প্রতিনিধি ২ আগস্ট ২০২৩ , ১১:২৪:৪০
লীগ সরকারই কাজ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসায় মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে, কৃষকের উন্নয়ন হয়েছন, খাদ্যে স্বয়ং সম্পন্নতা অর্জন হয়েছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। বুধবার বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকেও আমি খালি হাতে আসিনি। আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। ২৭টি উন্নয়নপ্রকল্প উদ্বোধন করেছি। যাতে প্রত্যেকটা উন্নয়ন তরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা করেছি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, অনেকে ক্ষমতায় ছিল কিন্তু রংপুরের ভাগ্য উন্নয়নে কেবল নৌকা মার্কা কাজ করেছে। আজকে হতদরিদ্র বলতে কিছু নেই। আল্লাহর রহমতে থাকবেও না। দেশের মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসে গেছে। এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে।
এ এলাকার আরও উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাব। এ সময় উপস্থিত জনতার কাছ থেকে নৌকায় ভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি নেন সরকারপ্রধান। বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আমার আপনজন। আপনাদের মাঝে আমি বাবা-মা, ভাই-বোনের আদর-স্নেহ ও ভালোবাসা পাই।
তিনি বলেন, আজকে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দারিদ্রের হার কমিয়ে এনেছি। মেয়েদের জন্য কর্মস্থানের ব্যবস্থা করেছি। জামানত ছাড়া দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আমরা সুযোগ করে দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করা। এ অঞ্চলে আর কখনো যেন দুর্ভিক্ষ না থাকে, সে জন্য আমরা কাজ করেছি। আমরা হাইটেক পার্ক করেছি। স্কুলগুলোতে কম্পিউটার ল্যাব করেছি। তিনি আরও বলেন, দেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। প্রত্যেক ভূমিহীন মানুষকে দুই কাটা জমি দিয়েছি। জামানত ছাড়া ঋণ নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছে। রংপুরের ৮ জেলা এখন ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত। তারপরও আমরা খোঁজ নিচ্ছি। কেউ থাকলে তার ঘরের ব্যবস্থা করে দেব। এ সব জেলার কোথাও কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকলে আমি বিনা পয়সায় ঘর দেব। বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না এটাই আমাদের চাওয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা গোষ্ঠি আছে যারা সব সময় এদেশের উন্নয়নকে পিছিয়ে দিতে চায়। জাতির পিতাকে খুন করার মাধ্যমে এটা শুরু করেছে। অনেক কষ্ট করে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দেয়। এ জন্য স্বচ্চ ব্যলট বাক্স ও ভোটার আইডি কার্ড করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আপনাদের এখানে সোনার জমি। ফসল ভালো হয়। ধান, গম, আমসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়। আমি মা-বোন সহ সবাইকে অনুরোধ করবো এক ইঞ্চি জমি যেন খালি না থাকে। যারা যা আছে তা কাজে লাগান। শাক-সবজি-ফসল ফলান। প্রতিটি জায়গায় গাছ লাগান। অন্তত ৩টি করে গাছ লাগান। আপনি নিজেও উপকৃত হবেন। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে আমরা গাছ লাগাই। এটা আওয়ামী লীগেরই কর্মসূচি। ফসল ফলাবেন। এ অনুরোধ কি আপনারা রাখবেন?
সারা বিশ্বে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গেছে। পরিবহণ খরচ বেড়ে গেছে, ভোজ্য তেল পাওয়া যায় না। তাই মনে রাখবেন আমাদের মাটি আছে, উর্বর মাটি। জাতির পিতা বলেছিলেন আমার মাটি ও মানুষ আছে। এই মাটি মানুষ নিয়েই দেশ গড়ে তুলবো।
তিনি বলেন, রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও করেছে। মানুষের ঘর-বাড়ি, গাড়িতে আগুন দিয়েছে। রাস্তা ঘাট কেটে দিয়েছে। বাস-ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা দেশ ধ্বংস করে আমরা সৃষ্টি করি। খালেদা ও তার কুপুত্র মানুষের কল্যাণ জানে না। এরা কি মানুষের জাত? বাইরে বসে ষড়যন্ত্র করছে। আজ যে মামলার রায় হয় এগুলো আমরা করিনি। এগুলো তাদেরই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন ও ফখরুদ্দিনের সময় করা। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশের মানুষের সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছি। তারা কমিয়ে দিয়েছে। করবেও না কেন, কারণ খালেদা জিয়াতো নিজেও এইট পাশ। তিনি আরও বলেন, আমরা সব খাতে বেসরকারি খাতে দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি।
আজকের সমাবেশে যারা এসেছেন সবাইকে দেখছি না তবে সবাই আছেন আমার হৃদয়ে। বাবা মা সব হারিয়ে একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছি দেশের মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান জোগাবো। ভাগ্য উন্নয়ন করবো। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ করবো। বাংলাশেকে দুর্ভিক্ষের দেশ বলে আর কেউ করুণা করে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আরও এগিয়ে যাবে। তরুণরা এ দেশের ভবিষ্যৎ। তারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুতের আর কোনো সমস্যা থাকবে না। সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। কয়লার দাম ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে কয়েকদিন কষ্ট হয়েছে। এরপর এখন ঠিক হয়ে গেছে। বিদ্যুতের আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত আছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়া সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, নৌ পরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান, সাবেক সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম কামাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দীসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে উপস্থিত আছেন।