সারাদেশ

বাড়ি ছাড়া করা সেই বৃদ্ধা মায়ের পাশে জেলা প্রশাসন

  প্রতিনিধি ২৩ আগস্ট ২০২৩ , ৩:৪৮:৩০

শেয়ার করুন

 

 

মায়ের জমি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া সেই বৃদ্ধা মা তছিরনের পাশে দাঁড়ালেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি আর সরওয়ার। বুধবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হককে সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধা তছিরনের কাছে যান ইউএনও।

এর আগে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) ‘জমি লিখে নিয়ে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন ছেলে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি ইউএনওর নজরে আসলে তিনি অসহায় বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ান ।

তছিরন বেওয়া (৭৫) আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবদা গ্রামের মৃত আনছার আলীর স্ত্রী। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন (৫৫) বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে ও ছেলের বউ আম্বিয়া (৪৮)।

জানা গেছে, জন্মের পর থেকেই বাবা মাকে হারিয়ে অন্যের আশ্রয়ে বড় হয়ে উত্তর গোবদা গ্রামের আনছার আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় তছিরনের। এক ছেলে এক মেয়ে রেখে আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বামী আনছার আলী মারা যান। মাত্র ৬ মাস বয়সী মেয়ে আনিছা ও ৩ বছর বয়সী ছেলে আনোয়ার হোসেনকে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে বড় করেন। ছেলে মেয়ের কথা চিন্তা করে নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের মুখ দেখে কাটিয়ে দেন যৌবন।

বৃদ্ধা তছিরন বেওয়ার সঙ্গে তার ছেলের সমস্যার সমাধান করে দেন ইউএনও
দীর্ঘ দিন অন্যের জমিতে বসবাস করে ছেলে মেয়ের বিয়ের পর পৈত্রিক সূত্রে ৫৪ শতাংশ জমি পান তছিরন বেওয়া। ফলে সেই জমিতে শেষ বয়সে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় তার। এখন সেই জমিই কাল হয়ে দাঁড়ায় বৃদ্ধার। বাড়ি করা ১১ শতাংশ জমি ছেলে আনোয়ার হোসেনকে ও চাষাবাদের জমির ১৫ শতাংশ মেয়ে আনিছাকে দলিল করে দেন বৃদ্ধা। বাকী জমিতে আসা ফসল আর বয়স্ক ভাতার টাকায় চলত তার সংসার খরচ। ছেলে ও ছেলের বউ আম্বিয়ার আচরণে নিজে রান্না করে খেতেন তিনি।

গত ১০ মাস আগে ছেলে আনোয়ার হোসেন চাষাবাদের বাকী ২৮ শতাংশ জমি মায়ের কাছ থেকে দলিল করে নেন। এরপর মায়ের উপর অত্যাচার বাড়িয়ে দেন। খোঁজ খবর নেওয়াও বন্ধ করে দেন। উলটো বিগত দিনে চিকিৎসা বাবদ মায়ের পিছনে খরচ হওয়া ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। সম্বলহীন বৃদ্ধা তছিরন সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ৪ মাস আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ছেলে আনোয়ার ও ছেলের বউ আম্বিয়া।

ঘটনাটি জানতে পেরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহর নির্দেশে বৃদ্ধা তছিরন বেওয়ার খোঁজ খবর নিতে তার বাড়িতে যান আদিতমারী উপজেলার ইউএনও জি আর সারওয়ার। সেখানে বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে মা ছেলের মাঝে সমঝোতা করে দেন তিনি।

ছেলের বউয়ের আচরণে বৃদ্ধা তছিরন বেওয়া ছেলের বাড়িতে পুনরায় ফিরতে অস্বীকৃতি জানালে মেয়ের বাড়িতেই থাকার ব্যবস্থা করেন ইউএনও। পরে মায়ের ভরন পোষণের জন্য প্রতি মাসে নগদ টাকা ও ধান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বৃদ্ধার ছেলে আনোয়ার হোসেন।

ইউএনও জি আর সারওয়ার বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে বৃদ্ধা তছিরনের বাড়িতে গিয়ে তাদের মা-ছেলের বিরোধ নিষ্পত্তি করেছি। বৃদ্ধার কথামতো তাকে মেয়ের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেছি। মায়ের ভরণপোষণের খরচ দিবেন ছেলে আনোয়ার।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content