চলতি আগস্ট মাসে চাল রপ্তানিতে একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। প্রথমে বাসমতি ছাড়া অন্যান্য চালের রপ্তানি আগেই নিষিদ্ধ করা হয়। পরে সিদ্ধ চালের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং একদিন পর বাসমতি চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি।
তবে এতোসব বিধিনিষেধ পাশ কাটিয়ে ‘বিশেষ সম্পর্ক’ বিবেচনায় সিঙ্গাপুরে চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এ বিষয়ে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করবে দেশটি।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআইয়ের বরাত দিয়ে বুধবার (৩০ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের সাথে ‘বিশেষ সম্পর্কের’ পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির ‘খাদ্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা মেটাতে’ চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।
সিঙ্গাপুরে চাল রপ্তানির বিষয়ে মিডিয়ার প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘ভারত এবং সিঙ্গাপুরের মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক, ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং জনগণের মধ্যে শক্তিশালী সংযোগ রয়েছে। এই বিশেষ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে, সিঙ্গাপুরের খাদ্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা মেটাতে দেশটিতে চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
অবশ্য চলতি সপ্তাহে সিদ্ধ চালের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের একদিন পর বাসমতি চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। গত রোববার দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে প্রতি টন বাসমতি চাল রপ্তানির মূল্য বেধে দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, প্রতি টন বাসমতি চাল এক হাজার ২০০ ডলার দরে বিক্রি করতে হবে। এই মূল্যসীমার কমে যেসব চাল রপ্তানির চুক্তি আগে করা হয়েছে, সেসব চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিতের নির্দেশও দেওয়া হয়।
দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় গত রোববার এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, বাসমতি ছাড়া অন্যান্য চালের রপ্তানি আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাসমতির মোড়কে অন্যান্য চাল রপ্তানি করা হচ্ছে বলে সরকারি তদন্তে উঠে আসার পর নতুন এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, অভ্যন্তরীণ মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে গত ২০ জুলাই থেকে বাসমতি ছাড়া অন্য সাদা চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে ভারত। পরে বাসমতি চালসহ অন্যান্য চাল রপ্তানিতেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
ভারত নতুন করে এসব বিধিনিষেধ আরোপ করায় অন্যতম প্রধান এই খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আর এর মধ্যেই বিধিনিষেধ পাশ কাটিয়ে ‘বিশেষ সম্পর্ক’ বিবেচনায় সিঙ্গাপুরে চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত। বিশ্ববাজারে মোট চাল রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশই যায় ভারত থেকে। চাল রপ্তানির শীর্ষে থাকা অন্য দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্র।
গত বছর ভারত ১৪০টি দেশে ২২ মিলিয়ন টন চাল রপ্তানি করেছে। যার মধ্যে ৬ মিলিয়ন টন ছিল তুলনামূলক কমদামী ইন্ডিকা চাল। (গত বছর বিশ্বব্যাপী চাল আমদানি-রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন টন)।
২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী যত চাল আমদানি-রপ্তানি হয়েছে তার ৭০ শতাংশ ছিল ইন্ডিকা চাল, আর এখন ভারত সেই চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। গত বছর দেশটি খুদের চাল এবং বাসমতি চাল রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ কর আরোপ করে। এরপরই আসে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা।
তবে ‘বিশেষ সম্পর্কের’ কারণে সিঙ্গাপুরে ভারত চাল রপ্তানি করতে চললেও প্রতিবেশী অন্য কোনও দেশ এই তালিকায় তার নাম দেখতে পেল না।
সম্পাদকঃ মাহবুবা আক্তার। অফিসঃ ৭৫ ই-ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক এনওয়াই ১০০০২।ফোন:+৮৮০১৭১২৯০৩৪০১ ই- মেইলঃ dailyhaquekotha@gmail.com
প্রকাশিত সংবাদপত্রের অংশ