প্রতিনিধি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১১:৫৯:৫০
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হযেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে এ পর্যন্ত যতগুলি নির্বাচন হয়েছে- উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন। প্রতিটি নির্বাচন স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। এরচেয়ে শান্তিপূর্ণ কবে হয়েছে বাংলদেশে নির্বাচন বা পৃথিবীর কোন দেশে হয়ে থাকে?’
তিনি বলেন, ‘অনেক দেশে নির্বাচন তো এখনো তাদের বিরোধী দল মানেনি। এরকম তো ঘটনা আছে। তারপরও আমাদের নির্বাচন নিয়ে অনেক সবক শুনতে হচ্ছে। আজকে যখন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আমরা করছি তখনই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা। এর অর্থটা কী? আজ দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন?’
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব বলেন।
অক্টোবরে আরেকটি অধিবেশন বসবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অক্টোবরের অধিবেশনই শেষ অধিবেশন। এরপরই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিলে এদিকে (সরকারি দলে) থাকবেন, না দিলে ওদিকে (বিরোধী দলে) যাবেন। কোনো অসুবিধা নাই। জনগণের ওপর আমরা সব ছেড়ে দিচ্ছি। জনগণ যেটা করবে। সেটাই তিনি মেনে নেব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে। গণতান্ত্রিক ধারাটা যেন ব্যাহত করতে না পারে। কোনো চক্রান্তের কাছে বাংলাদেশের জনগণ আর মাথানত করবে না। সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এ অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। বিশ্বব্যাপী বাঙালি যে মর্যাদা পেয়েছে সেই মর্যাদা অব্যাহত রেখে আমরা এগিয়ে যাব। আবার দেখা হবে।’
অতীত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য আওয়ামী লীগ রাজপথে ছিল। রক্ত দিয়েছে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সেই শহীদের তালিকা দেখলে আওয়ামী লীগের নাম পাওয়া যাবে। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। এটাই সব থেকে বড় কথা।’
নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে দেখি নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিয়ে সবাই সোচ্চার। যে সমস্ত দেশ আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে আর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন? ৭৫’র পর থেকে বারবার যে নির্বাচনগুলো হয়েছিল, সেই সময় তাদের এই চেতনাটা কোথায় ছিল? জানি না তাদের এই বিবেক কি নাড়া দেয়নি?’
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার সরকারে এসেছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যে কাজ করে যাচ্ছি তার সুফল তো দেশের তৃণমুলের জনগণ পাচ্ছে। তিনি যে ওয়াদা দেন সেটা রক্ষা করেন।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তখন জনগণের কোনো অধিকার বলে কিছু ছিল না। তাদের ভোটের অধিকার ছিল না। বেঁচে থাকাই ছিল কষ্টকর। নির্বাচনের পর ৪৮ ঘণ্টা ভোটের ফল বন্ধ রেখে মনমত ফলাফল প্রকাশ করতে দেখা গেছে।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে জনগণ আমাদের ভোট দেয়। তখনও নির্বাচন ঠেকাতে এ বিএনপি-জামায়াত মিলে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। এরপর ২০১৮ সালে নির্বাচনে তারা আসলেও নমিনেশন বাণিজ্য করে তিন শ সিটে সাত শ প্রার্থীকে নমিনেশন দেয়। এক সময় তারা নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে।’
ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মশা মারতে কামান দাগলে হবে না। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সবাইকে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। কোথাও পানি জমে আছে আছে কী না তা দেখতে হবে। শুধু সরকার করে দেবে? সিটি করপোরেশন করে দেবে? গালি দিতে হবে। গালি দিলে তো হবে না। তাদের কাজ তো তারা করে যাচ্ছে। নিজেদের কাজ নিজেদের করতে হবে। কে কী করে দিল না না দিল ওই কথা বলে লাভ নেই। নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেকে করতে হবে।’
বিএনপির সময়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ২৫ হাজার ২২৭ মেগাওয়াটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম দেশ। তবে সময়ে সময়ে কিছু কিছু লোডশেডিং করতে হয়। আর লোডশেডিং মাঝে মাঝে থাকাটা ভালো। কারণ কী অবস্থায় ছিল, ভুলে যায় তো, তাই মনে করায়ে দেওয়ার দরকার আছে মাঝে মাঝে। সে জন্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলি একটু লোডশেডিং দিলে মানুষের মনে আবার আসবে.. আমরা এ জায়গায় ছিলাম, এই জায়গায় যাচ্ছি, এটা মনে করায় দেওয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিনিসের কিন্তু অভাব নেই। উৎপাদনে ঘাটতি নেই। উৎপাদনের জন্য যা যা দরকার সেটা করছি। বাজারে গেলে কোনো জিনিসের অভাব নেই, মনে হয় কৃত্রিম উপায়ে মূল্য বাড়ানো হয়, ইচ্ছে করে বাড়ানো হয়। অনেক সময় গোডাউনে রেখে দিয়ে কেউ কেউ এরকম খেলা খেলে। সরকার পদক্ষেপ নিলে কমে আসে।’
বাণিজ্যমন্ত্রীকে বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থাকে বিশেষভাবে দেখার জন্য বলা হয়েছে, কেন জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে?’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছি। ধীরে ধীরে সেটা বাড়ানো হচ্ছে। টাকা ছাপানো হচ্ছে না। অনেকেই বলছে টাকা ছাপিয়ে টাকা ছড়ানো হচ্ছে। টাকা ছাপানো একদম বন্ধ করে দিয়েছি। টাকা ছাপানো হবে না।’
ডলার সংকট দূর করার জন্য সরকারের গৃহীত কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডলার বিনিময় হার যাতে নমনীয় থাকে সে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন ইচ্ছেমতো এলসি খোলা যায় না। আগে যেমন ইচ্ছেমত কোনোটা অতিমূল্য, কোনোটা অবমূল্যায়ন করা হতো। সেটার আর সুযোগ নেই। এতে হয়তো কিছু ব্যবসায়ী বিপদে পড়ে যান। সেটা ঠিক বিপদ না, টাকাপাচারের সুযোগ কমে যায়। সে জন্য কিছু চিৎকার কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তব কথা হলো অতিমূল্য দেখিয়ে কম মূল্যের জিনিস নিয়ে এসে, বাকি টাকা রেখে এসে একটা খেলা খেলা, সেটা কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক একটা বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ব্লুমবার্গের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে এলসি খোলা হচ্ছে। এতে আমদানিতে যে অতিরিক্ত ব্যয় হতো সেটা অনেকটাই কমে এসেছে। তার হিসাব কিন্তু আছে। এতে ডলার সাশ্রয় হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিত্যপণ্য আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে টাকা দিচ্ছি। দেশের মানুষের কষ্ট যেন না হয়। রিজার্ভ মানে হলো তিন মাসের আমদানির খরচ যাতে থাকে। তার বেশি খুব বেশি প্রয়োজন আছে তাও না। জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন শূন্য রিজার্ভ দিয়ে। তখন তো এক টাকাও রিজার্ভ ছিল না। সাড়ে তিন বছরে দেশ গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে আসার সময় রিজার্ভ এক বিলিয়ন ছিল না। কয়েক মিলিয়ন ছিল। এটা নিয়ে কাউকে দুশ্চিন্তা বা মাথা খারাপ করার প্রয়োজন মনে করি না। ডলারের ওপর চাপ কমাতে ভারতের সঙ্গে লেনদেনে নিজস্ব অর্থে কেনাবেচার চুক্তি করা হয়েছে। এতে ডলারের উপর চাপ কমে যাবে।’
পরে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পড়ে শোনান। গত ৩ সেপ্টেম্বর একাদশ সংসদের এ অধিবেশন শুরু হয়।