প্রতিনিধি ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১:৪১:২২
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার দহকুলা গ্রামের বৃদ্ধা মোমেনা বেওয়া (৮০) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অসুস্থ মেয়ে সালমা খাতুনের চিকিৎসার জন্য জমি বিক্রি করায় পুত্রবধূ নাজমা খাতুন, নাতি আব্দুর রাজ্জাক ও রনি পরিকল্পনা করে শ্বাসরোধে বৃদ্ধা মোমেনা বেওয়াকে হত্যা করেন। পরে মরদেহ ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করেন তারা।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পুত্রবধূ নাজমা খাতুন (৫৫) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য দুই আসামি পলাতক রয়েছেন। আব্দুর রাজ্জাক ও রনি নাজমা খাতুনের ছেলে। এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনী থেকে নাজমাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা পিবিআইয়ের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিরাজগঞ্জ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রেজাউল করিম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মোমেনা বেওয়া স্বামীর মৃত্যুর পর পুত্রবধূ নাজমা খাতুন ও নাতিদের সঙ্গে বসবাস করতেন। মোমেনা বেওয়ার নামে কিছু জমি ছিল। উক্ত জমি বিক্রি করে তার অসুস্থ মেয়ে সালমা খাতুনের চিকিৎসায় ব্যয় করেন। এছাড়া পুত্রবধূ নাজমা খাতুনের অন্য এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই দুটি ঘটনা নিয়ে পুত্রবধূ ও নাতিদের সঙ্গে মোমেনা বেওয়ার মনোমানিল্য হয়।
এরই জেরে মোমেনা বেওয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন পুত্রবধূ ও নাতিরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২৭ মে রাতে বৃদ্ধা মোমেনা বেওয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পরনের শাড়ি দিয়ে ঘরের মধ্যে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখেন। পরে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চালান তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় বৃদ্ধার জামাই মাহবুবুল আলম বুলু বাদী হয়ে উল্লাপাড়া থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করেন।
পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়- বৃদ্ধা মোমেনা বেওয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রাপ্তির পর নিহত মোমেনা বেওয়ার আরেক নাতি আমিরুল ইসলাম বাবু বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২-৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর নিহতের পুত্রবধূ নাজমা খাতুনকে ঢাকার শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনী থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
সিরাজগঞ্জ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, খুন হওয়া মোমেনা বেওয়ার ৮ মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। তারপর থেকে তিনি পুত্রবধূ নাজমা খাতুন ও নাজমা খাতুনের দুই ছেলে রাজ্জাক ও রনির সঙ্গে থাকতেন।
পুলিশ সুপার বলেন, মামলা থানা পুলিশের তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু তখন সে কোনো স্বীকারোক্তি দেয়নি। পরবর্তীতে তাকে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছিল। এরপর সে জামিনে বের হয়। এখন যেহেতু তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে সে হয়তো আদালতে হাজিরা দিতে আসলেই আবার আটক হবে। এছাড়াও শোনা যাচ্ছে নাজমার ছোট ছেলে পরিচয় গোপন করে দেশের বাইরে চলে গেছেন।