জাতীয়

বিদেশমুখী রোগীরা বলেন দেশের ডাক্তারগন ভাল করে কথা বলে না-তথ্যমন্ত্রী

  প্রতিনিধি ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১০:৩৭:০৩

শেয়ার করুন

দেশের ডাক্তাররা ভালো করে দেখলে রোগীরা বিদেশমুখী হতেন না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, বিদেশমুখী অনেক রোগীকে আমি জিজ্ঞেস করেছি—ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অনেক ঝামেলা পেড়িয়ে কেন যান? তখন তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ডাক্তার ভালো করে কথা বলেন না। যিনি চালু ডাক্তার তার সহকারীরা রোগী দেখেন, আর ডাক্তার দুই মিনিট কথা বলেন। আর বিদেশে ডাক্তাররা প্রয়োজনে আধঘণ্টা কথা বলেন।

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রাম ও বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের ডাক্তাররা অনেক মেধাবী, আমাদের একজন ডাক্তার যদি ভালো করে রোগী দেখেন, তিনি যে ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন তা ইউরোপ আমেরিকায়ও দিতে পারে না। আমি ইউরোপে অনেকদিন ছিলাম, সেখানকার ডাক্তারদের তুলনায় আমাদের দেশের ডাক্তারদের আইকিউ অনেক বেশি। আমাদের ডাক্তারদের অভিজ্ঞতালব্দ যে জ্ঞান, সেটা ইউরোপের ডাক্তারদের নাই। কিন্তু যত ভালো ছাত্রই হোক, মনযোগ দিয়ে পরীক্ষা না দিলে যেমন পরীক্ষা ভালো হয় না, তেমনি মনযোগ দিয়ে রোগী না দেখলে তো রোগীই ভালো হবেনা। প্রতিবছর মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে। আমাদের মেধাবী ডাক্তাররা যদি আরেকটু মনযোগ দিয়ে রোগী দেখতেন, তাহলে বিদেশমুখী রোগীরা আর যেতেন না।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, অন্যান্য বিষয় ও মেডিকেলে পড়ালেখায় বিরাট একটা পার্থক্য আছে। মেডিকেল কলেজে যারা ভর্তি হন তারা শুরুতেই একটা শপথ নেন, মানবসেবার। মানবসেবা করার বিরাট একটা সুযোগ স্বাস্থ্যসেবা পেশার সঙ্গে যুক্তদের ছাড়া অন্যদের করা সম্ভব নয়। এজন্য আমি তোমাদের অনুরোধ জানাব, ভালো ডাক্তার হয়ে ভালো উপার্জন করার মানসিকতা নয়, মানবসেবার মানসিকতা লালন করতে হবে।

তিনি বলেন, যারা ডাক্তার হবে, বা হয়েছেন, তারা যদি সবাই সিদ্ধান্ত নেন প্রতি সপ্তাহে একদিন বিনামূল্যে রোগী দেখব, তাহলে দেশের বেশিরভাগ গরীব রোগীর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, কিন্তু সেটি খুব কম ডাক্তারই করেন। এই বিষয়গুলো ছাত্রছাত্রীদের মনের গভীরে প্রোতিত করা প্রয়োজন। একজন দরিদ্ররোগী যখন অসুস্থ স্বজনকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন, টাকা পরিশোধে কি কষ্ট, সেটি আমাদেরকে ভাবতে হবে। সেটি মাথায় রেখে যদি স্বল্প কিংবা বিনামূল্যে সেবা দেওয়া যায় তাহলে সত্যিকারের মানবতার সেবা দেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল সাশ্রয়ীমূল্যে ও গরীবদের বিনামূলে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উদাহরণ তৈরি করবে আশা প্রকাশ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এখন ডেঙ্গু নিয়েও অপপ্রচার শুরু করেছে। মনে হচ্ছে ডেঙ্গু মশার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। ডেঙ্গু মশা আওয়ামী লীগ, বিএনপি চেনে না। আমাদের সরকার প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছে, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় এবং জনগণের সচেতনতায় আমরা ডেঙ্গু সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারব, যেভাবে করোনাকে মোকাবেলা করেছি।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু যেমন মারাত্মক, বিএনপি তার চেয়েও বেশি মারাত্মক। ডেঙ্গু মশা কামড়ায় আর বিএনপি মানুষ পোড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর চেয়ে বিএনপি মারাত্মক। আমরা সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। শুধুমাত্র বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত দেশ রচনা নয়, আমরা বস্তুগত উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি সামাজিক কল্যাণ রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চাই। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্তদের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের সরকার স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে গত প্রায় ১৫ বছরে সরকারি বেসরকারি অনেক মেডিকেল কলেজ স্থাপন করেছে। সারাদেশে প্রায় ১২ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। এটি আশপাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ কোথাও নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এসব কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে।

বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের অতিরিক্ত মুনাফা লাভের প্রবৃত্তি আমাদের চিকিৎসাবা এবং ডাক্তারদের ওপর আস্থাহীনতা তৈরি করছে এবং সাধারণ মানুষকে প্রচণ্ড ভোগাচ্ছে। অনেক সময় শোনা যায়, রোগীকে আইসিওতে দেওয়ার প্রয়োজন নেই, কিন্তু দিয়ে রেখেছেন। রোগী এমনিতেই মৃত্যুবরণ করবে, সেটাকে লাইফ সাপোর্টে দিচ্ছে। এরকম অহরহ ঘটনা শুনতে পাই। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও ভূমিকা রাখতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক ভালো জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গতকাল রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী আসবেন। কয়েকদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বহুমুখী সহযোগিতা এবং বহুমাত্রিক সম্পর্কের প্রমাণ হচ্ছে তাদের সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা সংলাপ।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ম্যানেজিং ট্রাস্টি মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খাঁন, ট্রাস্টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. মোরশেদ হোসেন ও অধ্যক্ষ প্রফেসর অসীম বড়ুয়া।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content