সারাদেশ

আবারও আসছে অবরোধ কঠোর অবস্থানে বিএনপি নেতৃত্ব

  প্রতিনিধি ১৯ নভেম্বর ২০২৩ , ১০:১১:৪২

শেয়ার করুন

একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে ও সরকার পতনের দাবিতে বিরোধী জোটের ডাকা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। জামালপুরে আন্তঃনগর ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ১৫টি যানবাহনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও মহাখালী বাস টার্মিনালে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এদিকে ৪৮ ঘণ্টা হরতাল শেষে একদিন বিরতি দিয়ে বুধবার থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ দেয়ার চিন্তা করছে বিএনপি।

ওদিকে হরতালের সমর্থনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ‘ঝটিকা’ মিছিল করেছে বিএনপি। রাজধানীর পুরানা পল্টনের বিজয়নগর সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সমমনা দল ও জোটগুলো। এ ছাড়া জামায়াতও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর পুরানা পল্টন, বিজয় নগর, তোপখানা রোড, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে, তেজগাঁও রেলস্টেশন সড়ক, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল সড়ক, বাড্ডা, ফকিরাপুল, গ্রীন রোড প্রভৃতি সড়কে এসব কর্মসূচি হয় পালন করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।

এদিকে সকালে সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসস্টেশন এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলির ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৭ জন আহত হন।

এদিকে জামালপুরের সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেসের তিনটি বগিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাত ১টা ২০ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে। পাবনা শহরের বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি ও ছাত্রদলের সাবেক নেতাকর্মীরা। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। যশোরে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলামের বাসভবন লক্ষ্য করে ২০টির বেশি হাতবোমা নিক্ষেপ করেছে একদল সন্ত্রাসী। রাত অনুমানিক ১১টার সময় তার যশোরের বাসভবনে এই বোমাগুলো ছুড়ে মারে সন্ত্রাসীরা। নিক্ষিপ্ত বোমাগুলোর মধ্যে অন্তত ৮টি বিস্ফোরিত হয় পার্শ্ববর্তী মরহুম সিরাজুল ইসলামের (মরহুম তরিকুল ইসলামের মেজো ভাই) বাড়ির ভেতরে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ১৫টি যানবাহনে আগুন লাগার খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে রাজধানী ঢাকায়। ফায়ার সার্ভিস থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকা সিটিতে ৬টি, রাজশাহী বিভাগে (নাটোর, বগুড়া, জয়পুরহাট) ৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা) ৪টি, গাজীপুরে একটি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে (জামালপুর) ১টি আগুনের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর ও মহাখালী বাস টার্মিনালে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি’র ৫১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১৮টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২০৮৫ জন নেতাকর্মীকে।

এদিকে হরতালের প্রথম দিনে সকাল থেকে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস তেমন ছাড়েনি। যাত্রীর অপেক্ষায় টার্মিনালের কাউন্টারগুলো। দু-একটি বাস দীর্ঘক্ষণ পরে ছাড়ে। রাজধানীতে হরতালের প্রভাব তেমন না পড়লেও গণপরিবহন চলাচল ছিল কম। হরতালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে ২৩৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে ২৮ প্লাটুন।

আবারও আসতে পারে অবরোধ।গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি’র মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেয়ার পর সরকারের পদত্যাগের একদফার দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো ২৯শে অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে। এরপর পাঁচ দফায় ১১ দিন পর্যায়ক্রমে সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। যা শেষ হয় গত শুক্রবার ভোরে। এরপর একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা সারা দেশে সর্বাত্মক অবরোধ ডাকে বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি’র হরতাল কর্মসূচির শেষদিন আজ বিকালে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ফের অবরোধ কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা করছে বিএনপি’র হাইকমান্ড। সরকার পদত্যাগের একদফার দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত চলমান কঠোর কর্মসূচি থেকে পিছু হটবে না বিএনপি।

রণক্ষেত্র সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ জানান, সুনামগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে এ সংঘর্ষ হয়। শহরের পুরাতন বাসস্টেশন ও এর আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশসহ প্রায় ১২ জন আহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা পুরাতন বাসস্টেশন এলাকায় একটি মিছিল বের করতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ। পরে উভয়পক্ষের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে চায় পুলিশ। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন।

বিএনপি নেতাকর্মীরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে আরপিননগর ও জামতলা এলাকা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। থেমে থেমে ঘণ্টাব্যাপী চলে দু’পক্ষের সংঘর্ষ। পরে পুলিশ জনবল বৃদ্ধি করে দুই পাড়ায় ঢুকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক ও বিএনপি নেতাকর্মীসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বিএনপি কর্মী সন্দেহে আরপিননগর এলাকা থেকে তিন যুবককে আটক করে পুলিশ। তাদের দাবি তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরুল দাবি করেন, পুলিশের হামলায় বিএনপি’র ৭/৮ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন কুমার দাস জানান, মিছিলকারীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে পাঁচ পুলিশ সদস্য সামান্য আহত হয়েছেন। আহতদের তাৎক্ষণিক নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) থেকে জানান, জামালপুরের সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় চারজন আহত হয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পরই ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনের সূত্রপাত বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা প্রাথমিকভাবে বলতে পারেনি কেউ। তবে এ ঘটনায় গতকাল সকালে অজ্ঞাত (হরতাল সমর্থক) আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে জামালপুর জিআরপি থানায়। সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী মাস্টার আব্দুস সালাম জানান, ঢাকা থেকে তারাকান্দিগামী আন্তঃনগর যমুনা ট্রেন রাত ১টায় সরিষাবাড়ী স্টেশনে থামে। কিছুক্ষণ পর ট্রেনটি তারাকান্দির উদ্দেশ্যে ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে। ট্রেন স্টেশন থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মোড় পর্যন্ত গেলে ক, খ ও গ বগিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এ সময় অন্য বগির আতঙ্কিত যাত্রীরা শিকল টেনে ট্রেন থামায়।

যমুনা ট্রেনটি তারাকান্দি স্টেশন থেকে রাত ২টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট, জিআরপি ও থানা পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় দুই ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ট্রেনটি পুড়ে যাওয়া বগি তিনটি রেখে তারাকান্দি স্টেশনে যায়, সকাল ৬টায় তারাকান্দি থেকে ফিরে পোড়া বগিসহ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে হরতাল সমর্থনকারীরা। সকালে শহরের উত্তর তেমহুনী এলাকায় হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করে হরতাল সমর্থনকারীরা। এ সময় মিছিল শেষে দুইটি বাসে ভাঙচুর করে তারা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগে পালিয়ে যায় হরতালকারীরা। এ ঘটনা এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। অপরদিকে লক্ষ্মীপুর-রায়পুর সড়কের বেড়ির মাথা এলাকায় শিবিরের নেতাকর্মীরা মিছিল করতে চাইলে ধাওয়া দেয় পুলিশ।
নাটোর থেকে জানান, নাটোর শহরের ভবানীগঞ্জ এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল ভোরে কয়েকজন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল নিয়ে এসে পেট্রোল ঢেলে গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে জানায় স্থানীয়রা।

পাবনা থেকে জানান, পাবনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি ও ছাত্রদলের সাবেক নেতাকর্মীরা। এ সময় ২টি গাড়ি ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাবনা শহরের বড় বাজার সংলগ্ন দই বাজার মোড়ে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে এ ঘটনা ঘটে।

ফেনী থেকে জানান, ফেনীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একটি মালবাহী কাভার্ডভ্যানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার মধ্যরাতে মহাসড়কের সদর উপজেলার লালপোল এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফেনী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, রাতে একটি মালবাহী কাভার্ডভ্যানে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনে কাভার্ডভ্যানটির সামনের অংশ ও পেছনে থাকা মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মানিকগঞ্জ থেকে জানান, হরতালের সমর্থনে মানিকগঞ্জে বিএনপি ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সকালে মানিকগঞ্জ-সিংগাইর-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল খালেক শুভর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।
কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) থেকে জানান, কেন্দুয়ায় হাঁসবোঝাই পিকআপভ্যানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নেত্রকোনার কেন্দুয়া-তাড়াইল সড়কের চিরাং ইউপি’র বাট্রা কাচারি মোড়ে এই ঘটনা ঘটে।


শেয়ার করুন

আরও খবর

Sponsered content