিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশের মার্কেট শেয়ার ছিল ৬.৩৭ শতাংশ। ২০২২ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৮৭ শতাংশ। তবে পোশাক রপ্তানির উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ভ্যাট ও শুল্ক সংক্রান্ত সেবা আরও সহজ করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি।
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ