প্রতিনিধি ৮ আগস্ট ২০২৩ , ৯:৪০:৫৪
বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি শান্তি সমাবেশ করে রাজপথে নিজেদের শক্তি দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দলকেও মাঠে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীতে ২ টি সমাবেশও করেছে ১৪ দল। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। সর্বশেষ ৬ই আগস্ট গণভবনে অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভা থেকে দেয়া হয়েছে দলীয় নির্দেশনা।
নির্বাচনে কারা মনোনয়ন পেতে পারেন সে বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করছেন নিরলসভাবে। বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। এমনকি অনেক সম্ভাব্য প্রার্থীর গোয়েন্দা প্রতিবেদনও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হাতে এসেছে। কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা মানবজমিনকে বলেন, বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো সরকারের পতন চাইছে।
এ নিয়ে তারা আন্দোলন ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ একসঙ্গে নির্বাচন প্রস্তুতি ও আন্দোলন এ দু’টি বিষয় নিয়ে কাজ করছে।
তারা জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে এমনটি ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীদের নানা ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদেরকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় কাজ করতে বলা হয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে সরকারের উন্নয়ন প্রচার করতে বলা হয়েছে। যার জনপ্রিয়তা বেশি তাকে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। নির্বাচনের জন্য দুই-তিনমাস খুব বেশি সময় নয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বশেষ গত ২রা আগস্ট রংপুর জিলা স্কুল মাঠে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে অংশ নেন। সেখানে তিনি নৌকার পক্ষে ভোট চান।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গত ৬ই আগস্ট রোববার বিশেষ বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়। সেখানে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা মূলত নির্বাচনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। দলীয় নেতা-কর্মীরাও ওই বার্তা নিয়ে এলাকায় ফিরেছেন। ওইদিন প্রায় সাত ঘণ্টার আলোচনা শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে যেসব নেতাকে দলীয় প্রার্থী করা হবে তাদের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সবাইকে নৌকার হয়ে কাজ করতে হবে। কে মনোনয়ন পেলো আর কে পেলো না তা নিয়ে বিতর্ক করা যাবে না। এ সময় তিনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হাত তুলে নেতাদের সমর্থন জানাতে বললে উপস্থিত সবাই হাত তুলে সমর্থন জানান।
ওই বৈঠকের একদিন পরই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে যেসব নির্বাচনী এলাকায় দলীয় কোন্দল চরমে, সেসব এলাকা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট নেতাদের ঢাকায় তলব করা হবে। প্রয়োজনে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাও হস্তক্ষেপ করবেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি ও এর সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই সাংগঠনিক ঐক্যবদ্ধ শক্তির মাধ্যমে জবাব দিতে দলের সব পর্যায়কে শক্তিশালী করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা দু’টি বিষয়ে গুরুত্ব দেবো। বিষয় দু’টি হলো- দল গোছানো ও বিভিন্ন জেলায় দলের ভেতর যেসব ভুল বোঝাবুঝি আছে, সেগুলা দূর করা।
আর মনোনয়নের ব্যাপারটি চূড়ান্ত করা। এই দু’টি বিষয় নিয়েই দলীয় কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ চলছে। একই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দল হিসেবে সবসময় নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকে। আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জনমত প্রতিফলিত হোক- এমনটাই আমরা চাই। গণমুখী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই এই দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। রাজপথের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় একটি দল। রাজপথে আন্দোলন করেই দলটি এদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে। তাই যারা এর বিপক্ষের শক্তি হিসেবে মাঠে নামবে তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি চলবে। সেটা শান্তি সমাবেশ নামে হোক কিংবা অন্য কোনো নামে হোক। বাংলাদেশের মানুষের জানমালের কোনো ক্ষতি হতে দেয়া যাবে না। তাই নির্বাচন প্রস্তুতি ও রাজপথের আন্দোলনে আমাদের সরব ভূমিকা থাকবে।