প্রতিনিধি ১৪ নভেম্বর ২০২৩ , ১০:১৮:৫৬
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই সময় পান, দেশি ছবি দেখেন। এর আগে বিভিন্ন বক্তব্যে জানিয়েছেন, বিমানে ভ্রমণের সময় তিনি বাংলা ছবি দেখেন। এবার জানালেন, সরকারি ফাইল দেখার ফাঁকে ফাঁকেও তিনি বাংলা ছবি দেখেন। আর কোন সিনেমাটি ভালো হবে, সেই পরামর্শ তাকে দিয়ে থাকেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা।
‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২’-এর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমনটাই জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের দায়িত্ব আমার কাঁধে। সব সময় নানা ফাইল দেখতে হয়। এর ফাঁকে ফাঁকে ছবি দেখি। কদিন আগেও বিমানে বসে টানা দুটো ছবি দেখলাম। তবে আমার চেয়ে বেশি দেখে রেহানা। ও দেখে দেখে আমাকে বলে— এ ছবিটা ভালো, এটা দেখো। সব ছবি হয়তো টানা দেখা সম্ভব হয় না। তবে একটু একটু করে সময় বের করে পুরোটা দেখে ফেলি।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রে যুক্ত প্রতিটি শিল্পী ও কলাকুশলীকে ধন্যবাদ জানান। তাদের অভিনয়ের প্রশংসাও করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা প্রত্যেকে এত ভালো অভিনয় করেছে, সত্যিই আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম।’
২০২২ সালের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেতা খসরু (বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুল আলম খান খসরু) ও অভিনেত্রী রোজিনা (রওশন আরা রোজিনা)। অভিনেতা খসরু দেশের বাইরে থাকায় তার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন নায়ক আলমগীর।
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার যুগ্মভাবে পেয়েছে মুহাম্মদ আব্দুল কাইউম প্রযোজিত ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ ও মো. তামজিদ উল ইসলাম প্রযোজিত ‘পরাণ’। ‘শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এস এম কামরুল আহসানের ‘ঘরে ফেরা’। শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ড. এ জে এম শফিউল আলম ভুঁইয়া পরিচালিত ‘বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। ‘শিমু’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক হয়েছেন সৈয়দ রুবাইয়াত হোসেন।
এ বছর প্রধান চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী, ‘হাওয়া’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়নের জন্য। প্রধান চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অবশ্য এককভাবে কেউ পাননি। ‘বিউটি সার্কাস’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য জয়া ও ‘শিমু’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য রিকিতা নন্দিনী শিমু যৌথভাবে এই পুরস্কার পেয়েছেন।
‘পরাণ’ ছবিতের অভিনয়ের জন্য পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন মোহাম্মাদ নাসির খান। পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন ‘পাপ পূণ্য’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য আফসানা মিমি (আফসানা করিম)।
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী খল চরিত্রে পুরস্কার পেয়েছেন সুভাশিষ ভৌমিক, ‘দেশান্তর’ ছবির জন্য। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী কৌতুক চরিত্রের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন মো. সাইফুল ইসলাম (দিপু ইমাম), ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির জন্য।
শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর পুরস্কার যুগ্মভাবে পেয়েছে বৃষ্টি আক্তার (রোহিঙ্গা) ও মুনতাহা এমিলিয়া (বীরত্ব)। শিশু শিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়েছেন ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’র জন্য মোছা. ফারজিনা আক্তারকে।
এ বছর শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন মাহমুদুল ইসলাম খান (রিপন খান), ‘পায়ের ছাপ’ ছবির জন্য। শ্রেষ্ঠ গীতিকারের পুরস্কার পেয়েছেন রবিউল ইসলাম জীবন, ‘পরাণ’ ছবির ‘ধীরে ধীরে তোর স্বপ্নে’ গানের জন্য। শ্রেষ্ঠ সুরকার হয়েছেন শওকত আলী ইমন, ‘পায়ের ছাপ’ ছবির জন্য ‘এই শহরের পথে পথে’ গানের জন্য।
শ্রেষ্ঠ গায়কের পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছেন শুভাশীষ মজুমদার বাপ্পা (বাপ্পা মজুমদার) ‘অপারেশন সুন্দরবন’-এর ‘এ মন ভিজে যায়..’ এবং চন্দন সিনহা ‘হৃদিতা’ ছবির ‘ঠিকানা বিহীন তোমাকে’ গানের জন্য। শ্রেষ্ঠ গায়িকার পুরস্কার পেয়েছেন আতিয়া আক্তার আনিসা, ‘পায়ের ছাপ’ ছবির ‘এই শহরের পথে পথে’ গানের জন্য।
যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ কাহিনিকারের পুরস্কার পেয়েছেন ফরিদুর রেজা সাগর (দামাল) ও খোরশেদ আলম খসরু (গলুই)। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হয়েছেন ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’র মুহাম্মদ আব্দুল কাইউম। এস এ হক অলিক ‘গলুই’-এর জন্য শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা হয়েছেন।
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক হয়েছেন সুজন মাহমুদ, ‘শিমু’ ছবির জন্য। ‘রোহিঙ্গা’ ছবির জন্য হিমাদ্রি বড়ুয়া শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশকের পুরস্কার পেয়েছেন। আসাদুজ্জামান মজনু ‘রোহিঙ্গা’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক পুরস্কার পেয়েছেন। শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক পুরস্কার পেয়েছেন রিপন নাথ ‘হাওয়া’র জন্য।
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা পুরস্কার পেয়েছেন তানসিনা শাওন, ‘শিমু’ ছবির জন্য। ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির জন্য মো. খোকন মোল্লা পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান পুরস্কার।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২ প্রদানের লক্ষ্যে গত মার্চ মাসে ছবি আহ্বান করা হয়। গঠন করা হয় ১৩ সদস্যের জুরি বোর্ড। সেখানে জমা পড়ে ৩৭টি পূর্ণদের্ঘ্য, ১২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও ১৯টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। জুরি বোর্ডের সদস্যরা মোট ৮০টি সভা করেন।
পুরস্কার বিতরণী শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেটি উপস্থাপনা করেন ফেরদৌস ও পূর্ণিমা।
এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে নাচ পরিবেশনা করেন জায়েদ খান, আঁচল, সাদিয়া ইসলাম মৌ, নুসরাত ফারিয়া, মাহিয়া মাহি, তমা মির্জা। ছিল সাইমন-দীঘি, আদর আজাদ-পূজা চেরী, সোহানা সাবা-গাজী নূরের পরিবেশনাও।